যুক্তরাষ্ট্র সরকার মঙ্গলবার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নির্ধারিত আরও ৪৫ কোটি ডলারের অনুদান বাতিল করেছে। এর আগের সপ্তাহেই প্রতিষ্ঠানটির জন্য ২২০ কোটি ডলারের তহবিল কর্তন করা হয়। ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য ও মানবসেবা বিভাগের বরাতে জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান ‘বৈষম্যের অন্ধকার সমস্যা’র কারণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিশ্বখ্যাত এই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছে। তাদের অভিযোগ—সরকার বেআইনিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।
ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযানে নেমেছে। প্রশাসনের দাবি—বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লাগামহীন ইহুদি-বিরোধিতা ও সংখ্যালঘুদের প্রতি ঐতিহাসিক বৈষম্য দূরীকরণের নামে পক্ষপাতদুষ্ট বৈচিত্র্য নীতির প্রচলন হচ্ছে। তবে সোমবার শিক্ষা মন্ত্রী লিন্ডা ম্যাকমোহান বরাবর এক চিঠিতে হার্ভার্ড প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ও ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে ‘কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে মিল রয়েছে’।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকট ঘিরে হার্ভার্ডে যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, তা উল্লেখ করে গারবার লিখেছেন—‘আমাদের জন্য সেই একাডেমিক বছরটি ছিল ব্যতিক্রমভাবে বেদনাদায়ক। তবে এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ও সুপারিশ এসেছে, যার মাধ্যমে ইহুদি-বিরোধিতা ও ঘৃণার অন্যান্য রূপ দূর করতে চাওয়া হয়েছে।’ তবুও অন্তত একটি ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের কোনো সুযোগ রাখা হয়নি।
জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের (এনআইএইচ) পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়—তারা সাধারণত সংশোধনের সুযোগ দিয়ে পুনরায় অনুদান চালু করে, কিন্তু হার্ভার্ডের ক্ষেত্রে ‘কোনো সংশোধনই সম্ভব নয়’। গারবার অবশ্য জোর দিয়ে বলেন, হার্ভার্ড কোনো রাজনৈতিক দল বা মতাদর্শের সঙ্গে জড়িত নয়। তবে তিনি স্বীকার করেন, ক্যাম্পাসে আরও মতবৈচিত্র্য প্রয়োজন এবং বিশ্ববিদ্যালয় বরাবরই ‘ব্যক্তির বৈশিষ্ট্যকে’ গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষার্থী নির্বাচন করে, গোষ্ঠীভিত্তিক নয়।
এদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের ইহুদি-বিরোধিতা দমন টাস্ক ফোর্সের এক বিবৃতিতে হার্ভার্ডকে ‘ভণ্ডামি আর বৈষম্যের আঁতুড়ঘর’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব তদন্তেই প্রমাণ মিলেছে—ইহুদি শিক্ষার্থীরা লাগাতার অবমাননা, শারীরিক নিপীড়ন ও ভয়ের পরিবেশে পড়েছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়—‘হার্ভার্ড ও এর নেতৃত্ব একটি গুরুতর বিশ্বাসযোগ্যতা সংকটে পড়েছে। নিজেদের আইনি প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা ও একাডেমিক উৎকর্ষতা পুনরুদ্ধার করতে হলে তাদের দীর্ঘ ও কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে।’
সূত্র: এএফপি
এসজেড