রমজান মাসের প্রস্তুতি নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি আত্মশুদ্ধি, ইবাদত ও সংযমের মাস। রমজানের সঠিক প্রস্তুতি নিলে এ মাসের বরকত ও ফজিলত পুরোপুরি লাভ করা সম্ভব হয়। প্রস্তুতি তিনভাবে নেওয়া যেতে পারে—আধ্যাত্মিক, শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি।
আধ্যাত্মিক প্রস্তুতি
১. নিয়ত শুদ্ধ করা – রমজানকে শুধু রোজা রাখার মাস হিসেবে না দেখে, আত্মশুদ্ধি ও তাকওয়া অর্জনের মাস হিসেবে গ্রহণ করা।
২. নফল রোজা রাখা – শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখা সুন্নত, যা রমজানের রোজা রাখার জন্য শরীর ও মানসিকভাবে প্রস্তুত করে।
৩. কুরআন তিলাওয়াতের অভ্যাস গড়া – রমজানে বেশি কুরআন তিলাওয়াত করতে চাইলে আগে থেকেই প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ তিলাওয়াতের অভ্যাস করা জরুরি।
৪. ইবাদতের সময় নির্ধারণ – রমজানে ইবাদত যেন আরও বৃদ্ধি পায়, এজন্য আগে থেকেই তাহাজ্জুদ, তাসবিহ, জিকির, দোয়া ও নফল নামাজের অভ্যাস গড়ে তোলা।
৫. গুনাহ থেকে বিরত থাকা – মিথ্যা, পরনিন্দা, হারাম উপার্জনসহ সকল গুনাহের কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখা এবং নিজেকে শুদ্ধ করার চেষ্টা করা।
শারীরিক প্রস্তুতি
১. খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন – রমজানে দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার কারণে হঠাৎ খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন হলে শরীরে প্রভাব পড়তে পারে। তাই ধীরে ধীরে খাওয়ার সময়সূচি পরিবর্তন করা এবং স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা উচিত।
২. পর্যাপ্ত পানি পান করা – শরীর হাইড্রেটেড রাখতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি, যাতে রোজায় পানিশূন্যতা দেখা না দেয়।
৩. চা-কফির পরিমাণ কমানো – যারা নিয়মিত ক্যাফেইন পান করেন, তারা ধীরে ধীরে এর পরিমাণ কমিয়ে আনলে রমজানে মাথাব্যথা বা ক্লান্তি অনুভূত হবে না।
৪. পর্যাপ্ত ঘুমের অভ্যাস – রমজানে তারাবি, সেহরি ও ফজরের জন্য ঘুমের রুটিন ব্যাহত হয়। তাই আগে থেকেই পর্যাপ্ত ঘুমের সময় নির্ধারণ করা জরুরি।
মানসিক প্রস্তুতি
১. সময় ব্যবস্থাপনা – রমজানে যাতে বেশি ইবাদতের সুযোগ হয়, সেজন্য প্রতিদিনের রুটিন সাজিয়ে নেওয়া। কাজের সময় ঠিক করা, ইবাদতের জন্য আলাদা সময় বের করা এবং অপ্রয়োজনীয় কাজ কমিয়ে দেওয়া।
২. অধৈর্য ও রাগ নিয়ন্ত্রণ – রমজানে সংযম ধরে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাই ধৈর্যচ্যুতি রোধে আগে থেকেই নিজেকে সংযত রাখার অভ্যাস করা উচিত।
৩. সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার সীমিত করা – অপ্রয়োজনীয় সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের কারণে রমজানের সময় নষ্ট হতে পারে, তাই আগে থেকেই এটি কমিয়ে আনার চেষ্টা করা।
অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রস্তুতি
১. যাকাত ও দান-সদকার পরিকল্পনা – যাকাত, ফিতরা ও অন্যান্য দান সঠিকভাবে আদায় করতে আগে থেকেই হিসাব করে রাখা ভালো।
২. ইফতার আয়োজনের প্রস্তুতি – ইফতার সামগ্রী ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আগে থেকেই সংগ্রহ করে রাখা, যাতে রমজানে অযথা বাজারের ঝামেলায় পড়তে না হয়।
৩. পরিবার ও বন্ধুদের উৎসাহিত করা – পরিবারের সদস্যদের ও বন্ধুদের রমজানের ফজিলত সম্পর্কে বোঝানো এবং সবাইকে ইবাদতের প্রতি আগ্রহী করে তোলা।
সঠিক প্রস্তুতি নিলে রমজান হবে আরও ফলপ্রসূ এবং বরকতময়। রমজানের আগেই এই দিকগুলো ঠিক করে রাখলে, ইবাদতে মনোযোগ দেওয়া সহজ হবে এবং আল্লাহর রহমত অর্জন করা যাবে।
thebgbd.com/NIT