ইউক্রেন ও রাশিয়া বৃহস্পতিবার তিন বছরেরও বেশি সময় পর তাদের প্রথম সরাসরি আলোচনায় বসতে চলেছে। তবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এ আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন না। ইস্তাম্বুল থেকে এএফপি জানায়, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি পুতিনকে ইস্তাম্বুলে ব্যক্তিগতভাবে তার সঙ্গে দেখা করার প্রস্তাব দেন। তবে রাশিয়ার প্রতিনিধি দল কেবল নিম্ন-স্তরের একটি দলের নাম ঘোষণা করেছে।
২০২২ সালে ইউক্রেনে রুশ অভিযানের কয়েক সপ্তাহ পর যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে আয়োজিত এক আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর প্রথমবারের মতো দু’পক্ষের মধ্যে ফের সরাসরি এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। পুতিনের অনুপস্থিতির কারণে আলোচনাটি গুরুত্ব হারাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দু’দেশের মধ্যে চলমান যুদ্ধটি ইউরোপের সবচেয়ে ভয়াবহ। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী এ যুদ্ধে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এবং ইউক্রেনের প্রায় এক পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড দখল করে নিয়েছে রাশিয়া।
ইউক্রেন ও ইউরোপীয় দেশগুলো ৩০ দিনের নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানোর পর, পাল্টা প্রস্তাব হিসেবে পুতিন ১৫ মে ইস্তাম্বুলে এই আলোচনার প্রস্তাব করেন। জেলেনস্কি সেই প্রস্তাবে সম্মত হন। তবে তিনি চলতি সপ্তাহে বলেন, পুতিন যদি নিজে এ আলোচনায় উপস্থিত না হন, তাহলে এটিই ইঙ্গিত দেবে, তিনি সত্যিকার অর্থে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী নন। জেলেনস্কি বলেন, ‘এটি তার যুদ্ধ। অতএব, আলোচনা তার সঙ্গেই হওয়া উচিত।’
ক্রেমলিন প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে থাকবেন পুতিনের সহযোগী সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী ভ্লাদিমির মেদিনস্কি। ২০২২ সালের রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে আয়োজিত ওই আলোচনায়ও উপস্থিত ছিলেন তিনি। পুতিন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ও ক্রেমলিনের পররাষ্ট্রনীতি সহকারী ইউরি উশাকভ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আগের আলোচনার নেতৃত্ব দেওয়ার পর, শীর্ষ আলোচক হিসেবে এই আলোচনায়ও তারা থাকবেন বলে গুঞ্জন ওঠে। তবে এই আলোচনায় ক্রেমলিনের প্রতিনিধি দলের তালিকায় তাদের নাম নেই।
ইউক্রেনের ভূখণ্ডের ওপর রাশিয়ার ঐতিহাসিক দাবি এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাবশালী মেদিনস্কি ছাড়াও ঘোষিত আলোচকের নামের তালিকায় অন্য তিন জন হলেন- উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিখাইল গালুজিন, উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী আলেকজান্ডার ফোমিন ও রাশিয়ার জিআরইউ সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা’র পরিচালক ইগর কোস্ত্যুকভ।
-ইউরোপের নিষেধাজ্ঞার সতর্কতা-
এদিকে, ইউরোপীয় নেতারা ইস্তাম্বুলের এই আলোচনা ফলপ্রসূ না হলে, রাশিয়ার ওপর দ্রুত নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে বলে সতর্কতা জানিয়েছেন। আলোচনার প্রাক্কালে জেলেনস্কি বলেন, মস্কোর প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে কারা থাকবেন, তিনি তার ওপর ভিত্তি করে ইউক্রেনের পরবর্তী ‘পদক্ষেপ’ নির্ধারণ করবেন।
তিনি আরো বলেন, ‘আগামীকাল তুরস্কে ইউক্রেন যেকোনো ধরনের আলোচনার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। আমরা বৈঠকে ভয় পাই না।’ জেলেনস্কি বলেন, ‘রাশিয়া থেকে কে আসবে, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করছি। তারপর সিদ্ধান্ত নেব ইউক্রেন কী পদক্ষেপ নেবে।’
এদিকে, রাশিয়া জোর দিয়ে বলেছে, এই আলোচনায় ‘নাৎসিবাদ মুক্ত’ ও ইউক্রেনের ‘নিরস্ত্রীকরণ’সহ সংঘাতের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করা হবে। এছাড়া ইউক্রেনকে রাশিয়ার সৈন্যদের দখলকৃত অঞ্চলের স্বীকৃতি দিতে হবে। তবে কিয়েভ জানিয়েছে, তারা তাদের অঞ্চলগুলোকে রাশিয়ার ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেবে না। তবে, জেলেনস্কি স্বীকার করেছেন, ইউক্রেন কেবল কূটনৈতিক উপায়ে রাশিয়ার দখলকৃত ভূখণ্ড ফিরে পেতে পারে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বুধবার তুরস্কে ন্যাটোর বৈঠকে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রে সিবিগার সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি শুক্রবার ইস্তাম্বুলে থাকবেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি তুরস্কে মধ্যস্থতার ভূমিকা নিতে পারেন।
সূত্র: এএফপি
এসজেড