ঢাকা | বঙ্গাব্দ

পোপের কাজ কী

বিশ্বব্যাপী ক্যাথলিক চার্চের প্রধান পদের মূল দায়িত্বগুলো নিচে তুলে ধরা হলো:
  • অনলাইন ডেস্ক | ২৭ এপ্রিল, ২০২৫
পোপের কাজ কী ক্যাথলিকদের নেতা পোপ

পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষে শিগগিরই বিশ্বের কার্ডিনালরা রোমে সমবেত হবেন নতুন পোপ নির্বাচন করতে। কিন্তু পোপ আসলে কী করেন? বিশ্বব্যাপী ক্যাথলিক চার্চের প্রধান পদের মূল দায়িত্বগুলো নিচে তুলে ধরা হলো:


ক্যাথলিকদের নেতা


‘পোপ’ শব্দটি গ্রিক ‘পাপ্পাস’ (পিতা, গৃহপ্রধান) শব্দ থেকে এসেছে। এ কারণেই বিশ্বাসীরা তাকে ‘পবিত্র পিতা’ বলে সম্বোধন করেন। পোপকে সেন্ট পিটার বা শিমন পেত্রুসের উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যাকে বলা হয় যিশু খ্রিষ্ট চার্চ পরিচালনার দায়িত্ব দেন। আজকের দিনে পোপ হচ্ছেন বিশ্বের প্রায় ১৪০ কোটি ক্যাথলিকের আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শক। তার দায়িত্ব হলো খ্রিষ্টীয় বিশ্বাস সংরক্ষণ, ব্যাখ্যা ও প্রচার করা এবং ক্যাথলিক চার্চের ঐক্য বজায় রাখা।


রাষ্ট্রপ্রধান


পোপ একই সঙ্গে ভ্যাটিকান সিটি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান এবং শাসক। মাত্র ৪৪ হেক্টর এলাকা নিয়ে গঠিত ভ্যাটিকান বিশ্বের সবচেয়ে ছোট স্বাধীন রাষ্ট্র, যা ইতালির রাজধানী রোমের মধ্যে অবস্থিত। পোপ ভ্যাটিকানের সকল ক্ষেত্রে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী—চাকরি প্রদান থেকে শুরু করে বরখাস্ত করা এবং বিশাল সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা পর্যন্ত—তবে তিনি বহু কাজ জ্যেষ্ঠ ধর্মীয় নেতাদের উপর অর্পণ করেন। পোপের নিজস্ব কূটনৈতিক বাহিনী আছে এবং তিনি প্রায়ই বিশ্বের বিভিন্ন নেতার সঙ্গে ভ্যাটিকানে ‘ব্যক্তিগত বৈঠক’ করেন।


নৈতিক পথপ্রদর্শক


বিশ্বের ক্যাথলিকদের বাইরেও পোপের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। তিনি বৈশ্বিক পর্যায়ে একজন শীর্ষ নৈতিক কণ্ঠস্বর। অনেক অ-ক্যাথলিক নেতাও ভ্যাটিকানে তার সাক্ষাৎ চান এবং তার বক্তব্য অনেক সময় নির্বাচিত রাজনীতিকদের তুলনায় বেশি গুরুত্ব বহন করে। ভ্যাটিকান জাতিসংঘে একজন পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করে এবং প্রায়ই দ্বন্দ্বপূর্ণ অঞ্চলে নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আমন্ত্রিত হয়।


নীতি ও শিক্ষাদান


নিজের বক্তব্য ও লিখিত লেখার মাধ্যমে পোপ ফ্রান্সিস দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন—যেমন, তিনি গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। তিনি বেশ কয়েকটি এনসাইক্লিকাল প্রকাশ করেছেন, যা পোপের লেখা বিশ্বব্যাপী চার্চের উদ্দেশে খোলা চিঠি। এর মধ্যে ‘সামাজিক বন্ধুত্ব’ ও ‘জলবায়ু পরিবর্তন’ নিয়ে আলোচনাও ছিল।


পোপ আরও প্রকাশ করেছেন অ্যাপোস্টলিক এক্সহর্টেশন (শিক্ষামূলক নথি) এবং ‘মোতু প্রপ্রিয়ো’ নামে আইনি পরিবর্তনের দলিল, যা তার নিজস্ব উদ্যোগে জারি করা হয়। পোপ ফ্রান্সিস তাঁর মেয়াদকালে সমকামী দম্পতিদের আশীর্বাদ দেওয়ার পথ উন্মুক্ত করেন, লাতিন ভাষায় প্রাচীন ধর্মীয় আচারের ব্যবহার সীমিত করেন এবং শিশুদের উপর ধর্মগুরুর যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেন।


নিয়োগ কার্যক্রম


বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩,০০০ বিশপের নিয়োগ এবং কার্ডিনালদের মনোনয়নের অনুমোদন পোপের মাধ্যমেই হয়। কার্ডিনালরা চার্চের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ ধর্মগুরু, যাদের মধ্যে ৮০ বছরের কম বয়সীরা পরবর্তী পোপ নির্বাচন করতে ভোট দিতে পারেন। পোপই চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করেন কারা ‘ধন্য’ (ব্লেসড) অথবা ‘সন্ত’ (সেইন্ট) মর্যাদা লাভ করবেন, যা অলৌকিক ঘটনা ও গুণাবলির তদন্তের মাধ্যমে যাচাই করা হয়। পোপ চাইলে ‘সিনড’ (বিশ্বব্যাপী আলোচনাসভা) আহ্বান করতে পারেন, যেখানে পোপ ফ্রান্সিস প্রথমবারের মতো সাধারণ ধর্মবিশ্বাসীদের অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেন।


ভ্রমণ


বিশ্বব্যাপী বিশ্বাসীদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য পোপ ভ্রমণ করেন। পোপ জন পল দ্বিতীয় সর্বাধিক ১০৪টি বিদেশ সফর করেন তার ২৬ বছরের পোপকালীন সময়ে। পোপ ফ্রান্সিসও ৪৭টি আন্তর্জাতিক সফর করেছেন, যেখানে তিনি প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর আলোকপাত করেছেন, যেমন অভিবাসন সমস্যা বা আন্তঃধর্মীয় সংলাপ।


রোমের বিশপ


পোপ রোমের বিশপ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন, যদিও সময়ের সীমাবদ্ধতার কারণে তিনি এই প্রশাসনিক দায়িত্ব ভিকার জেনারেলের উপর অর্পণ করেন। তবে তিনি স্থানীয় অনুষ্ঠানাদিতে অংশ নেন এবং নিয়মিত রোমের গির্জা ও প্রতীকী স্থানসমূহ পরিদর্শন করেন।


সূত্র: রয়টার্স


এসজেড