ঢাকা | বঙ্গাব্দ

ফ্রান্স-পোল্যান্ড বন্ধুত্ব চুক্তি সই

যদি কোনো পক্ষের ভূখণ্ডে সশস্ত্র আগ্রাসন ঘটে, তবে অপর পক্ষ সামরিক সহায়তাসহ পারস্পরিক সহায়তা প্রদান করবে।
  • অনলাইন ডেস্ক | ১০ মে, ২০২৫
ফ্রান্স-পোল্যান্ড বন্ধুত্ব চুক্তি সই পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।

পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদারে ফ্রান্স ও পোল্যান্ড শুক্রবার একটি নতুন সহযোগিতা ও বন্ধুত্বচুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এতে আক্রমণের শিকার হলে একে-অন্যকে সামরিক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।


ফ্রান্সের ন্যান্সি থেকে এএফপি জানায়, ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুই সদস্য দেশ ফ্রান্স ও পোল্যান্ডের এই চুক্তি জার্মানি, ইতালি ও স্পেনের সঙ্গে ফ্রান্সের আগের চুক্তির আদলে তৈরি। ফ্রান্সের পূর্বাঞ্চলীয় শহর ন্যান্সিতে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।


চুক্তি স্বাক্ষরের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মাক্রোঁ বলেন, এটি একটি ‘পারস্পরিক প্রতিরক্ষা’ ধারা যুক্ত চুক্তি এবং এটি ন্যাটো ও ইইউ-এর বিদ্যমান সুরক্ষা ব্যবস্থাকে ‘পরিপূরক’ হিসেবে আরও শক্তিশালী করবে। তিনি বলেন, ‘এটি ন্যাটো বা ইইউ’র বিকল্প নয় বরং বিদ্যমান ব্যবস্থার পরিপূরক।’


পোলিশ প্রধানমন্ত্রী টাস্ক বলেন, চুক্তির নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ধারা এমন পরিস্থিতির কথা বলছে যেখানে আমাদের যে কোনো একটি দেশের ওপর হামলা হলে অন্যটি সহায়তা করবে। চুক্তির পাঠ্য অংশে বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো পক্ষের ভূখণ্ডে সশস্ত্র আগ্রাসন ঘটে, তবে অপর পক্ষ সামরিক সহায়তাসহ পারস্পরিক সহায়তা প্রদান করবে।’


ফ্রান্স ও পোল্যান্ডের মধ্যে স্বাক্ষরিত এ প্রতিরক্ষা চুক্তি ইউরোপের নিরাপত্তা কাঠামোয় একটি তাৎপর্যপূর্ণ সংযোজন। ন্যাটো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিদ্যমান প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি এই ধরণের দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও জোটগত প্রস্তুতি আরও শক্তিশালী করবে।


ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার ৩২টি দেশের সামরিক জোট ন্যাটোর মূলনীতি হল ‘একটির ওপর আক্রমণ মানে সবার ওপর আক্রমণ’ (ধারা ৫)। তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের মতো নতুন হুমকির মুখে সদস্য রাষ্ট্রগুলো নিজেদের মধ্যে আলাদা প্রতিরক্ষা চুক্তির মাধ্যমে আরও সক্রিয় প্রস্তুতি নিচ্ছে।


ইইউ যদিও একটি সামরিক জোট নয়, তবে সম্প্রতি এর সদস্যদের মধ্যে ‘স্ট্র্যাটেজিক কম্পাস’ নীতি, ‘পেসকো’ ইত্যাদির মাধ্যমে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।ফ্রান্স ইতিমধ্যে জার্মানি, ইতালি ও স্পেনের সঙ্গে অনুরূপ পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে।


পোল্যান্ডের সঙ্গে নতুন এই চুক্তি পূর্ব ইউরোপীয় ফ্রন্টে ফ্রান্সের সক্রিয় ভূমিকার ইঙ্গিত দেয়। পোল্যান্ড রাশিয়ার সরাসরি প্রতিবেশী ও অন্যতম কৌশলগত অবস্থানে রয়েছে, তার সঙ্গে ফ্রান্সের এ ধরনের সামরিক অঙ্গীকার ইউরোপীয় ঐক্যকে রাজনৈতিক ও সামরিকভাবে একধাপ এগিয়ে নিল।


এই চুক্তি স্পষ্টতই রাশিয়ার প্রতি একটি কূটনৈতিক ও প্রতিরক্ষা বার্তা। এটি বোঝায় যে ইউরোপের বড় শক্তিগুলো এখন শুধু জোটের ওপর নির্ভর না করে নিজস্ব উদ্যোগেও পারস্পরিক প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি নিচ্ছে।


পোল্যান্ড এই চুক্তির মাধ্যমে পশ্চিম ইউরোপের বড় শক্তিগুলোর সামরিক সহযোগিতা নিশ্চিত করল, যা রুশ হুমকির বিরুদ্ধে তাদের অবস্থানকে আরও জোরালো করবে। একইসঙ্গে এটি ওয়াশিংটনের প্রতি অতিনির্ভরশীলতা কমিয়ে প্যারিসের সঙ্গে সরাসরি সামরিক অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার একটি পদক্ষেপ।


সূত্র: এএফপি


এসজেড