ফরিদপুরে নুরুজ্জামান বুলবুল (৪৮) নামে এক ঠিকাদারের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
সোমবার (১২ মে) বিকেল ৪টার দিকে সদর উপজেলার কৈজুরি ইউনিয়নের কৈজুরি গ্রামে পৈত্রিক বাসভবনের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
মরদেহের কাছ থেকে কয়েকটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়। এর একটিতে লেখা ছিল- ‘বিল্লাল ভাই আমাকে আর বাঁচতে দিলেন না।’
নিহত নুরুজ্জামান বুলবুল কৈজুরীর বাসিন্দা মৃত মোজাফফর হোসেন মিয়ার ছোট ছেলে। বুলবুল বিবাহিত এবং তিন মেয়ের বাবা।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, বুলবুল গত রোববার দুপুরের দিকে তাদের তিনতলা বাসভবনের দোতলার ওই কক্ষটিতে প্রবেশ করেন। এরপর আর তার কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় সোমবার বিকেলে পরিবারের লোকজন ঘরের দরজা ভেঙে তার ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদউজ্জামান বলেন, পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এটি আত্মহত্যা নাকি অন্যকিছু তা এখনই বলা যাচ্ছে না। ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে তার মৃত্যুর কারণ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বুলবুল বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ঠিকাদারি করতেন। সর্বশেষ তিনি বাগেরহাটে একটি মডেল মসজিদ নির্মাণের বড় কাজ শেষ করেন। বিগত আওয়ামী লীগের সরকারের আমলের প্রথমদিকে পার্শ্ববর্তী হাড়কান্দি এলাকার বাসিন্দা জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন অর্থ সম্পাদক বিল্লাল হোসেনের সঙ্গে তিনি ঠিকাদারি ব্যবসায় যোগ দেন। মুন্সিবাজার বাইপাস মোড়ের পাশে বুলবুল ও বিল্লালের যৌথ মালিকানায় কেনা জমির ওপরে চারতলা একটি ভবন তৈরি করা হয়। ব্যবসায়ীক লেনদেনের পাশাপাশি বিল্লালের সঙ্গে তার বড়ভাই-ছোটভাই সুলভ সম্পর্ক ছিল।
সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ভাই বহুল আলোচিত আড়াই হাজার কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের মামলার আসামি খন্দকার মোহতেশাম হোসেন ওরফে বাবরের মুরগি খামারের ম্যানেজার ছিলেন বিল্লাল হোসেন। ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে মোশাররফ হোসেনের পতনের পর থেকে বিল্লাল হোসেন আত্মগোপনে চলে যান।
বিল্লাল মানি লন্ডারিংয়ের মামলায় দীর্ঘদিন কারাগারেও ছিলেন। পরে জামিনে বেরিয়ে এসে বর্তমানে আত্মগোপনে আছেন। নিহত নুরুজ্জামান কক্ষ থেকে উদ্ধার হওয়া ওই সুইসাইড নোটের বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা বিল্লাল হোসেনের বক্তব্য জানা যায়নি তাকে পাওয়া না যাওয়ায়।
জানা গেছে, নিহত বুলবুলের স্ত্রী ও ৩ মেয়ে রয়েছে। তার মেঝ মেয়ের সঙ্গে প্রথম স্বামীর ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পরে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম আহমেদের সঙ্গে বিয়ে হয়। পারিবারিক নানা বিষয় নিয়ে বুলবুলের সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যদের ঝামেলা চলছিল। এর আগে তিনি ঝগড়া এড়াতে মেয়েদের নামে কিছু সম্পত্তি লিখে দিয়ে যান। উদ্ধার হওয়া একটি চিরকুটে বুলবুল লিখেছে, “আল্লাহ পাক যদি আমার মৃত্যু দেয় তাহলে আমার মেয়েরা যেন আমার মরামুখ না দেখে আর কবর যেনো আমার মায়ের কবরের পাশে হয়, এ বাড়িতে নয়।”
প্রসঙ্গত, গতকাল নুরুজ্জামান বুলবুলের মায়ের কবরের পাশে কৈজুরি ইউনিয়নের মামুদপুর গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
thebgbd.com/NIT