ঢাকা | বঙ্গাব্দ

ইসলামে হজের গুরুত্ব ও শর্ত

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | ০২ মে, ২০২৫
ইসলামে হজের গুরুত্ব ও শর্ত ফাইল ছবি

হজ ইসলাম ধর্মের পাঁচটি পিলারের (স্তম্ভ) মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। এটি প্রতি বছর মক্কায় অনুষ্ঠিত হয় এবং প্রতি সক্ষম মুসলমানের জন্য একবার জীবনে হজ পালন করা ফরজ। কোরআন ও হাদিসে হজের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং এর মাধ্যমে মুসলমানদের আল্লাহর নৈকট্য লাভের পথ দেখানো হয়েছে। নিচে হজ সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে যে শিক্ষাগুলি রয়েছে, তা বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।


কোরআনে হজ সম্পর্কে যে আয়াতগুলো এসেছে


হজ ফরজ: আল্লাহ তায়ালা কোরআনে স্পষ্টভাবে বলেছেন, “আর মানুষের ওপর আল্লাহর প্রতি একটি হজ পালন করা ফরজ, যদি তারা সেখানে পৌঁছানোর সক্ষমতা রাখে।” (সূরা আল-ইমরান, ৩:৯৭)


এই আয়াতে আল্লাহ পরিষ্কারভাবে ঘোষণা করেছেন যে, সক্ষম মুসলমানের জন্য হজ আদায় করা ফরজ।


হজের উদ্দেশ্য ও তার আধ্যাত্মিক গুরুত্ব 


আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তোমরা হজ এবং উমরাহ পালন কর আল্লাহর জন্য।” (সূরা আল-বাকারাহ, ২:১৯۶)


এখানে আল্লাহ হজের উদ্দেশ্য হিসেবে তাঁর জন্যই তা পালনের নির্দেশ দিয়েছেন, যা মুসলমানদের মধ্যে এক ধরনের আধ্যাত্মিক উন্নতি এবং সম্পর্ক স্থাপনের প্রতীক।


হজের সময় ও স্থান


কোরআনে আরও বলা হয়েছে, “তুমি হজের সময়গুলো পূর্ণ কর।” (সূরা আল-বাকারাহ, ২:২০৭)


এর মাধ্যমে হজের নির্দিষ্ট সময় এবং স্থান সম্পর্কে জানানো হয়েছে, যা হলো মক্কা, আরাফাত, মুজদালিফা, এবং মিনা।


হাদিসে হজের গুরুত্ব


হাদিসে হজ সম্পর্কে বহু নির্দেশনা রয়েছে, যা ইসলামের মধ্যে হজের গুরুত্ব এবং আধ্যাত্মিক সুফল তুলে ধরেছে:


হজ জীবনের একটি ফরজ ইবাদত: রাসূল (সা.) বলেন, “ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত, যার মধ্যে একটি হলো হজ।” (বুখারি ও মুসলিম)


এই হাদিসে রাসূল (সা.) ইসলামের পাঁচটি পিলারের মধ্যে হজের অবস্থান নিশ্চিত করেছেন।


হজের মাধ্যমে সব পাপ মাফ করা হয়: রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য হজ করবে এবং কোনো অশালীন কাজ বা পাপ করবে না, সে ব্যক্তি ফিরে আসবে এমনভাবে, যেমন সে তার মায়ের গর্ভ থেকে নতুন জন্মেছে।” (বুখারি)


এই হাদিসে হজের গুরুত্ব এবং এর মাধ্যমে পাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। সুতরাং, হজ এক ধরনের আধ্যাত্মিক পুনর্জন্ম।


হজ ও উমরাহর বিশেষ মর্যাদা: রাসূল (সা.) বলেন, “হজ ও উমরাহ পরস্পরের মধ্যে পাপ মোচনের মাধ্যম।” (বুখারি)


এখানে হজ এবং উমরাহ একে অপরের পরিপূরক হিসেবে বিবেচিত এবং তারা মুসলমানদের পাপ মোচনে সহায়ক।


হজের আধ্যাত্মিক ও সামাজিক উপকারিতা


আধ্যাত্মিক উপকারিতা: হজ মুসলমানদের জন্য আত্মশুদ্ধি, আল্লাহর নৈকট্য লাভ এবং পাপ মাফ করার এক বিশাল সুযোগ। হজের মাধ্যমে মুসলমানরা নিজের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করতে পারেন এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের পথ খুঁজে পান।


সামাজিক উপকারিতা: হজের মাধ্যমে মুসলমানরা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে একত্রিত হয়ে সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের অনুভূতি লাভ করেন। এটি তাদের মধ্যে জাতিগত বা সাংস্কৃতিক ভেদাভেদ দূর করে এবং একত্রে আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর অনুভূতি জাগ্রত করে।


হজ শুধু একটি ধর্মীয় ইবাদত নয়, বরং এটি মুসলমানদের জন্য আত্মশুদ্ধির, পাপ মোচনের, এবং আল্লাহর কাছ থেকে আধ্যাত্মিক উপহার লাভের এক সুবর্ণ সুযোগ। কোরআন ও হাদিসে হজের গুরুত্ব স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, এবং এটি মুসলমানদের জীবনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হিসেবে গৃহীত হয়েছে।


thebgbd.com/NIT