কাতার থেকে একটি বিলাসবহুল জেট উপহার গ্রহণ করায় আবারও আলোচনায় এসেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ। দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম ১০০ দিনের মধ্যে একাধিক স্বার্থের দ্বন্দ্ব ও বিতর্কিত নিয়োগ নিয়ে সমালোচকদের দাবি, আগের মেয়াদের চেয়েও বড় ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ দুর্নীতির ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, দুর্নীতিবিরোধী প্রভাবশালী সংস্থা এন্ড সিটিজেনস ইউনাইটেড-এর প্রেসিডেন্ট টিফানি মুলার বলেন, ‘এটা চূড়ান্ত মাত্রার দুর্নীতি ও ভণ্ডামি। তবে ট্রাম্পের মতো একজন নেতার কাছ থেকে, আমরা এমনটাই আশা করি। তিনি তো নিজের সম্পদ বাড়ানো ছাড়া কিছুই ভাবেন না।’
ট্রাম্পের উপহার নেওয়া প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলারের এই বিমানের মূল্য গত দুই দশকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের প্রাপ্ত বিদেশি উপহারের সম্মিলিত মূল্যের শতগুণ। যদিও ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই উপহার ‘দেশের’ জন্য, ব্যক্তিগত নয়। কিন্তু এতেও রক্ষা পাননি। আগের মেয়াদে দুইবার অভিশংসিত হওয়া এবং প্রায় ৪ হাজার স্বার্থের দ্বন্দ্বের অভিযোগ থাকা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এবার নিজ দল ও সমর্থকদের মধ্যেই রীতিমতো সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
‘রাজকোষের চাবি’
এন্ড সিটিজেনস ইউনাইটেড প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়, দ্বিতীয় মেয়াদের শুরু থেকেই ট্রাম্প প্রশাসন দুর্নীতি ও আত্মস্বার্থসাধনের নজির স্থাপন করছে। তিনি মন্ত্রিসভা ও উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন অন্তত ১২ জন বিলিয়নিয়ার অনুদানদাতাকে, যাদের মধ্যে ইলন মাস্কও রয়েছেন।
ট্রাম্প মাস্কের ‘ব্যবসায়িক দক্ষতা’র প্রশংসা করলেও সমালোচকরা বলছেন, তাকে ‘রাজকোষের চাবি’ ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। মাস্কের কোম্পানিগুলো ইতোমধ্যে সরকারের কাছ থেকে প্রায় ১৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি পেয়েছে।
সিটিজেনস ফর রেসপনসিবিলিটি অ্যান্ড এথিকস ইন ওয়াশিংটন-এর প্রেসিডেন্ট নোয়া বুকবাইন্ডার বলেন, ‘ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে হাজারো স্বার্থের দ্বন্দ্ব এবং নানা ধরনের সন্দেহজনক ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এবারের দুর্নীতির মাত্রা আরও বড় ও দৃষ্টিকটুভাবে স্পষ্ট।’
ক্রিপ্টো সাম্রাজ্য
তবে সবচেয়ে বিতর্কিত হচ্ছে ট্রাম্প পরিবারের সম্প্রসারিত ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবসা। ইতোমধ্যে বাজারে এসেছে দুটো ‘মিম কয়েন’, যেগুলোর কোনো সুস্পষ্ট ব্যবহার বা অন্তর্নিহিত মূল্যনেই। এ ছাড়া ওয়ার্ল্ড লিবার্টি ফাইন্যান্সিয়াল নামে একটি ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ চালু করা হয়েছে, যার নিজস্ব টোকেন রয়েছে। সংস্থাটি সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকারের কাছ থেকে ২ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ পেয়েছে।
মার্কিন গণমাধ্যমের তথ্যানুসারে, শুধু ডলারটাম্প নামের মিম কয়েন বিক্রি করেই ১৪০ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে। কয়েনের শীর্ষ ২২০ ক্রেতাকে ট্রাম্পের সঙ্গে ‘নৈশভোজের সুযোগ’ দেওয়ার প্রলোভনও দেওয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও আইনত চ্যালেঞ্জ
একই সঙ্গে ট্রাম্প রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। যে আইনজীবী সংস্থাগুলো তার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেগুলোর বিরুদ্ধেও জারি করেছেন নির্বাহী আদেশ, যার অনেকগুলোই আদালতে বাতিল হয়ে গেছে।
এ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই আদালত প্রশাসনের মূলনীতিগুলো আটকে দিয়েছে এবং কখনো কখনো প্রেসিডেন্টকে ভর্ৎসনাও করেছে। ডেমোক্র্যাটরা দুর্নীতির অভিযোগে সরব হলেও দলের অনেকে এই বিষয়ে সরাসরি প্রচারে সতর্কতা দেখাচ্ছেন। তাদের আশঙ্কা, ট্রাম্পের ‘ড্রেইন দ্য সোয়াম্প’ (দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন) বার্তায় আস্থা রাখা ভোটাররা এ ধরনের দুর্নীতির অভিযোগে প্রভাবিত নাও হতে পারেন।
তবে বুকবাইন্ডারের মতে, ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মহল ভুল করে ধরে নিয়েছে, মার্কিন জনগণ তাদের নেতা নিজের পদ ব্যবহার করে ধনী হয়ে উঠছে, এটা মেনে নেবে। ‘আমি নিশ্চিত নই, এটা সত্যি, কারণ মনে করি, মার্কিন জনগণ এমন নেতাকে পছন্দ করে না, যে নিজের পদ থেকে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়,’ বলেন তিনি।
সূত্র: এএফপি
এসজেড