গরমের দিনে এক গ্লাস ঠাণ্ডা আখের রস—শরীর ও মন দুইই সতেজ করে দেয়। অনেকে ভাবেন, আখের রস তো প্রাকৃতিক, তাই যত খুশি খাওয়া যায়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, যেকোনো কিছু মাত্রাতিরিক্ত খেলে যেমন উপকারের বদলে অপকার হতে পারে, ঠিক তেমনই আখের রসও অতিরিক্ত খাওয়া ক্ষতিকর হতে পারে। আজকের প্রতিবেদনে থাকছে আখের রসের উপকারিতা ও অতিরিক্ত পান করার ক্ষতিকর দিকগুলো।
আখের রসের উপকারিতা
শরীর ঠাণ্ডা রাখে: আখের রস প্রাকৃতিকভাবে দেহ ঠাণ্ডা রাখে, যা গরমে ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধে সহায়ক।
যকৃত পরিষ্কার রাখে: লিভারের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং জন্ডিস প্রতিরোধে সাহায্য করে।
শক্তি জোগায়: এতে থাকা প্রাকৃতিক গ্লুকোজ শরীরকে ত্বরিত শক্তি দেয়।
হজমে সহায়তা করে: আখের রসে থাকা ফাইবার হজমে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
ইমিউন বাড়ায়: অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন থাকার কারণে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
তবে আখের রস বেশি খেলে যেসব সমস্যা হতে পারে
রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে: আখে রয়েছে উচ্চমাত্রার প্রাকৃতিক চিনি। ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য এটি বিপজ্জনক হতে পারে।
ওজন বাড়তে পারে: ঘন ঘন বা অতিরিক্ত আখের রস খাওয়া অতিরিক্ত ক্যালোরি যোগ করে, যা ওজন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
দাঁতের সমস্যা: চিনি দাঁতের এনামেল ক্ষয় করে; নিয়মিত আখের রস পান করলে দাঁতের সমস্যা হতে পারে।
পাকস্থলীতে গ্যাস ও অম্বল: অনেকের পেট গ্যাসপ্রবণ হলে বেশি আখের রস খেলে অস্বস্তি বা অম্বল হতে পারে।
অনিরাপদ হাইজিন থেকে ইনফেকশন: রাস্তার পাশে খোলা পরিবেশে বানানো আখের রস যদি অপরিষ্কার পানিতে তৈরি হয়, তবে টাইফয়েড, হেপাটাইটিস-এ জাতীয় সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।
সতর্ক পরামর্শ
দিনে ১ গ্লাস (২০০-২৫০ মি.লি.)-এর বেশি না খাওয়াই ভালো
ডায়াবেটিক রোগী বা যাদের ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স আছে, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খান
ঘরের তৈরি বা পরিষ্কার জায়গা থেকে আখের রস পান করুন
খালি পেটে নয়, হালকা খাবারের পর খান
পুষ্টিবিদ ডা. শারমিন হোসেন বলেন, “আখের রস একটি স্বাস্থ্যকর প্রাকৃতিক পানীয়, তবে মাত্রা গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই ‘প্রাকৃতিক’ ভেবে অতিরিক্ত খেয়ে ফেলেন, যেটি ডায়াবেটিস ও হজমের সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়।”
আখের রস যতই উপকারী হোক, সেটিও পরিমিত পরিমাণে খাওয়াই শ্রেয়। পরিষ্কার, ঘরে তৈরি রস খান, দিনে ১ গ্লাস—তাতেই মিলবে উপকার, বাঁচবেন অপকার থেকে।