ইস্তিগফার অর্থ হলো আল্লাহর কাছে গুনাহের জন্য ক্ষমা চাওয়া এবং ভবিষ্যতে সে গুনাহ না করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া। ইসলামে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল, যা একজন মুমিনের আত্মশুদ্ধি, গুনাহ থেকে মুক্তি এবং আল্লাহর রহমত লাভের অন্যতম উপায়। কোরআন ও হাদিসে ইস্তিগফারের অনেক গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে, যা একজন মুসলমানের দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে।
আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বহুবার ইস্তিগফারের কথা উল্লেখ করেছেন এবং বান্দাদের তাতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি বলেন, “আর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা চাও, অতঃপর তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, তাহলে তিনি নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত তোমাদের উত্তমভাবে ভোগ করতে দেবেন এবং প্রত্যেক নেক আমলকারীকে তাঁর অনুগৃহীত করবেন।” (সূরা হূদ: ৩)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, নিশ্চয়ই তিনি মহাক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দ্বারা তোমাদের সমৃদ্ধ করবেন। আর তোমাদের জন্য উদ্যান সৃষ্টি করবেন এবং তোমাদের জন্য নদী প্রবাহিত করবেন।” (সূরা নূহ: ১০-১২)। এই আয়াতগুলো থেকে বোঝা যায়, ইস্তিগফার শুধু গুনাহ মাফের কারণ নয়, বরং এটি দুনিয়ার কল্যাণ ও বরকতের দরজাও খুলে দেয়।
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইস্তিগফারকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন এবং নিজেও প্রতিদিন অনেকবার ইস্তিগফার করতেন। হাদিসে এসেছে, “আল্লাহর কসম! আমি প্রতিদিন ৭০ বারেরও বেশি ইস্তিগফার করি এবং তাওবা করি।” (বুখারি)। অন্য হাদিসে তিনি বলেছেন, “যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তিগফার করে, আল্লাহ তাকে প্রতিটি সংকট থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে দেন, তার প্রতিটি দুশ্চিন্তা দূর করে দেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দান করেন, যা সে কল্পনাও করেনি।” (আবু দাউদ)।
ইস্তিগফারের মাধ্যমে গুনাহ মাফ হয়, অন্তর পরিষ্কার হয় এবং আল্লাহর রহমত লাভ হয়। ইস্তিগফারের জন্য নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা বা সময় নেই, তবে যেকোনো সময় এটি করা যায়। বিশেষ করে ফজরের পর, রাতে ঘুমানোর আগে, নামাজের পর, এবং বিশেষ মুহূর্তে যেমন তাহাজ্জুদের সময় ইস্তিগফার করা অধিক ফজিলতপূর্ণ। সহজ কিছু ইস্তিগফারের দোয়া হলো: "আস্তাগফিরুল্লাহ", "আল্লাহুম্মাগফিরলী", "সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার" ইত্যাদি।
ইস্তিগফারের মাধ্যমে মানুষ তার অন্তরের গুনাহ ও কালিমা দূর করতে পারে। গুনাহগার ব্যক্তি যদি আন্তরিকভাবে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, তবে আল্লাহ তার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেন। হাদিসে আছে, “যদি তোমাদের গুনাহ আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়, এরপর যদি তোমরা ইস্তিগফার কর, তবে আল্লাহ তা ক্ষমা করে দেবেন।” (তিরমিজি)। তাই ইস্তিগফার কেবল ক্ষমা পাওয়ার মাধ্যম নয়, এটি আত্মার প্রশান্তি, দুনিয়ার বরকত এবং আখিরাতের মুক্তির গুরুত্বপূর্ণ চাবিকাঠি।
thebgbd.com/NIT