আজ পবিত্র রমজানের দ্বিতীয় জুমা। ইসলামে জুমার দিন হলো সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন আর রমজান মাসকে বলা হয় সাইয়িদুশ শুহুর বা সব মাসের সেরা মাস। রমজান ও জুমা একইদিনে হলে স্বাভাবিকভাবেই দিনটির গুরুত্ব বেড়ে যায়।
পবিত্র রমজানে যে কোনো ইবাদতের মর্যাদা অনেক বেশি। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘রমজানে মানব সন্তানের প্রতিটি নেক আমলের প্রতিদান ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়ে থাকে..।’ (মুসলিম: ১৫৫১)
জুমার দিনের গুরুত্ব সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, যে দিনগুলোতে সূর্য উদিত হয়, ওই দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। ওই দিন হজরত আদমকে (আ.) সৃষ্টি করা হয়েছে। ওই দিন তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় এবং ওই দিনই তাকে জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া হয়। আর ওই দিনই কেয়ামত অনুষ্ঠিত হবে। (মুসলিম: ৮৫৪) এই দিনের বিশেষ কিছু আমল রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে বিপুল সওয়াব দান করেন।
জুমার দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে জুমার নামাজ। খুতবার পরে এই দুই রাকাত নামাজ পড়তে হয়। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন— يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِي لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ ‘হে মুমিনগণ, জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর ইবাদতের জন্য দ্রুত বেরিয়ে যাও এবং বেচা-কেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝ।’ (সুরা জুমা: ০৯)
জুমার নামাজ আদায় ছাড়াও পবিত্র রমজান মাসের জুমাবারগুলোতে বেশি বেশি দরুদ পাঠ, কোরআন তেলাওয়াত, বিশেষ করে সুরা কাহাফ পাঠ করা উচিত। কেননা এসব আমল জুমাবারে বেশি বেশি করার নির্দেশনা রয়েছে বিভিন্ন সহিহ বর্ণনায়।
এছাড়াও এমন মর্যাদাপূর্ণ দিনে বেশি বেশি দোয়া করতে হবে। কেননা জুমার দিনে দোয়া কবুলের ঘোষণা রয়েছে। নবীজি (স.) বলেছেন, জুমার দিন দোয়া কবুল হওয়ার একটি সময় আছে, কোনো মুসলিম যদি সেই সময়টা পায়, আর তখন যদি সে নামাজে থাকে, তাহলে তার যেকোনো কল্যাণ কামনা আল্লাহ পূরণ করেন। (বুখারি: ৬৪০০)
সময়টি কখন—এ ব্যাপারে অধিকাংশের মত হলো- আছরের নামাজের পর থেকে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত। আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.), আবু হুরায়রা (রা.), আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.), কাব আহবার (রহ), সাঈদ ইবনে জুবায়ের (রহ)., মুজাহিদ (রহ) ও তাউস (রহ) প্রমুখ এই মত গ্রহণ করেছেন। (দ্রষ্টব্য: মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা:৫৫০৩-৫৫০৫, ৫৫১৪; আততামহিদ: ১৯/২০, ২৩-২৪; আল-ইস্তিজকার: ৫/৮২, ৮৬, ৯৭)
তাই আছর নামাজের পরের সময়টিকে এক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। জুমার দিনে এই সময়টিতে দোয়া ও জিকির-আজকারে মনোনিবেশ করতেন সালাফরা। সালেম (রহ) বলেন- ‘সাঈদ ইবনে জুবায়ের (রহ) জুমার দিন আছরের নামাজের পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত (দোয়া-জিকিরে মগ্ন থাকতেন) কারো সাথে কথা বলতেন না। (আততামহিদ, ইবনে আবদুল বার: ১৯/২৩-২৪; আল-ইস্তিজকার, ইবনে আবদুল বার: ৫/৮৬-৮৭)
লাইছ ইবনে আবি সুলাইম (রহ) বলেন- ‘তাউস (রহ) (জুমার দিন) আছরের পর কারো সাথে কথা বলতেন না এবং এদিক ওদিক তাকাতেন না। সূর্যাস্ত পর্যন্ত দোয়া ও জিকিরে মশগুল থাকতেন। (আল-ইস্তিজকার: ৫/৯৭; আততামহিদ: ২৩/৪৬)
জুমার দিন একটু আগেভাগে জুমার প্রস্তুতি নেওয়া উত্তম। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে মসজিদে গিয়ে চুপচাপ নামাজ পড়া ও খুতবা শোনা অধিক পূণ্যময় আমল। এর ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, সালমান ফারসি (রা.) বলেন, মহানবী (স.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিনে গোসল করে ভালোরূপে পবিত্রতা অর্জন করে, নিজের ঘরের তেল, সুগন্ধি ব্যবহার করে বের হয় এবং দু’জন লোকের মাঝে ফাঁকা জায়গা না রেখে তার নির্ধারিত নামাজ আদায় করে এবং ইমামের খুতবা দেয়ার সময় চুপ থাকে তাহলে তার জুমা থেকে আরেক জুমা পর্যন্ত সময়ের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। (বুখারি: ৮৩৯)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে পবিত্র রমজানে জুমার দিনের গুরুত্ব বোঝার তাওফিক দান করুন। জুমার নামাজ যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
thebgbd.com/NA