ঢাকা | বঙ্গাব্দ

যুদ্ধ কেন ভালোবাসে যুক্তরাষ্ট্র

দেশটি তার ২৪৮ বছরের ইতিহাসে ২৩২ বছর যুদ্ধে কাটিয়েছে। তার মানে যুক্তরাষ্ট্র ইতিহাসের শতকরা মাত্র ৬ ভাগ সময় যুদ্ধ ছাড়া কাটিয়েছে।
  • অনলাইন ডেস্ক | ১৫ মার্চ, ২০২৫
যুদ্ধ কেন ভালোবাসে যুক্তরাষ্ট্র মার্কিন সেনা।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার ট্রাম্পের সঙ্গে এক ফোনালাপে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে যুদ্ধপ্রেমী দেশ।’ যখন যুদ্ধ এবং সামরিক হস্তক্ষেপের কথা আসে, তখন একটি দেশের নাম সর্বদা শীর্ষে উঠে আসে, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র’। দেশটি তার ২৪৮ বছরের ইতিহাসে ২৩২ বছর যুদ্ধে কাটিয়েছে। তার মানে যুক্তরাষ্ট্র ইতিহাসের শতকরা মাত্র ৬ ভাগ সময় যুদ্ধ ছাড়া কাটিয়েছে।


কিন্তু কেন? কেন এই দেশটি ক্রমাগত সরাসরি যুদ্ধ, গোপন অভ্যুত্থান এবং আন্তর্জাতিক সংকটে জড়িয়ে পড়ছে? এটা কি শুধুই ঐতিহাসিক ঘটনা, নাকি যুক্তরাষ্ট্রর বেঁচে থাকার অনিবার্য কাঠামো বা স্বরূপের অংশ? ‘সিয়াটল টাইমস’-এর এক বিশেষ প্রতিবেদনে বিষয়টি ওঠে এসেছে।


যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ আসক্ত একটি দেশ। চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র একবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ‘যুদ্ধে আসক্ত’ বলে অভিহিত করে বলেন, এই দেশটি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। আমরা যদি ইতিহাসের দিকে তাকাই তাহলে সম্ভবত এই দাবিটি সত্যের অপলাপ হবে না। 


১৭৭৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রর স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত দীর্ঘ সময়ের পরিসংখ্যান অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সর্বদা দখলদারিত্ব, অভ্যুত্থান অথবা যুদ্ধাবস্থায় ছিল।


আধিপত্যবাদী যুদ্ধ : মেক্সিকোর জমি দখল (১৮৪৬-১৮৪৮) এবং মার্কিন আদিবাসীদের ওপর গণহত্যা (১৮১১-১৮৯০)।


বিশ্বযুদ্ধ : প্রথম বিশ্বযুদ্ধে প্রবেশ (১৯১৭) এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে (১৯৪৫) হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা হামলা।


স্নায়ু যুদ্ধের যুগ : কোরিয়া, ভিয়েতনামে হস্তক্ষেপ এবং ১৯৫৩ সালে ইরানে অভ্যুত্থান।


একবিংশ শতাব্দী এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর যুদ্ধ : আফগানিস্তান ও ইরাক দখল, লিবিয়ায় যুদ্ধ, ইয়েমেন ও সোমালিয়ায় ড্রোন হামলা এবং সাম্প্রতিক ইউক্রেন যুদ্ধ।


যুদ্ধ এবং মধ্যবর্তী অভ্যুত্থান : উপরোক্ত যুদ্ধগুলোর সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য দেশের বিরুদ্ধে যে সব যুদ্ধ চালিয়েছে, যেমন কম্বোডিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা ইত্যাদি। 


কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র কেন এত যুদ্ধ করে? অর্থনৈতিক গবেষণা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র ‘নিরাপত্তা’র জন্য নয় বরং অর্থনৈতিক স্বার্থ, রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার এবং অস্ত্র বিক্রির লক্ষ্যে যুদ্ধ বিস্তারের চেষ্টা করে। যুক্তরাষ্ট্রর অস্ত্র নির্মাণশিল্প একটি অর্থনৈতিক বিশাল শক্তি। এটা জেনে রাখা ভালো, শুধু মাত্র ২০২৩ সালেই এই দেশের অস্ত্র বিক্রির পরিমাণ ২৩৮ বিলিয়ন ডলার এবং বিশ্বে যত অস্ত্র বিক্রি হয় তার ৫১ শতাংশই মার্কিন অস্ত্র প্রতিষ্ঠানগুলো বিক্রি করে থাকে।


সম্পদ, ভূ-রাজনৈতিক এলাকা এবং করিডোরের নিয়ন্ত্রণ যুদ্ধের আরেকটি প্রেরণা : এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, মধ্যপ্রাচ্যের তেল, সামরিক বাজার এবং কৌশলগত এলাকা এবং জলপথসমূহে স্থায়ী ঘাঁটি স্থাপন এবং এভাবেই আজ বিশ্বের ৮০টিরও বেশি দেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি রয়েছে।


সাংস্কৃতিক পুঁজিবাদের জন্য একটি মূল্যবোধ ব্যবস্থা আরোপ করা : এমনকি যুক্তরাষ্ট্রর রাজনীতিবিদরাও এই সত্যটি স্বীকার করেছেন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার ট্রাম্পের সঙ্গে এক ফোনালাপে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে যুদ্ধপ্রেমী দেশ। কারণ, তারা সবসময় জোর করে অন্যদের ওপর নিজেদের মূল্যবোধ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে।


কিন্তু মার্কিনীদের এই ক্ষুধা কি অব্যাহত থাকবে? 


এই ধারা অব্যাহত থাকার লক্ষণ রয়েছে। কানাডাকে সংযুক্ত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রর হুমকি। পানামা খাল পুনরুদ্ধারের দাবি। গ্রিনল্যান্ড কেনার জন্য বারবার প্রস্তাব! অবশ্য এই যুদ্ধগুলোর সময় এখনও স্পষ্ট নয় এবং মনে হচ্ছে এগুলো বর্তমানে মনস্তাত্ত্বিক পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে। এসব হচ্ছে কেবল যুক্তরাষ্ট্রর সম্প্রসারণবাদী নীতির কয়েকটি উদাহরণ মাত্র। তারা এমনকি প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধেও একই নীতি গ্রহণ করেছে।


পরিশেষে বলা যায় যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ডিএনএ’র একটি অংশ। যুক্তরাষ্ট্রর শান্তির প্রয়োজন নেই কারণ, তারা যুদ্ধ থেকে সম্পদশালী হয়ে ওঠে অস্ত্র বিক্রি করে। যুক্তরাষ্ট্রর একটি থিঙ্কট্যাংক বলেছে- কিন্তু এই পথ কি চিরকাল অব্যাহত থাকবে? নাকি অবশিষ্ট বিশ্ব এই যুদ্ধবাজ নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে?


সূত্র: সিয়াটল টাইমস


এসজেড