ঢাকা | বঙ্গাব্দ

৭ গোলের থ্রিলারে বার্সার শ্বাসরুদ্ধকর জয়

এ নিয়ে চলতি মৌসুমে টানা চতুর্থ এল ক্লাসিকোতে জয় পেলো কাতালানরা। আর তাতেই ৪৩ বছর আগের লজ্জার রেকর্ডে পুড়লো লস ব্লাঙ্কোসরা।
  • নিজস্ব প্রতিবেদক | ১১ মে, ২০২৫
৭ গোলের থ্রিলারে বার্সার শ্বাসরুদ্ধকর জয় ৭ গোলের রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে রিয়াল মাদ্রিদকে হারালো বার্সেলোনা।

মৌসুমের শেষ এল ক্লাসিকো, তাই উত্তেজনাটাও ছিলো অনেক বেশি। খেলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছিলো টান টান উত্তেজনা। ৭ গোলের থ্রিলিং ম্যাচ, শুরুতেই রিয়ালের ২ গোলের লিড, এরপর বার্সেলোনার কামব্যাক, তবে শেষ হাসিটা বার্সেলোনারই। ঘরের মাঠে রিয়ালকে হারালো ৪-৩ গোলের ব্যবধানে। এ নিয়ে চলতি মৌসুমে টানা চতুর্থ এল ক্লাসিকোতে জয় পেলো কাতালানরা। আর তাতেই ৪৩ বছর আগের লজ্জার রেকর্ডে পুড়লো লস ব্লাঙ্কোসরা।

রোববার (১১ মে) মৌসুমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এল ক্লাসিকোতে মুখোমুখি হয় বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদ। এ ম্যাচে রিয়ালকে হারিয়ে ৪৩ বছর আগের রেকর্ড ফিরিয়ে আনলো বার্সেলোনা। ১৯৮২-৮৩ মৌসুমের পর প্রথমবারের মতো এক ক্যালেন্ডারে চার ক্লাসিকো হারলো রিয়াল মাদ্রিদ।

রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে এ দিন হ্যাটট্রিক করেছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। ম্যাচের ৫, ১৪ ও ৭০ মিনিটে তিনটি গোলই করেন এই ফরাসি। বার্সেলোনার হয়ে ১৯ মিনিটে প্রথম গোলটি করেন এরিক গার্সিয়া। ৩২ মিনিটে ইয়ামালের গোলে সমতায় ফেরে বার্সেলোনা। তার ২ মিনিট পরই রাফিনিয়ার গোলে এগিয়ে যায় তারা। ৪৫ মিনিটে ব্যবধান ৪-২ করেন এই ব্রাজিলিয়ান।

বার্সেলোনার মাঠে ১৪ মিনিটেই কিলিয়ান এমবাপ্পের জোড়া গোলে এগিয়ে গেল রিয়াল মাদ্রিদ। ব্যাস! এরপর আর মাঠে রিয়ালকে খুঁজে পাওয়া গেল না। লামিনে ইয়ামাল-রাফিনিয়ারা রীতিমতো ছেলেখেলা করল লস ব্লাঙ্কোদের নিয়ে। রক্ষণভাগের একের পর এক ভুলে ব্যবধান দূর করে প্রথমার্ধেই চারবার গোল উৎসবে মাতল কাতালান জায়ান্টরা।

এদিন ম্যাচের শুরুতেই আক্রমণে ওঠে রিয়াল। গোলের জন্য খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়নি তাদের। পঞ্চম মিনিটেই এমবাপ্পে লিড এনে দেন। বল নিয়ে বার্সার ডি-বক্সে ঢুকে পড়া এমবাপ্পেকে ঠেকাতে গিয়ে ফেলে দেন গোলরক্ষক সেজনি। রেফারি পেনাল্টির বঁশি বাজান। স্পটকিক থেকে বল জালে পাঠান এমবাপ্পে।

১৪ মিনিটে রিয়ালের দ্বিতীয় গোল আসে ভিনিসিউস-এমবাপ্পের যুগলবন্দীতে। ইয়ামালের পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে লম্বা করে বাড়ান বল পেয়ে ওপরে ওঠেন ভিনি। এরপর ফাঁকায় থাকা এমবাপ্পেকে দারুণ একটা পাস দেন। সামনে তখন শুধুই সেজনি। সহজেই তাকে পরাস্ত করেন এই ফরাসি। চলতি মৌসুমে রিয়ালের জার্সিতে ৫৩ ম্যাচে ৩৯ গোল করলেন এই ফরাসি। অভিষেক মৌসুমে রিয়ালের হয়ে এতো গোল করতে পারেননি কেউই।

দুই গোলে পিছিয়ে পড়ে তেতে ওঠে বার্সা। একের পর এক আক্রমণ শানাতে থাকে। ১৬ মিনিটের পর বল রিয়ালের ডি-বক্সের আশেপাশেই ঘোরাফেরা করছিল। ইয়ামাল, জেরার্ড মার্টিনের একাধিক দূরপাল্লার শট দারুণভাবে ঠেকিয়ে দলকে বাঁচান কোর্তোয়া। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর পারেননি। কর্নার পায় বার্সা। ইয়ামালের নেয়া কর্নার থেকে হেডে বল জালে জড়ান এরিক গার্সিয়া।

গোলের পর আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে স্বাগতিকরা। যার প্রেক্ষিতে ৩২ মিনিটে সমতায় ফেরে তারা। পেদ্রি বল বাড়িয়েছিলেন ফেরান তরেসকে। কিন্তু পেনাল্টি এরিয়ার মধ্যে এই স্ট্রাইকার জায়গা না পেয়ে কোনোমতে ইয়ামালকে বল বাড়ান। এই স্প্যানিশ হঠাৎ দৌড়ে বলের কাছে পৌঁছে বাঁকানো শটে দুর্দান্ত এক গোল করে দলকে সমতায় ফেরান।

ইয়ামালের গোলের ২ মিনিটের মধ্যে আঘাত হানেন রাফিনিয়া। তার প্রথম গোলের দায় এমবাপ্পে ও দানি সেবায়োসের। বল পাস দিতে গিয়ে দুজনের সংঘর্ষ হয়। আর এই সুযোগে বল কেড়ে নেন পেদ্রি। লম্বা করে বাড়ান রাফিনিয়াকে। এই ব্রাজিলিয়ান ফাঁকায় দৌড়ে বল ধরে বাঁ পায়ের শটে কোর্তোয়াকে পরাস্ত করেন।

৪৫ মিনিটে ফের গোল করেন রাফিনিয়া। ৪৩ মিনিটে এমবাপ্পের পেনাল্টির আবেদন অফসাইডে বাতিলের পরপরই ১৮ গজের বক্সে বল হারান লুকাস ভাসকেস। সঙ্গে সঙ্গে বল কেড়ে নেন রাফিনিয়া। তরেসের সঙ্গে বল দেয়া নেয়া করে কোর্তোয়াকে পরাস্ত করেন। লিগে ১৮ গোল হলো এই ব্রাজিলিয়ানের। ৪-২ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় বার্সেলোনা।

দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে থাকে রিয়াল মাদ্রিদ। বার্সেলোনার ডেরায় বেশ কয়েকবার আক্রমণ করেও গোলের দেখা পাচ্ছিল না তারা। অবশেষে কাঙ্খিত সেই গোলটি আসে ম্যাচের ৭০ মিনিটে।

বক্সের ভেতরে এমবাপ্পের উদ্দেশ্যে বল বাড়ান ভিনিসিয়াস। গোল মুখের সামনে থেকে আলতো টোকায় বল জালে জড়ান এমবাপ্পে। আর তাতেই নিজের হ্যাটট্রিক পূরণ করেন ফরাসি এই তারকা।

এরপর বাকি সময়টা আক্রমণ চালায় দুই দলই। ম্যাচের একেবারে শেষ মূহুর্তে অতিরিক্ত সময়ের পঞ্চম মিনিটে গোলও পেয়েছিল বার্সা। দারুণ এক কোনাকুনি শটে বক্সের ভেতর থেকে রিয়াল গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়াকে পরাস্ত করেন ওলমোর বদলি নামা ফেরমিন লোপেজ। তবে তার হাতে লাগায় গোলটি বাতিল হয়। শেষ পর্যন্ত ৪-৩ গোলের জয় পায় বার্সেলোনা। এ জয়ে লিগ শিরোপার একেবারে কাছাকাছি পৌঁছে গেলো হান্সি ফ্লিকের দল।


thebgbd.com/NIT