প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরে কিংবা আগামী বছরের জুনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি ‘সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজ’-এ সম্মত হয়, তবে নির্বাচন ডিসেম্বরে হবে। আর ‘বৃহৎ সংস্কার প্যাকেজ’ গ্রহণ করলে ভোট জুনে অনুষ্ঠিত হবে।
শুক্রবার (১৪ মার্চ) ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। বৈঠকে জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশের সংস্কার উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়ে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত
প্রধান উপদেষ্টা জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রায় ১০টি রাজনৈতিক দল মতামত দিয়েছে। দলগুলো এই কমিশনের সুপারিশগুলোর সঙ্গে একমত হলে ‘জুলাই সনদ’-এ স্বাক্ষর করবে, যা গণতান্ত্রিক উত্তরণের পাশাপাশি বিচারব্যবস্থা, প্রশাসন, দুর্নীতি দমন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংস্কারের রূপরেখা নির্ধারণ করবে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আমরা একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই। দলগুলোর সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে নির্বাচন কবে হবে।”
জাতিসংঘের প্রতিশ্রুতি ও রোহিঙ্গা সংকট
জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস বলেন, “বাংলাদেশের সংস্কার প্রচেষ্টাকে আমরা সমর্থন দিতে এখানে এসেছি। আমরা চাই, এই প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন এবং বাস্তব পরিবর্তন নিশ্চিত করুক।”
তিনি কক্সবাজারে বসবাসরত ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গার মানবিক সহায়তা হ্রাস নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “পৃথিবীতে এতটা বৈষম্যের শিকার অন্য কোনো জনগোষ্ঠী আমি দেখিনি।” তিনি উল্লেখ করেন, পশ্চিমা দেশগুলো প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়ালেও মানবিক সহায়তা কমিয়ে দিচ্ছে, যা ‘একটি অপরাধ’ বলে তিনি মনে করেন।
গুতেরেস বাংলাদেশের রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার আশ্বাস দেন এবং বলেন, “আমরা চাই রোহিঙ্গারা সম্মানের সঙ্গে মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারুক। তবে যতদিন তারা বাংলাদেশে রয়েছে, ততদিন তাদের মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।”
বাংলাদেশের অর্থনীতি ও বৈদেশিক সম্পর্ক
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার উত্তরাধিকারসূত্রে ধ্বংসপ্রাপ্ত ব্যাংকিং খাত ও সংকুচিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পেয়েছে। তবে এখন অর্থনীতি সুসংহত হচ্ছে, রপ্তানি বাড়ছে এবং রিজার্ভও ভালো অবস্থায় রয়েছে।
তিনি জানান, বাংলাদেশ আগামী বছর স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং লুটপাট হওয়া কয়েক শ’ বিলিয়ন ডলার ফেরত আনতে সরকার চেষ্টা করছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করেন এবং দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়ে আলোচনা করেন।
বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেনটেটিভ খলিলুর রহমান, এসডিজি–বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদসহ জাতিসংঘের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
thebgbd.com/NIT