ইসলামে মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি ন্যায়, সমতা, এবং সহানুভূতির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। ইসলাম এই সম্পর্ককে এক ধরনের পারস্পরিক দায়িত্ব এবং কর্তব্য হিসেবে বিবেচনা করেছে, যাতে মালিক তার শ্রমিকের অধিকার পূর্ণভাবে দেয় এবং শ্রমিকও তার কাজ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে করে। ইসলাম এই সম্পর্কের মধ্যে কোনো প্রকার শোষণ বা অবিচারকে অনুমোদন দেয় না, বরং আদর্শ ও মানবিক মূল্যবোধের প্রতি উৎসাহ দেয়।
মালিক-শ্রমিক সম্পর্কের ইসলামী নীতিসমূহ
শ্রমিকের অধিকার রক্ষা: ইসলামে শ্রমিকের অধিকারকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:, “তোমাদের শ্রমিকদের উপর তোমাদের অধিকার রয়েছে এবং তাদের অধিকার তোমাদের ওপর রয়েছে।” (বুখারি ও মুসলিম)
এই হাদিসে শ্রমিকদের অধিকারকে সম্মান জানানো এবং তাদের উপযুক্ত পারিশ্রমিক দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ন্যায্য মজুরি প্রদান: ইসলামে শ্রমিককে তার শ্রমের ন্যায্য মূল্য প্রদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন, “আর তোমরা শ্রমিকদের মজুরি তাদের কাজ শেষ হওয়ার আগে দিবে না।” (সূরা আল-ইসরা, ১৭:৩৪)
অর্থাৎ, কাজের পর শ্রমিককে তার কাজের সম্মানজনক মজুরি প্রদান করা উচিত এবং এ বিষয়ে কোনো প্রকার দেরি বা অবিচার করা উচিত নয়।
অত্যাচার ও শোষণ নিষিদ্ধ: ইসলামে শ্রমিকের প্রতি অত্যাচার বা শোষণ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “তোমাদের শ্রমিকরা তোমাদের ভাই। আল্লাহ তাদের তোমাদের অধীনে রেখেছেন। সুতরাং তোমরা তাদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করো।” (বুখারি)
এর মাধ্যমে মালিককে সতর্ক করা হয়েছে যেন তারা শ্রমিকদের প্রতি সদয় এবং ন্যায়পরায়ণ আচরণ করেন। কোনো ধরনের অত্যাচার বা শোষণ বরদাশত করা হবে না।
শ্রমিকের সুস্থতা এবং মর্যাদা: ইসলাম শ্রমিকের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার প্রতি মনোযোগ দেয়। মালিকের দায়িত্ব হলো শ্রমিককে তার কাজের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ ও স্বাস্থ্যকর শর্ত প্রদান করা। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “শ্রমিককে তার কাজের পর বিশ্রাম এবং সঠিক খাদ্য দেওয়া তোমাদের দায়িত্ব।” (হাদিস)
মালিকের উচিত শ্রমিকদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও যথাযথ খাদ্য সরবরাহ করা।
পরিশ্রমী শ্রমিকের পুরস্কৃত করা: ইসলামে পরিশ্রমী এবং দক্ষ শ্রমিককে তার কাজের জন্য পুরস্কৃত করার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রাসূল (সা.) বলেছেন., “তোমরা শ্রমিকদের পুরস্কৃত করো তাদের পরিশ্রমের জন্য, কারণ তাদের পরিশ্রমের ফল তোমরা ভোগ করবে।” (বুখারি)
মালিকের দিক থেকে দায়িত্ব: মালিকের কাছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে, যেগুলো পালন করা জরুরি। যেমন
শ্রমিকের প্রতি সহানুভূতি এবং সম্মান প্রদর্শন।
তার শ্রমের ন্যায্য মূল্য দেওয়া।
পরিস্কার ও নিরাপদ পরিবেশে কাজ করার সুযোগ তৈরি করা।
শ্রমিকের নৈতিক অধিকার এবং মর্যাদা রক্ষা করা।
শ্রমিকের দিক থেকে দায়িত্ব: শ্রমিকেরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে, যেগুলো পূরণ করা উচিত। যেমন:
নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করা এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করা।
মালিকের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা।
বিশ্বাস ও সততার সঙ্গে কাজ করা।
ইসলাম মালিক-শ্রমিক সম্পর্ককে একটি ন্যায্য, সমান ও মানবিক সম্পর্ক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এতে মালিকের উপর শ্রমিকদের অধিকার রয়েছে, এবং শ্রমিকও তার কাজের প্রতি নিষ্ঠা এবং কর্তব্য পালনে বাধ্য। উভয় পক্ষের দায়িত্ব হলো একে অপরকে সম্মান দেওয়া এবং ইসলামি নীতিমালা অনুসরণ করে একটি ন্যায়সঙ্গত ও মানবিক পরিবেশ তৈরি করা। এই সম্পর্কের মধ্য দিয়ে সামাজিক ন্যায্যতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।
thebgbd.com/NIT