ভারত-নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে ২২ এপ্রিলের প্রাণঘাতী হামলার পর থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করেছে। ওই হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার পর দুই দেশ একে অপরের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন, কূটনৈতিক প্রচার এবং তথ্যযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে।
গত তিন দিনে দুই পক্ষই একাধিক সামরিক স্থাপনায় হামলার দাবি করেছে। এমনকি ভারতে তিনটি পাকিস্তানি বিমানঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অভিযোগও উঠেছে। যদিও দুই দেশ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করেনি, বিশ্লেষকেরা বলছেন—এটি কার্যত এক ধরনের যুদ্ধাবস্থা।
এমন পরিস্থিতিতে ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরান সঙ্গে কথা বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান। তিনি বলেন, ‘এটা স্পষ্ট যে দুই দেশ কার্যত যুদ্ধের মধ্যে রয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে ভুল তথ্য এবং উস্কানি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।’
কুগেলম্যান বলেন, আগের ভারত-পাকিস্তান সংকটের তুলনায় এবার যুদ্ধের ধোঁয়াশা অনেক গভীর। এর একটি কারণ হলো সামাজিক মাধ্যম এবং ভুল তথ্য। তাই ঠিক কী ঘটছে তা জানা সত্যিই কঠিন। গত কয়েক ঘণ্টায় কী ঘটেছে এবং কী ঘটেনি, তা নিয়ে অনেক অভিযোগ উঠেছে। তবে আমরা যা জানি তা হলো, উভয় দেশ একে অপরের সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে এবং এটি নিশ্চিতভাবে উত্তেজনা বাড়াবে।
তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা, বিমানবাহিনী একটি ডগফাইটের মুখোমুখি হচ্ছে। আমার মনে হয় ১৯৯৯ সালের পর এই প্রথম ভারত ও পাকিস্তান, দুটি পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র, যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে।’
বাংলাদেশ সরকার এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া না জানালেও কূটনৈতিক মহলে গভীর উদ্বেগ বিরাজ করছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি সম্ভাব্য পারমাণবিক যুদ্ধ শুধু উপমহাদেশ নয়, গোটা পৃথিবীর নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে নাড়িয়ে দিতে পারে।
বাংলাদেশের জন্য এ সংঘাতের ঝুঁকি একাধিক মাত্রায়—অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং মানবিক। যদি সংঘাত দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে সীমান্তে উদ্বাস্তু সংকট দেখা দিতে পারে, তেমনি দক্ষিণ এশিয়ায় স্থিতিশীলতাও মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হতে পারে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিশ্ব এখন এক অস্বস্তিকর বাস্তবতার মুখোমুখি। শুধু ভারত ও পাকিস্তানের প্রায় ১৬০ কোটি মানুষের জন্যই নয় বরং পুরো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্যই এই পরিস্থিতি গভীর উদ্বেগের। কারণ, যদি এটি সর্বাত্মক যুদ্ধে রূপ নেয়, তবে তা হবে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দুটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের সরাসরি যুদ্ধ।
উল্লেখ্য, দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই প্রতিবেশী এর আগে ১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধে জড়িয়েছিল, তবে তা ছিল একটি সীমিত সংঘাত। বর্তমানে চলমান উত্তেজনা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বিস্তৃত, জটিল এবং বিপজ্জনক। ভারতের ধারাবাহিক হামলার পর পাকিস্তানও পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় সামরিক অভিযান চালাচ্ছে, যাকে ‘অপারেশন বুনিয়ানুম মারসৌস’ নামে ঘোষণা করেছে পাকিস্তান।
তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এখন সময় আন্তর্জাতিক মহলের সক্রিয় হস্তক্ষেপ, যাতে ভারত ও পাকিস্তান সংযত হয় এবং আলোচনার টেবিলে ফিরে আসে।
thebgbd.com/NA