দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনা প্রশমনে বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো যখন উদ্যোগ নিচ্ছে, তখন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ জানিয়েছেন, দেশটি যেকোনো ভারতীয় আগ্রাসনের মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত।
গত চার দিন ধরে ভারত ও পাকিস্তান সীমান্তে গুলি বিনিময় চলছে, যেখানে উভয় পক্ষই একে অপরকে উসকানির জন্য দায়ী করছে।
সোমবার রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে খাজা আসিফ বলেন, “আমরা আমাদের বাহিনীকে শক্তিশালী করেছি, কারণ এটা এখন অত্যাসন্ন মনে হচ্ছে। সেই পরিস্থিতিতে কিছু কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে, এবং আমরা তা নিয়েছি।”
তিনি জানান, পাকিস্তান সেনাবাহিনী সরকারকে সতর্ক করেছে যে ভারত আক্রমণ করতে পারে, তবে কেন এটি আসন্ন মনে করছেন তা বিস্তারিত বলেননি।
সম্প্রতি ভারতের পর্যটনকেন্দ্র পাহালগামে একটি সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর থেকেই নয়াদিল্লির অবস্থান আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে। ভারত দাবি করেছে, হামলাকারীদের মধ্যে দুজন পাকিস্তান থেকে এসেছে, যদিও কোনো প্রমাণ পেশ করা হয়নি। পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।
খাজা আসিফ আরও বলেন, পাকিস্তান সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং তার দেশ কেবলমাত্র তখনই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে যদি ‘দেশের অস্তিত্বের উপর সরাসরি হুমকি’ আসে।
পরে সামা টিভিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমাদের মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে, কারণ যুদ্ধ সামনে অপেক্ষা করছে।”
তিনি আরও বলেন, “পরবর্তী এক-দুই বা তিন-চার দিনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হতে পারে—এই সম্ভাবনা জোরালো।”
তবে পরে জিও নিউজকে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “আমি বলেছিলাম আগামী দুই থেকে চার দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি কিছু ঘটে, তাহলে এই সময়ের মধ্যেই ঘটবে, নাহলে তাৎক্ষণিক হুমকি কেটে যাবে।”
তিনি যোগ করেন, এটি কোনো নিশ্চিত ভবিষ্যদ্বাণী নয়, বরং সাম্প্রতিক পরিস্থিতির গুরুত্ব তুলে ধরার একটি ইঙ্গিত ছিল।
আসিফ জানান, পাকিস্তান ইতোমধ্যে উপসাগরীয় দেশসমূহ ও চীনসহ মিত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যদেরও অবহিত করেছে।
তিনি বলেন, “আমাদের কিছু বন্ধু—বিশেষ করে আরব উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে—উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন,” যদিও তিনি কোনো দেশের নাম বলেননি।
এদিকে সোমবার চীন, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক ও কাতার উভয় পক্ষকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়ে উত্তেজনা প্রশমনকারী সকল উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন বলেন, “চীন আশা করে উভয় দেশ সংযম দেখাবে এবং সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করবে।”
যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং ভারত ও পাকিস্তান—উভয়ের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখছে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানও সোমবার এক মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর বলেন, তার দেশ চায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমিত হোক।
এছাড়া, পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক ডারের সঙ্গে এক কথোপকথনে কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান আল-থানি দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ সমাধানের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
পাক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ডার ও আল-থানি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় ও আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন।
Thebgbd.com/NA