মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল মিডিয়া এক বার্তায় বলেছেন, ইরাকে ইসলামিক স্টেটের (আইএস, রাশিয়ায় নিষিদ্ধ) একজন নেতা নিহত হয়েছেন। ওয়াশিংটন থেকে বার্তা সংস্থা তাস এ খবর জানায়।
হোয়াইট হাউস থেকে হত্যার কৃতিত্ব ট্রাম্পকে দিয়ে হামলার ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে এক্স-এ। পোস্টে লেখা হয়েছে, বিমানহামলা চালিয়ে আইএস নেতাকে ‘হত্যা’ করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ট্রাম্প নিজেও সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘শক্তির মাধ্যমে শান্তি এসেছে।’
ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল মিডিয়া এক বার্তায় লিখেছেন, ‘আজ (শুক্রবার) ইরাকে আইএসআইএস’র পলাতক নেতা নিহত হয়েছেন। আমাদের সাহসী নির্ভীক যোদ্ধারা তাকে নিরলসভাবে তাড়া করে বেড়াচ্ছিলেন। তার দুর্দশাগ্রস্ত জীবনে ইতি পড়েছে। আইএসের আর এক সদস্যও নিহত হয়েছেন। শক্তির মাধ্যমে শান্তি।’ তিনি আরো উল্লেখ করেন, অভিযানটি ইরাক সরকার এবং ইরাকি কুর্দিস্তানের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে পরিচালিত হয়েছে। এবার ওই অঞ্চলেও শান্তি ফিরবে।
শুক্রবার (১৪ মার্চ) ইরাকি প্রধানমন্ত্রী এবং কমান্ডার-ইন-চিফ মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানী ঘোষণা করেন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরাকের সেনার যৌথ অভিযানে শুক্রবার নিহত হয়েছেন ইসলামিক স্টেটের নেতা আবদুল্লাহ মাক্কি মুসলিহ আল-রুফায়ি ওরফে আবু খাদিজা। মার্কিন কেন্দ্রীয় কমান্ড (সেন্টকম)-ও আবু খাদিজার বিরুদ্ধে যৌথ হামলার কথা জানিয়েছে। মার্কিন সেনারা ডিএনএ ম্যাচিং ব্যবহার করে খাদিজার পরিচয় নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছেন।
ইরাকের গোয়েন্দা দপ্তর, নিরাপত্তাবাহিনী এবং মার্কিন বাহিনীর যৌথ উদ্যোগে ইরাকের আল আনবার প্রদেশে অভিযান চালানো হয়। গাড়িতে যাচ্ছিলেন আবু খাদিজা এবং এক সঙ্গী। সেই সময়ে আকাশ থেকে তাদের গাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। হামলার পর পরই ওই এলাকায় যায় মার্কিন বাহিনী সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) এবং ইরাকের বাহিনী। তারাই আবু খাদিজা এবং তার এক সঙ্গীকে শনাক্ত করে।
সেন্টকম এক্স-এ এক বার্তায় উল্লেখ করে, নিহত সন্ত্রাসী বিশ্বজুড়ে ইসলামিক স্টেটের সন্ত্রাসী হামলার রসদ সরবরাহ এবং পরিকল্পনার জন্য দায়ী ছিল। অভিযানে অন্য একজন জঙ্গিও নিহত হয়েছে, যার পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি বলে জানা গেছে।
সেন্টকম আরও জানায়, যে দু’জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে তাদের শরীরে বিস্ফোরক বাঁধা পোশাক ছিল। প্রচুর অস্ত্রও ছিল তাদের সঙ্গে। এর আগেও হামলায় বেঁচে যান আইএসের এই শীর্ষনেতা। ২০২৩ সালে আবু খাদিজাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। ইরাক এবং সিরিয়ায় আইএসের দায়িত্বে ছিলেন খাদিজা। আইএসের ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ বলা হত তাঁকে।
সেন্ট কম কমান্ডার জেনারেল মাইকেল এরিক কুরিলা বলেন, ‘আইএস-এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য আবু খাদিজা। আমাদের মাতৃভূমি এবং তার বন্ধুদেশের জন্য বিপজ্জনক জঙ্গিদের এভাবেই মারব। তাদের সংগঠন ভেঙে দেব।’ মার্কিন প্রশাসনের কেউ কেউ দাবি করছেন, নিজেকে ‘শান্তিদূত’ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন ট্রাম্প। শান্তির নোবেল পেতে আগ্রহী তিনি। সে কারণে যুদ্ধবিরতি, জঙ্গি হত্যায় তৎপর সরকার। তাই খাদিজার হত্যার ‘কৃতিত্ব’ও তাকেই দিয়েছে হোয়াইট হাউস।
২০১৪ সালের গ্রীষ্মে ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিরা ইরাকের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ভূখণ্ড দখল করে নেয়। ২০১৫ সালে, আন্তর্জাতিক জোটের সহায়তায়, ইরাকি সরকারি বাহিনী সেই অঞ্চলগুলো মুক্ত করার জন্য একটি বড় অভিযান শুরু করে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে, তৎকালীন ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-আবাদি ইসলামিক স্টেটের সম্পূর্ণ পরাজয় ঘোষণা করেন।
তবে, নিরাপত্তা সংস্থাগুলো এখনও দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করছে আন্ডারগ্রাউন্ড সন্ত্রাসীদের ধ্বংস করার জন্য। আন্ডারগ্রাউন্ড সন্ত্রাসী সদস্যরা আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা, সামরিক বাহিনী এবং বেসামরিক নাগরিকদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে আসছে।
সূত্র: এএফপি, তাস ও রয়টার্স
এসজেড