চলতি বছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে ৩৯ কোটি ৬০ লাখ বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপানোকে ঘিরে দেড় হাজার কোটি টাকারও বেশি দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে—প্রেস মালিকদের একটি সিন্ডিকেট এবং কাগজ মিল মালিকদের আরেক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এই অর্থ লোপাট হয়েছে। এতে সরাসরি জড়িত ছিলেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)-এর কিছু কর্মকর্তা ও সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী গোষ্ঠী।
এনসিটিবির নির্ধারিত প্রাক্কলিত দরের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি দামে বই ছাপিয়েছে বেশিরভাগ ছাপাখানা। সরকারি ক্রয় বিধিমালা অনুযায়ী টেন্ডার করা হলেও প্রায় ৪০ শতাংশ কাজ পেয়েছে একক দরদাতারা। ফলে প্রতিযোগিতা না থাকায় দাম নিয়ন্ত্রণের সুযোগও ছিল না এনসিটিবির। ধারণা করা হচ্ছে, এই অতিরিক্ত দরেই সরকারের গচ্চা গেছে প্রায় ৭৮৩ থেকে ৮০০ কোটি টাকা।
আন্তর্জাতিক বাজারে কাগজের দাম না বাড়লেও দেশের কাগজ মিল মালিকরা পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের মৌসুমে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে প্রতি টনে ৩০ হাজার টাকা করে বাড়তি দাম আদায় করেছে। প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার টন কাগজের বিপরীতে অতিরিক্ত ৩৪৫ কোটি টাকা নিয়েছে এই সিন্ডিকেট। অথচ চাহিদামতো কাগজ পায়নি ১১৬ ছাপাখানার অনেকেই। ফলে বই ছাপায় বিলম্ব হয়, শিক্ষার্থীদের হাতে দেরিতে পৌঁছায় পাঠ্যবই।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী কাগজের মান (পুরুত্ব, উজ্জ্বলতা, টেকসই ক্ষমতা) নিশ্চিত করার কথা থাকলেও প্রায় ২০ শতাংশ বই ছাপানো হয়েছে নিম্নমানের কাগজে। এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অনেক প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত শর্ত না মানলেও তাদের বিল ছাড় করা হয়েছে, এমনকি কালো তালিকাভুক্ত প্রেসও রহস্যজনকভাবে মুক্তি পেয়েছে। এই নিম্নমানের বই সরবরাহ করে মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় ৩৫৫ কোটি টাকা লভ্যাংশ নিয়েছে।
এনসিটিবির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান এক সাক্ষাৎকারে বলেন, সময়ের অভাব এবং পুরনো কারিকুলামে ফেরার কারণে অতিরিক্ত খরচ হয়েছে। তার দাবি, দ্রুত টেন্ডার করতে গিয়ে কিছু ক্ষেত্রে বেশি দামে কাজ দেওয়া হয়। তবে বাস্তবে দেখা গেছে, সিন্ডিকেটই পুরো প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করেছে।
বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতি বলছে, এনসিটিবির প্রাক্কলিত দর বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। কাগজ, ব্যাংক ঋণ, ট্যাক্সসহ সব খরচ বেড়েছে, তাই দরও বেড়েছে। তাদের দাবি, এটা কোনো সিন্ডিকেট নয় বরং বাস্তবতা।
কাগজ সংকট ঠেকাতে এবং সিন্ডিকেট ভাঙতে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে শুল্কমুক্ত কাগজ আমদানির প্রস্তাব দিয়েছে ছাপাখানাগুলোর একটি অংশ। তবে এনসিটিবির রুটিন দায়িত্বে থাকা চেয়ারম্যান অধ্যাপক রবিউল কবীর জানান, এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
thebgbd.com/NA