গণহারে কর্মীছাঁটাই শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই সিদ্ধান্তের কথা প্রকাশ্যেই জানিয়েছেন। রাখঢাক করেননি ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যতম ইলন মাস্কও। তবে ট্রাম্পদের এই গণছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা আপাতত আটকে দিয়েছে মার্কিন আদালত। অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে ছাঁটাইয়ের নির্দেশ প্রত্যাহার করতে বলেছেন সানফ্রান্সিসকোর এক ফেডারেল বিচারক।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ট্রাম্প সরকার ও ইলন মাস্কের কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গণ-বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন এই বিচারক। জানিয়েছেন, এভাবে কর্মীদের ছাঁটাইয়ের অধিকার নেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরের। এভাবে কর্মী ছাঁটাই করা যায় না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
মার্কিন ডিস্ট্রিক্ট জাজ উইলিয়াম আলসুপের উদ্ধৃতি দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, বিশ্বের ইতিহাসে কোনো আইন অনুসারে, অন্য কোনও সংস্থার কর্মী নিয়োগ বা বরখাস্ত করার কোনো কর্তৃত্ব অফিস অফ পার্সোনাল ম্যানেজমেন্টের নেই। কংগ্রেস সংস্থাগুলোকে নিয়োগ ও বরখাস্ত করার ক্ষমতা দিয়েছে। তিনি সান ফ্রান্সিসকোর ফেডারেল আদালতে উদাহরণস্বরূপ বলেন, প্রতিরক্ষা বিভাগের নিয়োগ ও বরখাস্ত করার কোন আইনগত ক্ষমতা রয়েছে।
পশ্চিম উপকূলের আরেক ডিস্ট্রিক্ট জাজ শরণার্থী প্রবেশের উপর তার নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করার কয়েকদিন পর ও জন্মগত নাগরিকত্বের সাংবিধানিক গ্যারান্টি বাতিল করে তার নির্বাহী আদেশ স্থগিত করার কয়েক সপ্তাহ পরেই আদালতের এই আদেশ। বৃহস্পতিবারের আদেশটি এমন সময় দেওয়া হলো যখন ইউনিয়ন ও অ্যাডভোকেসি গ্রুপগুলো ফেডারেল সংস্থাগুলোকে সমস্ত প্রবেশনারি কর্মীদের বরখাস্ত করার অবৈধ আদেশের বিরুদ্ধে মামলা করে।
চাকরির প্রথম বা দ্বিতীয় বছরে কর্মরত একজন ফেডারেল কর্মীকে প্রবেশনারি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যদিও তাদের নিম্ন পদ থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়ে থাকে। এই আদেশের ফলে হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আইনজীবীরা বলেছেন, ইউনাইটেড স্টেটস অফিস অফ পার্সোনেল ম্যানেজমেন্ট (ওপিএম)-এর সাংবিধানিক, সংবিধিবদ্ধ বা নিয়ন্ত্রক ক্ষমতা নেই, যে তারা অন্যান্য ফেডারেল সংস্থাগুলোকে এমন কর্মীদের বরখাস্ত করার নির্দেশ দিতে পারে।
সম্প্রতি হোয়াইট হাউসের কর্মী ব্যবস্থাপনা দপ্তর থেকে যুক্তরাষ্টের সব সরকারি কর্মীর কাছে ই-মেইল যায়। এতে বলা হয়, এক সপ্তাহের কাজের হিসাব দু’দিনের মধ্যে জমা দিতে না-পারলে ওই কর্মী ইস্তফা দিয়েছেন বলে ধরে নেওয়া হবে। ট্রাম্পের দপ্তরের এই নির্দেশ নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয় হাজারো সরকারি কর্মচারীর মধ্যে।
কর্মী ব্যবস্থাপনা দপ্তরের ই-মেইল পাওয়ার পর বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের প্রধানেরাই কর্মীদের জানান, আপাতত ই-মেইলের জবাব দেওয়ার প্রয়োজন নেই। এরপর জানা যায়, বিভিন্ন দপ্তর থেকে কয়েক হাজার শিক্ষানবিশ কর্মীকে ছাঁটাই করে দেওয়া হয়েছে। যে সব কর্মী চাকরির প্রথম কিংবা দ্বিতীয় বর্ষে আছেন, তারাই যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষানবিশ হিসাবে বিবেচিত হন।
আদালত জানায়, হোয়াইট হাউসের কর্মী ব্যবস্থাপনা দপ্তরের কোনও অধিকারই নেই কর্মীদের ছাঁটাই করার। তারা যেমন কর্মীদের নিয়োগও করতে পারে না, বরখাস্তও করতে পারে না। বিচারক উইলিয়াম অ্যালসুপের বক্তব্য, ‘যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি কর্মীদের নিয়োগ এবং ছাঁটাইয়ের অধিকার কেবল সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রধানদের। কংগ্রেস এই অধিকার কেবল দপ্তরগুলির হাতেই সীমাবদ্ধ রেখেছে।’
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরই জানান, ফেডারেলে কর্মীসংখ্যা তিনি কমাতে চান। তাতে সরকারের বাড়তি খরচ কমবে। মাস্ক এই কাজে ট্রাম্পের সহায়ক এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে পরামর্শদাতার ভূমিকাও পালন করেছেন। ট্রাম্প প্রকাশ্যেই মাস্ককে কর্মী ছাঁটাইয়ের নির্দেশ দিয়েছেন। জানান, এ বিষয়ে আরও কঠোর হতে হবে সরকারকে। ট্রাম্পের সেই নির্দেশই প্রত্যাহার করতে বলেছে আদালত।
সূত্র: স্কাই নিউজ
এসজেড