গাজীপুরে এক নারী শ্রমিকের আত্মহত্যার পর তার মরদেহ গুমের অভিযোগকে কেন্দ্র করে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। আজ সোমবার (৩ মার্চ) সকালে উত্তেজিত শ্রমিকেরা ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। তারা বেশ কয়েকটি প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন এবং কারখানায় ভাঙচুর চালান।
ঘটনাস্থলে পুলিশসহ সেনাবাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠার আশঙ্কায় আশপাশের বেশ কয়েকটি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
নিহত নারী শ্রমিকের নাম আফসানা আক্তার লাবনী (৩০)। তিনি ময়মনসিংহের নান্দাইল থানার পাঁচরুখী এলাকার বাসিন্দা এবং গাজীপুরের প্যানারোমা অ্যাপারেলস লিমিটেডে সুইং অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
শ্রমিকদের দাবি, লাবনী অসুস্থ থাকায় রোববার ছুটির আবেদন করেছিলেন, কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ তা মঞ্জুর করেনি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি কারখানার সাততলা থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেন। এরপর শ্রমিকদের মধ্যে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে যে, কারখানা কর্তৃপক্ষ তার মরদেহ গুমের চেষ্টা করছে। এর প্রতিবাদে আজ সকাল সাড়ে ৮টা থেকে শ্রমিকেরা বিক্ষোভ শুরু করেন।
একপর্যায়ে উত্তেজিত শ্রমিকেরা কারখানার জানালার কাচ ভাঙচুর করেন এবং বাইরে রাখা একটি প্রাইভেট কার ও বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন, ফলে প্রায় দেড় ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পদক্ষেপ
গাজীপুর শিল্পাঞ্চল-২-এর পুলিশ সুপার একেএম জহিরুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, শিল্প-পুলিশ ও মহানগর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
তিনি বলেন, "গতকাল এক নারী শ্রমিক ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেন। বলা হচ্ছিল, তিনি পারিবারিক কলহের কারণে আত্মহত্যা করেছেন। তবে গতকাল শ্রমিকদের মধ্যে কোনো উত্তেজনা ছিল না, তারা বিকেল পর্যন্ত কাজ করেছেন। কিন্তু আজ সকালে হঠাৎ করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং শ্রমিকেরা কারখানা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন।"
শ্রমিক অসন্তোষের জেরে প্রাথমিকভাবে আশপাশের ১২টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়। তবে পরিস্থিতি আরও নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভোগড়া বাইপাস, নাওজোড় ও ইটাহাটা এলাকার অন্তত অর্ধশতাধিক কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন।
thebgbd.com/NIT