ঢাকা | বঙ্গাব্দ

পোপের শক্তিকেন্দ্র ভ্যাটিকান

পোপ ৪৪ হেক্টর (১০৯ একর) আয়তনের এই নগররাষ্ট্রে সর্বময় শাসক যার এক-তৃতীয়াংশ অঞ্চল উদ্যান।
  • অনলাইন ডেস্ক | ২৮ এপ্রিল, ২০২৫
পোপের শক্তিকেন্দ্র ভ্যাটিকান ভ্যাটিকান সিটি।

ক্যাথলিক চার্চের সদরদপ্তর ভ্যাটিকান বিশ্বে ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্র, যার রয়েছে নিজস্ব পত্রিকা, লাতিন ভাষায় জাতীয় সংগীত এবং সর্বোচ্চ নেতা পোপ। ভ্যাটিকান সিটি থেকে এএফপি জানায়, প্রাচীন প্রাচীরঘেরা এ নগররাষ্ট্রে বসবাস করেন প্রায় ৯০০ জন, যাদের মধ্যে রয়েছেন পোপ নিজে, লাল টুপি পরিহিত কার্ডিনাল, সন্ন্যাসিনী, পুরোহিত, কূটনীতিক এবং উদ্যানকর্মী, রাঁধুনি ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর মতো সাধারণ কর্মচারীরা।


ভ্যাটিকানের ফটকে পাহারা দেয় বিশ্বের প্রাচীনতম সেনাবাহিনীর সদস্য সুইস গার্ডরা যারা নীল, লাল ও হলুদ রঙের পরিচিত ডোরাকাটা পোশাক পরে থাকে, সঙ্গে রয়েছে ভ্যাটিকানের নিজস্ব পুলিশ বাহিনীও। ভ্যাটিকানের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন পোপ, যিনি সাদা পোশাকে এক রাজকীয় ব্যক্তিত্ব এবং যিনি রাষ্ট্রের প্রধান ও বিশ্বের ১৪০ কোটি ক্যাথলিকের ধর্মীয় নেতার ভূমিকায় সর্বময় ক্ষমতা প্রয়োগ করেন।


ভ্যাটিকান পূর্বে তথাকথিত পাপাল স্টেটসের অংশ ছিল, অর্থাৎ শত শত বছর ধরে পোপের শাসনাধীন ইতালির কয়েকটি অঞ্চল। ১৯ শতকের ইতালীয় একত্রীকরণ আন্দোলনের সময় এসব অঞ্চল জয় করা হয়।


১৮৭০ সালে রোম দখল করে নেওয়া হয় এবং পরে এটি ইতালির রাজধানী হয়ে ওঠে। পোপ নবম পায়াস নিজেকে ‘ভ্যাটিকানের বন্দি’ বলে ঘোষণা দেন একটি দাবি যা পরবর্তী পোপরাও ধরে রাখেন, যতদিন না ইতালীয় সরকারের সঙ্গে সমঝোতা হয়।


১৯২৯ সালে পোপ পায়াস একাদশ এবং ইতালির স্বৈরশাসক বেনিতো মুসোলিনির মধ্যে স্বাক্ষরিত ল্যাটেরান চুক্তির মাধ্যমে ভ্যাটিকান সিটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়, যেখানে ইতালি ভ্যাটিকান অঞ্চলের ওপর পোপের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে।


স্বর্গের চাবি -


পোপ ৪৪ হেক্টর (১০৯ একর) আয়তনের এই নগররাষ্ট্রে সর্বময় শাসক যার এক-তৃতীয়াংশ অঞ্চল উদ্যান। রাষ্ট্রটির সরকার হলো ‘পবিত্র আসন’ (হলি সী), যা আন্তর্জাতিক আইনে একটি সার্বভৌম আইনগত সত্তা। ক্যাথলিক চার্চের পরিচালনা করে রোমান কুরিয়া, যা গঠিত হয়েছে স্টেট সেক্রেটারিয়েট, ১৬টি দিকাস্টেরি বা মন্ত্রণালয়, ৬টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং কয়েকটি একাডেমি ও সংস্থার সমন্বয়ে।


ভ্যাটিকানে নাগরিকত্ব 'জুস অফিসি' পদ্ধতির ভিত্তিতে প্রদান করা হয়, অর্থাৎ বাসস্থান ও চাকরির ভিত্তিতে। এখানকার আইনব্যবস্থা ইতালির অনুরূপ, এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ছোট আকারের একটি আদালতে বিচার করা হয়। এ ধরনের বিচার এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ভ্যাটিকানের পত্রিকা লোসারভাতোরে রোমানো এবং প্রায় ৪০টি ভাষায় কার্যক্রম পরিচালনাকারী ভ্যাটিকান মিডিয়া।


ভ্যাটিকানের কর্মীরা করমুক্ত বেতন পান এবং বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করেন, তবে তারা কোনো শ্রমিক সংগঠন গঠন বা তাতে যোগ দিতে পারেন না। তবে তারা ভ্যাটিকানের সুপারমার্কেট, ডাকঘর, ফার্মেসি ব্যবহার করতে পারেন এবং বিশ্বের ক্ষুদ্রতম জাতীয় রেলপথের মাধ্যমে রোমে যাতায়াত করতে পারেন।


ভ্যাটিকানের ব্যাংক, ইনস্টিটিউট ফর রিলিজিয়াস ওয়ার্কস (ওঙজ), যা একসময় নানা কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত ছিল, এখন সংস্কার করা হয়েছে এবং এটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলোর সম্পদ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে। ভ্যাটিকানের জাতীয় সংগীত ‘পন্টিফিক্যাল মার্চ’ বিশ্বের একমাত্র সংগীত যা লাতিন ভাষায় গাওয়া হয়, আর রাষ্ট্রের পতাকায় রয়েছে হলুদ ও সাদা দুটি অংশ, যার ওপর খচিত রয়েছে সেন্ট পিটার-এর চাবি স্বর্গের চাবি।


সূত্র: রয়টার্স


এসজেড