প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ মঙ্গলবার বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের জেরে ফ্রান্স ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ’ বাঁধিয়ে দিতে চায় না। মেয়াদের বাকি দুই বছরে তার লক্ষ্যপূরণে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গণভোট আয়োজন করবেন বলে জানান তিনি।
প্যারিস থেকে এএফপি জানায়, ২০১৭ সালে র্যাডিক্যাল পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসেন ম্যাক্রোঁ। সংবিধান অনুযায়ী টানা দুই মেয়াদের বেশি দায়িত্ব পালনের সুযোগ না থাকায় ২০২৭ সালে ক্ষমতা ছাড়বেন তিনি। গত এক বছরে বিশেষ করে অকাল নির্বাচনের সিদ্ধান্ত ব্যুমেরাং হয়ে আসায় অনেকেই তাকে ‘লেম ডাক’ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভাবতে শুরু করেন। সে নির্বাচনে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে মাখোঁর দল এখন সংখ্যালঘু অবস্থানে, আর ডানপন্থীরা সবচেয়ে বড় দল।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আন্তর্জাতিক মঞ্চে সক্রিয় ভূমিকা ও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে উদ্যোগের মাধ্যমে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছেন ম্যাক্রোঁ। তিন ঘণ্টার বেশি সময়ের দীর্ঘ এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমাদের ইউক্রেনকে আত্মরক্ষায় সাহায্য করতে হবে, কিন্তু তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাধিয়ে দিতে পারি না। এই যুদ্ধ থামতে হবে। আর ইউক্রেনকে আলোচনায় বসার জন্য সর্বোচ্চ অনুকূল অবস্থানে থাকতে হবে।’
তবে একই সঙ্গে ম্যাক্রোঁ জানান, ইউরোপের অন্যান্য দেশের সঙ্গে আলোচনা করে ফরাসি পারমাণবিক অস্ত্রবাহী যুদ্ধবিমান ওইসব দেশে মোতায়েনের বিষয়টি বিবেচনায় আছে। এ ধরনের ব্যবস্থা আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশে করে আসছে। ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘মার্কিন বোমা রয়েছে বেলজিয়াম, জার্মানি, ইতালি, তুরস্কে। আমরাও এই আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত। আগামী সপ্তাহ ও মাসে এই কাঠামো সুনির্দিষ্টভাবে তুলে ধরব।’
‘এ নিয়ে ভাবিনি’ -
সাক্ষাৎকারে ম্যাক্রোঁর মুখোমুখি হন বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ। তাদের মধ্যে ছিলেন কট্টরপন্থী শ্রমিক ইউনিয়ন সিজিটির প্রধান সোফি বিনে ও জনপ্রিয় ফিটনেস ইনফ্লুয়েন্সার থিবো ইনশেপ। ফ্রান্সে প্রায় ৬০০ কর্মসংস্থান নিয়ে উদ্বেগের প্রেক্ষিতে ম্যাক্রোঁ সোফি বিনেকে জানান, আর্সেলরমিত্তালের ফরাসি শাখাকে রাষ্ট্রায়ত্ত করা হবে না। তবে দেশটির দুই কারখানা বাঁচাতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
গুরুত্বপূর্ণ এক ঘোষণায় তিনি বলেন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংস্কারের বিষয়ে একাধিক গণভোট একদিনেই আয়োজন করতে চান তিনি। ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘আমি চাই আমরা পরপর কয়েকটি গণপরামর্শ আয়োজন করি।’ তিনি জানান, এই ভোট ‘আগামী কিছু মাসের মধ্যেই’ একটি নির্দিষ্ট দিনে অনুষ্ঠিত হবে এবং এতে থাকবে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার ইস্যু।
যদিও বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি, তবে প্রধানমন্ত্রী ফ্রঁসোয়া বাইরু যে প্রস্তাব দিয়েছেন—ঋণ হ্রাস নিয়ে গণভোটের—তাতে তিনি আগ্রহী বলেও জানান। গণভোটে সামাজিক বিষয়, যেমন ১৫ বছরের কম বয়সীদের জন্য সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের সীমা বা সহায়তাপ্রাপ্ত মৃত্যু ইস্যু অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। তবে ডান ও কট্টর ডানপন্থীদের চাপ সত্ত্বেও অভিবাসন ইস্যু গণভোটে তোলা হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেন ম্যাক্রোঁ।
সামাজিক সংবেদনশীল ইস্যুতে তিনি খেলাধুলায় ধর্মীয় প্রতীক, বিশেষ করে মুসলিম নারীদের হিজাব পরা নিয়ে বলেন, প্রতিযোগিতামূলক খেলায় এর অনুমোদন তিনি সমর্থন করেন না। তবে অপেশাদার খেলার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেবে সংশ্লিষ্ট ক্রীড়া ফেডারেশন।
বর্তমানে ৪৭ বছর বয়সী ম্যাক্রোঁ ২০২৭ সালে দুই মেয়াদ পূর্ণ করবেন। ফরাসি আইনে তিনি ২০৩২ সালে আবারও নির্বাচনে দাঁড়াতে পারেন, যদিও ইতিহাসে এমনটা আগে কখনো হয়নি। তবে দীর্ঘ সাক্ষাৎকারের শেষে তিনি বলেন, ২০২৭ এর পর ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনও কোনও চিন্তা করেননি। ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘যখন দায়িত্ব শেষ হবে, তখন পরবর্তী বিষয়ে ভাবব। তখনই উত্তর দিতে পারব। কিন্তু আজ পর্যন্ত এ নিয়ে কিছু ভাবিনি।’
সূত্র: এএফপি
এসজেড