ঢাকা | বঙ্গাব্দ

কচ্ছপের মাংস খাচ্ছে গাজাবাসীরা

জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় অফিস সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, গাজা সবচেয়ে গুরুতর মানবিক সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে।
  • অনলাইন ডেস্ক | ১৯ এপ্রিল, ২০২৫
কচ্ছপের মাংস খাচ্ছে গাজাবাসীরা চরম খাদ্যসংকটে গাজাবাসীরা।

অবরুদ্ধ ও যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় খাদ্য সংকটের কারণে হতাশাগ্রস্ত পরিবারগুলো প্রোটিনের বিরল উৎস হিসেবে সামুদ্রিক কচ্ছপ খাওয়ার দিকে ঝুঁকছে। এসব কচ্ছপ খোসা ছাড়ানোর পর মাংস কেটে সেদ্ধ করে পেঁয়াজ, গোলমরিচ, টমেটো এবং মশলার মিশ্রণে রান্না করা হয়।


কাঠের আগুনের উপরে একটি হাঁড়িতে লাল মাংসের টুকরোগুলো ফুটন্ত অবস্থায় পর্যবেক্ষণ করে মাজিদা কানান বলেন, ‘বাচ্চারা কচ্ছপ দেখলে ভয় পেত এবং আমরা তাদের বলেছি এটি বাছুরের মাংসের মতোই সুস্বাদু।’ মাজিদা বলেন, কিন্তু ‘তাদের মধ্যে কেউ কেউ খেয়েছে তবে অন্যরা তা প্রত্যাখ্যান করে।’


যারা বাস্তুচ্যুত হয়ে এখন দক্ষিণ গাজার বৃহত্তম শহর খান ইউনিসে একটি তাঁবুতে বসবাস করছেন, তাদের মধ্যে আরো ভালো বিকল্পের অভাবে কানান (৬১) তৃতীয়বারের মতো তার পরিবারের জন্য কচ্ছপ-ভিত্তিক খাবার প্রস্তুত করেছেন।


দেড় বছরের মাসের ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ এবং ২ মার্চ থেকে সাহায্যের ওপর ইসরায়েলিদের অবরোধের পর জাতিসংঘ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের ২৪ লক্ষ বাসিন্দার জন্য ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতির বিষয়ে সতর্ক করেছে। ইসরায়েল হামাসের সাহায্যের অপব্যবহারের অভিযোগ এনেছে। অবশ্য এ দাবি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী হামাস অস্বীকার করেছে।


বৃহস্পতিবার ১২টি প্রধান সাহায্য সংস্থার প্রধানরা সতর্ক করে বলেছেন, ‘দুর্ভিক্ষ কেবল একটি ঝুঁকি নয় বরং সম্ভবত এই অঞ্চলের প্রায় সব অংশেই দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে।’ কানান বলেন, ‘কোনো খোলা ক্রসিং নেই এবং বাজারেও কিছু নেই। যখন ৮০ শেকেল (২২ ডলার) দিয়ে সবজির দু’টি ছোট ব্যাগ কিনি, তখন আর মাংস কেনার কোনো টাকা থাকে না।’


সামুদ্রিক কচ্ছপ আন্তর্জাতিকভাবে বিপন্ন প্রজাতি হিসেবে সুরক্ষিত কিন্তু গাজার জেলেদের জালে ধরা পড়া কচ্ছপগুলো খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কানান মাংস ধোয়ার জন্য ময়দা এবং ভিনেগারের সঙ্গে মিশিয়ে দেয়। তারপর ধুয়ে একটি পুরানো ধাতব পাত্রে সেদ্ধ করে।


জেলে আবদেল হালিম কানান বলেন ‘আমরা কখনই কচ্ছপ খাওয়ার আশা করিনি।’ তিনি বলেন, ‘যখন যুদ্ধ শুরু হয়, তখন খাদ্যের ঘাটতি ছিল। খাবার ছিল না। তাই কচ্ছপের মাংস প্রোটিনের অন্যান্য উৎসের বিকল্প। মাংস, মুরগি বা সবজি কিছুই ছিল না।’


জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় অফিস সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, গাজা সবচেয়ে গুরুতর মানবিক সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে। মাত্র দু’বার বিরতি হয়েছে। সম্প্রতি ১৯ জানুয়ারি থেকে ১৭ মার্চের মধ্যে দুই মাসের যুদ্ধবিরতি এবং ২০২৩ সালের নভেম্বরের শেষের দিকে এক সপ্তাহের বিরতি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক প্রধান হানান বালখি গত জুনে বলেন, কিছু গাজার বাসিন্দা এতটাই মরিয়া যে তারা পশুর খাবার, ঘাস এবং পয়ঃনিষ্কাশনের পানি পান করছে।


বৃহস্পতিবার হামাস অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল গাজাবাসীদের বিরুদ্ধে ‘অনাহারকে হাতিয়ার হিসেবে’ ব্যবহার করে সাহায্য সরবরাহ বন্ধ করে দিচ্ছে। জেলে কানান বলেন, কচ্ছপগুলোকে ইসলামিক রীতিনীতি অনুসারে ‘হালাল’ পদ্ধতিতে হত্যা করা হয়। তিনি বলেন, ‘যদি দুর্ভিক্ষ না থাকত, আমরা এটি খেতাম না এবং ছেড়ে দিতাম না তবে আমরা প্রোটিনের অভাব পূরণ করতে চাই।’ 


সূত্র: এএফপি


এসজেড