মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে ‘বাণিজ্যিক প্রোটেকশনিজমের পুনরুত্থান’ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে ব্রাজিল, চীনসহ ব্রিকস জোটের সদস্য রাষ্ট্রগুলো। রিও ডি জেনেইরোতে অনুষ্ঠিত দুদিনব্যাপী বৈঠকে ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক নীতিই ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
ব্রাজিলে রিও ডি জেনেইরো থেকে এএফপি জানায়, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ও রাশিয়ার সের্গেই ল্যাভরভসহ ১১ সদস্যবিশিষ্ট ব্রিকস জোটের শীর্ষ কূটনীতিকরা এই বৈঠকে অংশ নেন। আলোচনায় ইউক্রেন যুদ্ধ ও গাজা পরিস্থিতির পাশাপাশি ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে নেয়। বৈঠক শেষে ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েইরা সরাসরি ট্রাম্পের নাম উল্লেখ না করে বলেন, ‘সংরক্ষণবাদের বিরুদ্ধে জোটের সুদৃঢ় অবস্থান রয়েছে।’
জানুয়ারিতে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় ফেরার পর ট্রাম্প বিশ্বের বহু দেশের ওপর ১০ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্ক আরোপ করেন। তবে চীনের ক্ষেত্রে এটি বেড়ে দাঁড়ায় সর্বোচ্চ ১৪৫ শতাংশে। পাল্টা জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসিয়েছে বেইজিং।
২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্রিকস বর্তমানে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ছাড়াও মিশর, ইথিওপিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকে অন্তর্ভুক্ত করে। এই জোট বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী ও ৩৯ শতাংশ বৈশ্বিক জিডিপি প্রতিনিধিত্ব করে।
রিও বৈঠক এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হলো যখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ট্রাম্পের শুল্কনীতির প্রভাবে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে দিয়েছে। যদিও বৈঠক শেষে কোনও যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়নি, ব্রাজিল এককভাবে আলোচনার সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেছে।
ভিন্ন ভিন্ন বাস্তবতা
ট্রাম্পের শুল্ক-আক্রমণ থেকে আংশিকভাবে রেহাই পেয়েছে কিছু ব্রিকস সদস্য। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্রাজিলের বাণিজ্য এখনও ১০ শতাংশ শুল্কের আওতায় সীমাবদ্ধ, যা চীনের তুলনায় অনেক কম। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের স্টিল আমদানির ওপর কঠোর নীতির কারণে দ্বিতীয় বৃহত্তম সরবরাহকারী ব্রাজিলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবুও প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভার সরকার পাল্টা ব্যবস্থা না নিয়ে আলোচনার পথ বেছে নিয়েছে। ব্রাজিল স্পষ্ট করেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কৃষিপণ্যের ওপর আরোপিত ‘অপর্যাপ্ত পরিবেশগত যুক্তি’ভিত্তিক অশুল্ক বাধার বিরুদ্ধেও তাদের ক্ষোভ রয়েছে।
মুদ্রা ব্যবস্থায় পরিবর্তনের ইঙ্গিত
যুক্তরাষ্ট্রের ডলার আধিপত্য এড়িয়ে নিজস্ব মুদ্রায় লেনদেনের ইস্যুতে এবার কিছুটা সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে ব্রিকসকে। রাশিয়ায় গত বছরের সম্মেলনে এই বিষয়ে আলোচনা হলেও ট্রাম্পের হুমকির পর এবার সুর নরম করেছে জোট। তবে বৈঠকে ‘স্থানীয় মুদ্রার ব্যবহার বৃদ্ধির গুরুত্ব’ স্বীকার করেছেন তারা।
উষ্ণতা ও সংঘাত
এই বৈঠকের মূলমন্ত্র ছিল- ‘বহুপক্ষীয়তা’ ও ‘সহযোগিতা’। ইউক্রেন ও গাজা যুদ্ধ নিয়েও আলোচনা হয়েছে। গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে ৫০ দিনের বেশি চলা মানবিক সহায়তা অবরোধকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলেছে ব্রিকস। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে এবারও রাশিয়ার জোটসঙ্গীরা মস্কোর আগ্রাসনের নিন্দা না করে ‘টেকসই শান্তিচুক্তির’ ডাক দিয়েছেন।
এদিকে জলবায়ু সংকট নিয়ে ব্রাজিল হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, বৈশ্বিক বিভাজনের ফলে ‘আন্তর্জাতিক জলবায়ু কর্মপরিকল্পনা’ হুমকির মুখে পড়ছে। এবারের জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন নভেম্বরে ব্রাজিলের আমাজনে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
সূত্র: এএফপি
এসজেড