ঢাকা | বঙ্গাব্দ

সামরিক ও পারমাণবিক শক্তিতে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কে এগিয়ে?

এই হামলার সূত্রপাত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগাম শহরে বন্দুকধারীদের হামলার পর। ওই হামলায় ২৫ জন পর্যটক এবং একজন স্থানীয় টাঙ্গাওয়ালা নিহত হন।
  • অনলাইন ডেস্ক | ০৮ মে, ২০২৫
সামরিক ও পারমাণবিক শক্তিতে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কে এগিয়ে? ফাইল ছবি

কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার ইস্যুকে কেন্দ্র করে আবারও চরম উত্তেজনায় জড়িয়েছে পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তান। গত মঙ্গলবার (৬ মে) দিবাগত রাতে ভারত ‘অপারেশন সিন্ধুর’ নামে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এতে কমপক্ষে ২৬ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে তিন বছরের একটি শিশুও রয়েছে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে।


এই হামলার সূত্রপাত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগাম শহরে বন্দুকধারীদের হামলার পর। ওই হামলায় ২৫ জন পর্যটক এবং একজন স্থানীয় টাঙ্গাওয়ালা নিহত হন।


এর জেরে ভারতের পক্ষ থেকে ‘সন্ত্রাসী ঘাঁটি’ টার্গেট করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয় বলে দাবি করা হয়। হামলায় পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের চারটি স্থানে এবং পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের মুজাফফরাবাদ, কোটলি ও ভিম্বার লক্ষ্যবস্তু হয়।


পাকিস্তান পাল্টা হামলায় ভারত-অধিকৃত কাশ্মীরে অন্তত ১০ জন বেসামরিক লোক নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এই সংঘর্ষ ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের সবচেয়ে জনবহুল অঞ্চল পাঞ্জাবে ভারতের হামলার ঘটনা হিসেবে নজির গড়েছে।


দুই দেশের সামরিক ও পারমাণবিক শক্তির তুলনা


উভয় দেশই বিশ্বের বৃহৎ সামরিক শক্তি সমৃদ্ধ। গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার–এর ২০২৫ সালের সামরিক শক্তির সূচকে ভারত রয়েছে চতুর্থ, আর পাকিস্তান বারোতম অবস্থানে।


সামরিক ব্যয়


ভারত ২০২৪ সালে সামরিক খাতে ব্যয় করেছে ৮৬ বিলিয়ন ডলার, যা দেশটির জিডিপির ২.৩%। পাকিস্তান ব্যয় করেছে ১০.২ বিলিয়ন ডলার, যা জিডিপির ২.৭%। 


সেনাসংখ্যা ও অস্ত্র


ভারতের মোট সেনাসংখ্যা ৫১ লাখ, পাকিস্তানের ১৭ লাখ। ভারতের রয়েছে ২,২২৯টি সামরিক বিমান, ৩,১৫১টি ট্যাংক ও ২৯৩টি নৌযান। পাকিস্তানের রয়েছে ১,৩৯৯টি বিমান, ১,৮৩৯টি ট্যাংক, ও ১২১টি নৌযান।


পারমাণবিক অস্ত্র


দুই দেশই ১৯৯৮ সালে পরমাণু পরীক্ষা চালিয়ে নিজেদের পারমাণবিক শক্তিধর হিসেবে ঘোষণা করে।


২০২৩ সালে ভারত পারমাণবিক অস্ত্রে খরচ করেছে ২.৭ বিলিয়ন ডলার এবং পাকিস্তান ১ বিলিয়ন ডলার।


ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি চীন ও পাকিস্তানকে লক্ষ্য করে উন্নত করা হচ্ছে; রাশিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে নৌ ও সাবমেরিনভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়নের কাজ চলছে।


পাকিস্তান চীনের প্রযুক্তিগত সহায়তায় স্বল্প ও মধ্যম পাল্লার মোবাইল ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে, যা ভারতের শহরগুলোকে লক্ষ্য করে প্রস্তুত।


অস্ত্র আমদানি


ভারত ২০২০-২০২৪ সময়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারক। রাশিয়া, ফ্রান্স, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র এর প্রধান উৎস। পাকিস্তান একই সময়ে পঞ্চম বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারক; এর ৮১ শতাংশ অস্ত্র এসেছে চীন থেকে।


ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট


১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত ভাগ হওয়ার পর থেকেই কাশ্মীর নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। ভারত, পাকিস্তান ও চীন—তিন দেশই কাশ্মীরের অংশবিশেষ নিয়ন্ত্রণ করে। পুরো অঞ্চল দাবি করে ভারত, আর ভারত-নিয়ন্ত্রিত অংশ দাবি করে পাকিস্তান।


এই বিরোধের জেরে দুই দেশ চারটি যুদ্ধ করেছে—সবচেয়ে সাম্প্রতিক ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধ। ২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার পর দুই দেশের মধ্যে বিমান হামলা ও পাল্টা হামলা হয়েছিল।


বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ায় আবারও এক উত্তেজনাকর ও অনিশ্চিত অবস্থা তৈরি হয়েছে। পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত দুই দেশের এই সংঘর্ষ বিশ্ব নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য বড় ধরনের হুমকি বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।


thebgbd.com/NIT