রাজধানী ঢাকায় ফেরার পথে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় হামলার শিকার হয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ। রোববার রাতে এই হামলার ঘটনা ঘটে। গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে গণঅভ্যুত্থানের পর এটি ছিল তার ওপর পঞ্চম হামলা। এই অভ্যুত্থানের অন্যতম সমন্বয়ক হিসেবে পরিচিত হাসনাতের ওপর ধারাবাহিক হামলার ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে এবারও নাম এসেছে আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গাজীপুরে ১০-১২ জন যুবক মোটরসাইকেলে এসে তার গাড়িতে হামলা চালায়। হামলার ফলে গাড়ির কাচ ভেঙে যায় এবং হাসনাত রক্তাক্ত হন। তার আহত হাতের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনার প্রতিবাদে গাজীপুরের পাশাপাশি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) সূত্রে জানা গেছে, হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন দুজনকে আটক করা হয়েছে। তারা হলেন গাজীপুর মহানগরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা মো. নিজাম উদ্দিন এবং কাশিমপুর থানা শেখ রাসেল শিশু কিশোর পরিষদের সভাপতি মাসুম আহসেদ দিপু। জিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) রবিউল হাসান জানান, ঘটনার পরপরই পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে অভিযানের নির্দেশ দেন এবং দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে দুজনকে আটক করা হয়। এ ছাড়া হামলায় জড়িত অন্যদেরও শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এর আগে গত ২৭ নভেম্বর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে গাড়িচাপা দিয়ে হত্যাচেষ্টার শিকার হন হাসনাত ও আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম। অভিযোগ ওঠে, শহীদ অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের কবর জিয়ারত করে ফেরার পথে চুনতি ইউনিয়নের হাজি রাস্তার মোড়ে একটি ট্রাক তাদের গাড়িবহরে ধাক্কা দেয়। এতে বহরে থাকা একটি প্রাইভেটকার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কেউ আহত হননি। পরে পুলিশ ট্রাকচালককে আটক করে এবং ট্রাকটি জব্দ করা হয়। ওই দিনই তারা সাইফুল ইসলাম আলিফের দ্বিতীয় জানাজায় অংশ নিয়ে কবর জিয়ারত করেছিলেন।
গত ২৫ আগস্ট সচিবালয় এলাকায় আনসার সদস্যদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের সময়ও গুরুতর আহত হন হাসনাত। তখন তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং পরে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হন। ওই দিন সচিবালয়ে হাসনাত ও সারজিসকে আটক রাখার খবরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সেখানে গেলে আনসার সদস্যরা তাদের লাঠিপেটা করেন, পরে শিক্ষার্থীরা পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখান। সেনাবাহিনী ও পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এছাড়া, ২৮ নভেম্বর মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দুইবার সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন হাসনাত। রাজধানীর মাতুয়াইল এলাকায় একটি ট্রাক তার গাড়ির পেছনে ধাক্কা দেয় এবং কিছুক্ষণ পর গুলিস্তান এলাকায় আরেকটি মিনি ট্রাক তার গাড়িকে ধাক্কা দেয়। এ দুটি ঘটনাকেই তিনি সন্দেহজনক ও হত্যাচেষ্টা হিসেবে বর্ণনা করেন। এই ঘটনাগুলোর ছবি ও তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করেন আন্দোলনের অন্য নেতারাও।
ধারাবাহিক হামলার এসব ঘটনায় স্পষ্ট হয়ে উঠছে, গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া নেতাদের ওপর একের পর এক আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে এবং এ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে সমর্থক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে।
thebgbd.com/NA