যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বৃহস্পতিবার একটি নতুন বাণিজ্য চুক্তি প্রকাশ করেছেন, যেটিকে তারা ‘ঐতিহাসিক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। এটি ট্রাম্পের শুল্কনীতি চালুর পর তার প্রথম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তি। ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটিশ বিলাসবহুল গাড়ির ওপর শুল্ক কমাবে এবং ব্রিটিশ স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর সম্পূর্ণ শুল্ক তুলে নেবে। তবে ব্রিটিশ পণ্যের ওপর মোটামুটি ১০ শতাংশ শুল্ক বজায় থাকবে।
হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিস থেকে ফোনে স্টারমারকে এ ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাজ্যও পাল্টা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের গরুর মাংস ও অন্যান্য কৃষিপণ্যের বাজার উন্মুক্ত করবে। যদিও বিস্তারিত তথ্য চুক্তিতে নেই, ট্রাম্প একে ভবিষ্যতে চীনসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে চুক্তির জন্য ‘মডেল’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আমরা একটি যুগান্তকারী বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছেছি। এতে মার্কিন রপ্তানির জন্য কয়েক বিলিয়ন ডলারের অতিরিক্ত বাজার খুলে যাবে।’ স্টারমার জানান, বুধবার রাতে ফুটবল ম্যাচ দেখতে দেখতে ট্রাম্প তাকে ফোন করে চুক্তির অনুমোদন দেওয়ার কথা জানান। স্টারমার বলেন, ‘আজ একটি ঐতিহাসিক দিন। আবারও ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ বিজয়ের স্মরণে (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে বিজয় দিবস) এমন একটি চুক্তি সত্যিই তাৎপর্যপূর্ণ।'
‘জেমস বন্ড’-এর আশঙ্কার কিছু নেই
ব্রিটেন শুরু থেকেই ট্রাম্পের শুল্ক এড়াতে নানা কূটনৈতিক চেষ্টা চালায়। স্টারমার ফেব্রুয়ারিতেই হোয়াইট হাউজে এসে ট্রাম্পকে রাজা তৃতীয় চার্লসের পক্ষ থেকে দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফরের আমন্ত্রণ দেন। চুক্তির ফলে ব্রিটিশ বিলাসবহুল গাড়ির ওপর যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির শুল্ক ২৭.৫ শতাংশ থেকে কমে ১০ শতাংশে নেমে আসবে। এতে রোলস রয়েস ও জাগুয়ারসহ প্রায় এক লাখ গাড়ি উপকৃত হবে বলে জানান ট্রাম্প।
স্টারমার ইংল্যান্ডের মিডল্যান্ডসে জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার কারখানা পরিদর্শনকালে বলেন, ‘এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য।’ তবে যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি নির্মাতারা বলছেন, এই চুক্তি কানাডা ও মেক্সিকোর সঙ্গে যুক্ত কোম্পানিগুলোর জন্য ক্ষতিকর। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য ব্রিটেনে প্রবেশ পেলেও, ব্রিটিশ সরকার আশ্বস্ত করেছে যে এতে খাদ্যমান কমানো হবে না—বিশেষত ক্লোরিনজাত মুরগি বা হরমোন-যুক্ত গরুর মাংসের বিষয়ে জনমনে যে উদ্বেগ আছে। এছাড়া ব্রিটিশ স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর সাম্প্রতিক ২৫ শতাংশ শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হবে।
চুক্তির ঘোষণায় বিশ্ব শেয়ারবাজারে ইতিবাচক সাড়া মিললেও অনেক বিষয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। ট্রাম্প বলেন, ‘জেমস বন্ডকে দুশ্চিন্তা করতে হবে না’—সিনেমার ওপর ১০০ শতাংশ শুল্কের হুমকি দিলেও ব্রিটেন এতে ছাড় পাবে কি না, তা স্পষ্ট করেননি।ডিজিটাল সার্ভিস এবং প্রযুক্তি খাতে চুক্তিতে কিছু বলা হয়নি। মার্কিন প্রশাসন চাইছে, ব্রিটেনের ‘ডিজিটাল সার্ভিস ট্যাক্স’ যেন গুগল-অ্যাপলের মতো মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানির ওপর না পড়ে।
‘পুরোপুরি সুবিধাজনক চুক্তি’
উভয় পক্ষ জানিয়েছে, ভবিষ্যতে একটি বিস্তৃত চুক্তির জন্য আলোচনা চলবে। তবে ট্রাম্প দাবি করেন, ‘এটি একটি সর্বোচ্চ পর্যায়ের চুক্তি।’ চুক্তিটি স্টারমারের জন্য একটি বড় অর্জন, কারণ এর আগে তিনি ভারতের সঙ্গে বড় একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন—ইইউ ছাড়ার পর যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় চুক্তি এটি।
২০১৬ সালের ব্রেক্সিট গণভোটের পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তির জন্য ব্রিটেন বহুবার চেষ্টা করলেও এটি বাস্তবায়িত হয়নি। এদিকে ট্রাম্প নিজেও রাজনৈতিকভাবে চাপে ছিলেন। ‘মুক্তির দিন’ ঘোষণার মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে একতরফা শুল্ক আরোপের পর তাঁকে একটি বড় কূটনৈতিক সাফল্য প্রমাণ করতে হচ্ছিল। ট্রাম্প বলেন, ‘আরও তিনটি চুক্তি আমরা কাজ করছি। ব্রিটেনের সঙ্গে এই চুক্তিটি অন্যদের জন্য পথ দেখাবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যসচিব হাওয়ার্ড লুটনিক বলেন, 'লিবারেশন ডে' শুল্ক অনুযায়ী, অধিকাংশ দেশকে এখনও ১০ শতাংশ বা তার বেশি শুল্ক গুণতে হবে। শুধু ‘সেরা’ দেশগুলোকেই ছাড় দেওয়া হবে। আগামী সপ্তাহান্তে সুইজারল্যান্ডে মার্কিন ও চীনা কর্মকর্তাদের মধ্যে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে, যা ট্রাম্পের শুল্ক নীতির পর দুই দেশের প্রথম আনুষ্ঠানিক সংলাপ।
সূত্র: এএ্ফপি
এসজেড