দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজয়ের প্রসঙ্গ টেনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শুক্রবার ইউক্রেনে রাশিয়ার বিজয় সুনিশ্চিত বলে মন্তব্য করেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসিদের বিরুদ্ধে বিজয়ের বার্ষিকী উপলক্ষে মস্কোর রেড স্কয়ারে আয়োজিত সামরিক প্যারেডে প্রধান মিত্রদের উপস্থিতিতেই তিনি এ মন্তব্য করেন।
মস্কো থেকে এএফপি জানায়, চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সঙ্গে প্যারেডে বসে পুতিন হাজার হাজার সেনা ও ট্যাংক-ড্রোনসহ বিভিন্ন অস্ত্রের প্রদর্শনী প্রত্যক্ষ করেন। প্রদর্শিত সেনাদের অনেকে ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
প্যারেডে দেওয়া ভাষণে পুতিন বলেন, ‘বিশেষ সামরিক অভিযানে অংশ নেওয়া সেনাদের নিয়ে পুরো জাতি, সমাজ ও জনগণ গর্ববোধ করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘তাদের সাহসিকতা ও দৃঢ়তার জন্য আমরা গর্বিত। এই মনোবলই আমাদের সবসময় বিজয় এনে দিয়েছে।’
সাবেক কেজিবি কর্মকর্তা পুতিন আরও বলেন, ‘রাশিয়া নাৎসিবাদ, রুসোফোবিয়া ও ইহুদিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে এক অপ্রতিরোধ্য প্রাচীর হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।’ পশ্চিমা দেশগুলো ও স্বাধীন বিশ্লেষকদের বরাত দিয়ে কিয়েভ ও তার মিত্ররা বারবার রাশিয়ার ‘ইউক্রেনকে ডি-নাৎসিফাই করার’ দাবি প্রত্যাখ্যান করে আসছে।
নিরাপত্তা, বিদেশি অংশগ্রহণ ও সামরিক প্রদর্শনী
প্যারেড ঘিরে মস্কোয় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। বিলাসবহুল শপিং মলগুলোর ছাদে স্নাইপার মোতায়েন করা হয় এবং মোবাইল ইন্টারনেট সেবা সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়।
সরকারি বার্তা সংস্থার বরাত দিয়ে জানানো হয়, ১১ হাজার সেনার মধ্যে প্রায় দেড় হাজারই ইউক্রেন যুদ্ধফেরত। প্যারেডে প্রথমবারের মতো আক্রমণাত্মক ড্রোন প্রদর্শিত হয় এবং আগের বছরের তুলনায় ট্যাংকের সংখ্যাও বেশি ছিল।
প্যারেড শেষে পুতিন উত্তর কোরিয়ার একদল জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাকে শুভেচ্ছা জানান। তারা পশ্চিমাঞ্চলীয় কুর্স্ক অঞ্চল পুনর্দখলে রাশিয়াকে সহায়তা করেছে বলে দাবি করা হয়। চীনা সেনারাও প্যারেডে অংশ নেয়। একদিন আগেই শি ও পুতিনের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
ইতিহাসের পুনর্নির্মাণ ও রাজনৈতিক বার্তা
পুতিন নিজেকে ‘বিজয়ীদের উত্তরসূরি’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং মূলত রাশিয়াই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মূল বিজয়ী। এ প্রেক্ষাপটে তিনি রুশ জনগণের মধ্যে দেশাত্মবোধ ও ঐতিহাসিক গর্ব জাগাতে চেয়েছেন। ইতিহাসবিদরা বলছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের ২ কোটিরও বেশি নাগরিক নিহত হন, যার মধ্যে ছিলেন রাশিয়ান, বেলারুশিয়ান, ইউক্রেনীয়, মধ্য এশীয়সহ বহু জাতিগোষ্ঠী।
সূত্র: এএফপি
এসজেড