ভারতশাসিত কাশ্মিরে গত সপ্তাহের প্রাণঘাতী হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে হামলাকারীদের খুঁজে বের করতে ব্যাপক ধরপাকড় চালানোর ঘটনায় সোমবার জনমনে ক্ষোভ তীব্র আকার ধারণ করেছে। ভারতের শ্রীনগর থেকে এএফপি জানায়, নয়াদিল্লি ২২ এপ্রিলের ওই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে। ওই হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যা মুসলিম-অধ্যুষিত বিতর্কিত কাশ্মিরে গত পঁচিশ বছরের মধ্যে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা।
পাকিস্তান হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে একে ‘নিরর্থক’ বলে উল্লেখ করেছে এবং ভারতের যেকোনো পদক্ষেপের জবাব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। পারমাণবিক শক্তিধর এই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক বছরের পর বছর পর সবচেয়ে নিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে, যা সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা বাড়িয়েছে বলে বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন।
কাশ্মিরে হামলাকারীদের ধরতে ব্যাপক ধরপাকড় চালাচ্ছে ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনী। তারা সন্দেহভাজন বিদ্রোহীদের নয়টি বাড়ি ধ্বংস করেছে এবং প্রায় ২,০০০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে বলে একজন জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা এএফপিকে জানিয়েছেন। জম্মু ও কাশ্মিরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দিন, তাদের প্রতি কোনো করুণা দেখাবেন না, কিন্তু নিরপরাধ মানুষদের যেন বলির পাঠা না বানানো হয়।’ কাশ্মিরের একজন ফেডারেল আইনপ্রণেতা আগা রুহুল্লাহ বলেন, ‘কাশ্মির ও কাশ্মিরীদের সম্মিলিতভাবে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।’
‘ঘুরে ফিরে গ্রেপ্তার’ -
ভারতীয় পুলিশ পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার (জাতিসংঘ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন) সদস্য বলে দাবি করা তিন ব্যক্তির (দুই পাকিস্তানি ও এক ভারতীয়) বিরুদ্ধে ‘ওয়ান্টেড’ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। তাদের প্রত্যেকের গ্রেপ্তারের জন্য ২০ লাখ রুপি (২৩,৫০০ মার্কিন ডলার) পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।
ভারত নিজ দেশের কয়েকজন নাগরিককেও সন্দেহভাজন হিসেবে খুঁজছে, যাদের সম্পর্কে ধারণা করা হচ্ছে যে তারা হামলাকারীদের বিষয়ে তথ্য জানে। একজন জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘পুলিশ স্টেশনগুলোতে এক প্রকার ঘুরে ফিরে গ্রেপ্তারের চিত্র দেখা যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘কিছু মানুষকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, আবার নতুন করে অনেককে ডাকা হচ্ছে।’
সন্দেহভাজনদের বাড়িঘর রাতের আঁধারে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। পলাতক আশিফ শেখের বোন ইয়াসমিনা অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা তিন বছর ধরে আশিফের কোনো খোঁজ পাইনি, তবু আমাদের বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার ভাই যদি জড়িতও হয়, তবু তার পরিবারের অপরাধ কী? এই বাড়ি তো শুধু তার একার না।’
সূত্র: এএফপি
এসজেড