ঢাকা | বঙ্গাব্দ

নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা, চলছে গোলাগুলি

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় পাকিস্তানের গোলায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন ভারতীয় নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।
  • অনলাইন ডেস্ক | ১০ মে, ২০২৫
নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা, চলছে গোলাগুলি ফাইল ছবি

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার উত্তেজনা নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। জম্মু ও কাশ্মীরের উরি এবং পুঞ্চ অঞ্চলে পাকিস্তানি সেনাদের গোলাবর্ষণের পরিপ্রেক্ষিতে সীমান্তজুড়ে দুপক্ষের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি চলছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় পাকিস্তানের গোলায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন ভারতীয় নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। পাল্টা জবাবে ভারতও ভারী কামান দিয়ে গোলাবর্ষণ করছে।


এর আগে, ভারত অভিযোগ করে যে, বৃহস্পতিবার রাতে পাকিস্তান ৩০০ থেকে ৪০০ ড্রোন পাঠিয়ে জম্মু-কাশ্মীরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা চালায়, যা সফলভাবে প্রতিহত করা হয়েছে বলে দাবি করে ভারত। তবে পাকিস্তান তাদের পক্ষ থেকে এমন কোনো হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।


এদিকে পাকিস্তান কূটনৈতিক উপায়ে উত্তেজনা কমানোর আশায় রয়েছে বলে জানালেও, এক শীর্ষ কর্মকর্তা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন—কূটনীতি ব্যর্থ হলে পাল্টা হামলা হবে অনিবার্য। দুই দেশের এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরবসহ একাধিক দেশ উত্তেজনা কমাতে মধ্যস্থতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।


অবশ্য, চলতি সপ্তাহে ভারত ও পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্যায়ে হটলাইন চালুর পর বড় ধরনের বিমান বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বন্ধ হলেও ড্রোন ও বিস্ফোরকের মাধ্যমে হামলার মাত্রা বেড়েছে। পাকিস্তানের দাবি, শুক্রবার ভোরে ভারত তাদের ভূখণ্ডে আরেকটি ড্রোন হামলা চালিয়েছে।


সীমান্ত এলাকার পরিস্থিতি নিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর থাকা সাধারণ মানুষ চরম আতঙ্কে রয়েছে। ভারতের চাকোঠি সেক্টরের বাসিন্দা মুখতার কুরেশির ভাষ্য, “সারা রাত গোলাগুলি চলছে, আমাদের গ্রাম বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠেছে।”


দুই দেশ একে অপরের ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করলেও, এসব ঘটনায় হতাহতের নিশ্চিত কোনো তথ্য মেলেনি। তবে পাল্টাপাল্টি হামলা ও তথ্য প্রচারের মাধ্যমে আরেকটি যুদ্ধ শুরু হয়েছে—তথ্যযুদ্ধ। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, সংঘাত এখন শুধু সীমান্তে নয়, অনলাইন এবং প্রচারমাধ্যমেও চলছে।


বিশ্লেষকরা বলছেন, এই মুহূর্তে সংঘাতের মোড় স্পষ্ট নয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেওয়া ‘অপারেশন সিন্দূর’ নামের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। কারণ, রাতের আকাশে ছড়িয়ে পড়া লাল আলো এখন আবেগ নয়, বরং প্রতিহিংসা এবং অমানবিকতার প্রতীক হয়ে উঠেছে।


যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান সতর্ক করে বলেন, “সবচেয়ে বড় বিষয় এখন পাকিস্তানের সিদ্ধান্ত। তারা যদি প্রতিশোধের পথে না গিয়ে উত্তেজনা প্রশমন করে, তাহলে সংকট এড়ানো সম্ভব হতে পারে। তবে পাল্টা হামলার সিদ্ধান্ত নিলে তা সরাসরি সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে নিয়ে যাবে।”


বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের সাবেক চেয়ারম্যান মুন্সি ফয়েজ মনে করেন, দুই দেশ যুদ্ধে না জড়ালেই বরং তা বিস্ময়ের বিষয় হবে। বিশেষ করে যদি বর্তমান সংঘাত যুক্তরাষ্ট্র-চীন বৈরিতার প্রতিফলনে রূপ নেয়, তাহলে পুরো অঞ্চল নতুন সংকটে পড়তে পারে।


সব মিলিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের পুরনো বৈরিতা এখন নতুন এক দ্বন্দ্বে রূপ নিচ্ছে। সামরিক শক্তি, কূটনীতি, এবং তথ্যপ্রবাহ—তিনটি সমান্তরাল অক্ষের ওপর এখন দাঁড়িয়ে আছে দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশের ভবিষ্যৎ।


সূত্র: ডন, এনডিটিভি, বিবিসি, রয়টার্স, এপি


thebgbd.com/NIT