ঢাকা | বঙ্গাব্দ

উম্মতে মুহাম্মদির রোজার কিছু বৈশিষ্ট্য

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর উম্মত, অর্থাৎ মুসলিমদের জন্য রোজার কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা অন্য জাতিরা পালন করে না।
  • নিজস্ব প্রতিবেদক | ২০ মার্চ, ২০২৫
উম্মতে মুহাম্মদির রোজার কিছু বৈশিষ্ট্য ছবি : সংগৃহীত।

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর উম্মত, অর্থাৎ মুসলিমদের জন্য রোজার কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা অন্য জাতিরা পালন করে না। ইসলামিক রোজার মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ, আত্মশুদ্ধি এবং তার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা। মুসলিম উম্মতের রোজা কিছু বিশেষ দিক থেকে অন্যান্য জাতির রোজা থেকে আলাদা। এখানে কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো:


ইসলামে রোজার মধ্যে ইফতার ও সেহরি দুটি বিশেষ দিক রয়েছে। সেহরি খাওয়া মুসলিমদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি রোজার জন্য শক্তি যোগায় এবং পরিপূর্ণ রোজা রাখার সুযোগ দেয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, "সেহরি খাওয়া বরকতময়।" (সহিহ বুখারি)। অপরদিকে, ইফতার করার সময়ও মুসলিমরা তাড়াতাড়ি ইফতার করেন, অর্থাৎ সূর্যাস্তের পর খাওয়া শুরু করা। রাসুল (সা.) বলেছেন, "তোমরা ইফতার করো যখন রাত হয়।" (সহিহ মুসলিম)


মুসলিমরা রোজা ভঙ্গ করার সময় দোয়া পড়েন। রাসুল (সা.) বলেছেন, "রোজাদারের জন্য ইফতারের সময় দোয়া মঞ্জুর হয়।" (তিরমিজি)। এটি এক অনন্য বৈশিষ্ট্য, যেখানে মুসলিমরা আল্লাহর কাছে মাগফিরাত, রহমত এবং বরকত প্রার্থনা করেন।


রোজার মাধ্যমে মুসলিমরা আল্লাহর প্রতি তাদের আনুগত্য প্রদর্শন করেন এবং তাদের ইবাদত বাড়িয়ে দেন। রমজান মাসে কুরআন তিলাওয়াত, নফল নামাজ, তাসবিহ এবং দান খয়রাতের মাধ্যমে ইবাদতের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। রমজানকে কুরআন নাযিল মাস হিসেবে পালন করা হয়, এবং এই মাসে লাইলাতুল কদর (কদরের রাত) রয়েছে, যা এক হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।


রোজা শেষ হওয়ার পর মুসলিমরা ফিতরা (রমজান মাসের শেষে দান) প্রদান করেন, যা দরিদ্রদের সাহায্য করার জন্য জরুরি। এটি রোজার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য, কারণ এটি সমাজের অবহেলিত সদস্যদের সহায়তা নিশ্চিত করে এবং রমজানের মূল উদ্দেশ্য, আত্মশুদ্ধি এবং দানের প্রতি মনোযোগী হওয়ার বাস্তবায়ন ঘটায়।


রোজা কেবল শারীরিক খাওয়ার ও পানীয় থেকে বিরত থাকার বিষয় নয়, এটি একজন মুসলিমের আত্মশুদ্ধি এবং তাপস (স্বাভাবিক প্রবৃত্তির প্রতি নিয়ন্ত্রণ) অর্জনের উপায়। মুসলিমরা রোজার মাধ্যমে তাদের মানসিক এবং আধ্যাত্মিক অবস্থাও পরিশুদ্ধ করে, যা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সহায়ক। রাসুল (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি রোজা রাখে, সে যদি মিথ্যা কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকে, তবে তার রোজা পুরস্কৃত হবে।" (সহিহ বুখারি)


মুসলিমরা রোজা রাখার মাধ্যমে একে অপরের সাথে ভ্রাতৃত্ববোধ বৃদ্ধি করেন এবং তাদের সমাজে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ইবাদতের একতার একটি সুন্দর দিক, যেখানে প্রত্যেক মুসলিম একই দিনে রোজা শুরু করে এবং একসঙ্গে ইফতার করে।


রোজা মুসলিমদের জন্য বিশেষ মর্যাদা এবং ফজিলত আনয়ন করে। রাসুল (সা.) বলেছেন, "রোজা আমার কাছে একটি বিশেষ কাজ, যার প্রতিদান আমি নিজেই দেব।" (সহিহ মুসলিম)। এটি আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য এবং আত্মসংযমের এক অসামান্য পরীক্ষা।


উম্মতে মুহাম্মদির রোজা অন্যান্য জাতির রোজার তুলনায় আল্লাহর নির্দেশিত পদ্ধতিতে আরও পূর্ণতা পায় এবং এটি মুসলিমদের আত্মশুদ্ধি, ইবাদত এবং ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।


thebgbd.com/NA