বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়া। সরকারের অন্যতম প্রধান সমর্থক বিএনপির নেতৃত্বে মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গিয়ে চলতি বছরের মধ্যেই নির্বাচন চাওয়ার পর, রাজনীতির মাঠ আরও সরগরম হয়ে উঠেছে।
নতুন দল গঠনের ব্যাপারে এতদিন নীরব থাকা শিক্ষার্থীরা এখন মুখ খুলতে শুরু করেছে। কোটা-বিরোধী আন্দোলনের নেতা ও বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম তার পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে নতুন রাজনৈতিক দলের প্রধান বা সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব নিতে চলেছেন। তবে দলের দ্বিতীয় শীর্ষ পদ—সদস্যসচিব কে হবেন, তা এখনো নির্ধারিত হয়নি। এই পদের জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে আলোচনা চলছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির দুই নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও আখতার হোসেন।
এদিকে, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলম সরকারে থাকলেও, নতুন দল ঘোষণার পর তারা তথ্য ও সম্প্রচারসহ অন্যান্য উপদেষ্টার পদ ছেড়ে দেবেন। যদিও তাদের আনুষ্ঠানিক ইস্তফা ও দলের দায়িত্ব গ্রহণ কয়েক মাস পরে হবে।
প্রশ্ন উঠছে, মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে নতুন এই দল কিভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে এবং তার ফলাফল কী হতে পারে? বিশেষত, জামায়াতে ইসলামীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতা এই দলের প্রতি চোখে পড়ছে। জামায়াত দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা ছিল, কিন্তু শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর তারা নিজেদের অবস্থান নতুনভাবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে।
১৯৭১ সালে জামায়াত পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী হিসেবে রাজাকার, আল বদর ও আল শামস গঠন করে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে একাধিক জামায়াত নেতা মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন সাজা পেয়েছেন। তবে জামায়াতের বর্তমান আমির শফিকুর রহমান এখন এক নতুন ইতিহাস দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেছেন, ভারতের ভূমিকার কারণেই জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। তিনি আরও বলেন, তারা চেয়েছিলেন স্বাধীনতা, তবে আরেকটি দেশের অধীন হতে চাননি।
তবে বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধারা এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি পুরোনো ইতিহাস ধামাচাপা দেওয়ার প্রচেষ্টা। এক মুক্তিযোদ্ধা, যিনি বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন, বলেছেন, জামায়াত তাদের ‘পচা অতীত’ মুছে ফেলতে চাইছে এবং শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে পেছন থেকে পরিচালনা করছে।
জামায়াত ইতোমধ্যে অন্যান্য ইসলামপন্থী দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছে এবং নতুন ছাত্র নেতৃত্বাধীন দলকে সমর্থন দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। তাদের লক্ষ্য একটাই—এই তরুণদের মাধ্যমে একটি নতুন রাজনৈতিক ফ্রন্ট দাঁড় করানো, যা বিএনপির অনায়াস বিজয়কে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে। জামায়াত মনে করছে, নতুন দলের নেতাদের ১৯৭১-এর যুদ্ধকালীন বিতর্কিত অতীত নেই, যা তাদের প্রতি জনসমর্থন তৈরি করতে পারে।
ফলে, বাংলাদেশের রাজনীতির মঞ্চে এক নতুন মেরুকরণের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ছাত্র আন্দোলন থেকে উঠে আসা নতুন রাজনৈতিক শক্তি কি আদৌ স্বাধীন থাকবে, নাকি পুরনো কুশীলবদের ছায়াতলে পরিচালিত হবে—এটাই এখন দেখা
thebgbd.com/NA