ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সশস্ত্র সংঘাতের ফলে নিয়ন্ত্রণরেখার (LoC) দুই পাশের সীমান্তবর্তী গ্রাম ও শহরে চরম আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। গোলাবর্ষণের ভয়াবহতায় ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে সাধারণ মানুষ। অনেক এলাকা প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়েছে, ধ্বংস হয়েছে বহু ঘরবাড়ি।
বিবিসির বরাত দিয়ে জানা গেছে, সীমান্তের ভারতীয় অংশের কাশ্মীরের উরি, কুপওয়ারা এবং পুঞ্চ জেলাগুলোতে গোলার আঘাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
কুপওয়ারার ক্রালপোরা গ্রামের বাসিন্দা তনভির আহমেদ বলেন, “জীবনে এই প্রথম আমাদের গ্রামে গোলা এসে পড়ল।” শুক্রবার ভোর ৫টা নাগাদ তার বাড়িতে একটি গোলা এসে পড়ে। এতে তার একটি ট্রাক ও মাটি কাটার যন্ত্র ধ্বংস হয়। পরিবারটি হামলার ঠিক আগে মাত্র ৫০০ মিটার দূরের একটি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে সরে গিয়েছিল। ওই গ্রামে বেসামরিকদের জন্য কোনো বাংকার নেই।
উরির বাসিন্দা নিসার হুসেইন জানান, “রাতে মসজিদের বেসমেন্টে আশ্রয় নিই। সকালে বাড়িতে ফিরে দেখি তিনটি গোলা পড়েছে আশেপাশে। বাড়ির কিছু অংশ ভেঙে গেছে।”
পুঞ্চ জেলার সুরানকোট থেকে বিবিসির সংবাদদাতা ডেভিনা গুপ্তা জানিয়েছেন, ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে রাতভর গোলাবর্ষণ চলছে। পাকিস্তানে ভারতীয় হামলার পর থেকে এই গোলাবর্ষণের মাত্রা বহুগুণে বেড়েছে।
স্থানীয় নারী সোবিয়া জানান, “বিস্ফোরণের শব্দ শুনে এক মাসের সন্তানকে কোলে নিয়ে দৌড়াই। কোনো গাড়ি পাইনি, হেঁটে অনেক দূর গিয়েছি। পুরো রাস্তা আমি কাঁদতে কাঁদতে পাড়ি দিয়েছি।”
অন্যদিকে, পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের চাকোঠি গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তারা ১৯৯৯ সালের পর এই মাত্রার গোলাবর্ষণ দেখেননি। গ্রামের বাসিন্দা কিফায়াত হুসেইন বলেন, “ছয় তারিখ রাতে আমি পরিবারকে নিয়ে সিমেন্টের বাথরুমে কাটিয়েছি। গোলা পড়ার শব্দে বাচ্চারা চিৎকার করে কাঁদছিল।”
২০০৫ সালের ভূমিকম্পের পর ওই অঞ্চলের ঘরগুলোতে টিনের ছাদ ব্যবহার শুরু হয়, যা গোলার আঘাত ঠেকাতে পারে না। গোলাবর্ষণ শুরু হলে ঘরের বাসনপত্র মাটিতে আছড়ে পড়তে থাকে, জানালেন কিফায়াত।
নীলাম উপত্যকা থেকে মুজাফ্ফরাবাদে পালিয়ে আসা মুহাম্মদ শাগির জানান, “বাড়ির সামনে ক্ষেপণাস্ত্র পড়ে। ছোট ছোট বাচ্চারা প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যায়। সকালেই বোনের বাড়িতে চলে যাই।”
চলমান এই সশস্ত্র উত্তেজনায় সীমান্তের দুই পাশেই সাধারণ মানুষের জীবন বিপর্যস্ত। হাজারো পরিবার এখন উদ্বাস্তু জীবনে নিরাপত্তার আশায় ছুটছে। যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে শিশু, নারী ও সাধারণ মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
thebgbd.com/NA