মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, পরমাণু চুক্তি নিয়ে ইরানকে লিখিত প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তেহরান এরই মধ্যে প্রস্তাব হাতে পেয়েছে। সেই সঙ্গে আবারো হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যদি তারা দ্রুত এই চুক্তির ব্যাপারে পদক্ষেপ না নেয় তাহলে ‘ভয়াবহ পরিণতি’ ভোগ করতে হবে। তুরস্কের ইস্তাম্বুল থেকে এএফপি এই খবর জানায়।
এএফপি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উপসাগরীয় কয়েক দেশ সফর শেষে ওয়াশিংটনে ফেরার পথে এয়ার ফোর্স ওয়ানে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে পরমাণু চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে। তার ভাষায়, ‘তাদের কাছে একটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। কিন্তু আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তারা জানে যে, তাদের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে, অন্যথায় খারাপ কিছু ঘটতে চলেছে।’
এর আগে গত বৃহস্পতিবার কাতার সফরকালে ট্রাম্প বলেছেন, তেহরানের সঙ্গে চুক্তির প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে গেছে ওয়াশিংটন। একই দিন মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘এক্সিওস’ জানায়, চতুর্থ দফা আলোচনার সময় ওয়াশিংটন ইরানকে একটি লিখিত প্রস্তাব দিয়েছে।
তবে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি এই খবর মিথ্যা বলে নাকচ করে দেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা তেমন কিছুই পাইনি।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিলে আমরা পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে স্বচ্ছতা ও আস্থা তৈরিতে প্রস্তুত।’
এদিকে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে তুরস্কে বৈঠকে বসছে ইউরোপীয় দেশগুলো। এএফপি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির সঙ্গে পরমাণু কর্মসূচির আলোচনায় বসতে যাচ্ছে ইরান। গতকাল শুক্রবার তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুলে এই বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
বৈঠকের আগে ইরানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সতর্ক করে বলেছেন, ২০১৫ সালের চুক্তির আওতায় জাতিসংঘের যে নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রত্যাহার করা হয়, সেগুলো পুনর্বহাল করলে ‘অবর্ণনীয় পরিণতি’ ডেকে আনবে। তিনি আরো জানিয়েছেন, শুক্রবারের বৈঠক হবে উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে।
বৈঠকে অংশ নিতে যাওয়া এই তিন ইউরোপীয় দেশ সংক্ষেপে ‘ই-থ্রি’ নামে পরিচিত। এরা ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির সময় অন্যতম পক্ষ ছিল। বাকি অংশীদাররা হলো চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে ২০১৮ সালে একতরফাভাবে ওই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন এবং ইরানের ব্যাংকিং ও তেল খাতে পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।
এর বছর খানেক পর ইরানও ধাপে ধাপে তাদের প্রতিশ্রুতি ফিরিয়ে নেয়। ওই চুক্তির আওতায় ইরান নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তির বদলে জাতিসংঘ তত্ত্বাবধানে পরমাণু কার্যক্রম সীমিত রাখতে রাজি হয়। ইউরোপীয় দেশগুলো বর্তমানে চুক্তির ‘স্ন্যাপব্যাক’ ব্যবস্থাটি সক্রিয় করার বিষয়টি বিবেচনা করছে, যার ফলে ইরানের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের পূর্বের নিষেধাজ্ঞাগুলা ফের কার্যকর হয়ে যাবে।
তবে এই ব্যবস্থা কার্যকরের সুযোগ আগামী অক্টোবরেই শেষ হয়ে যাবে। আরাগচি বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত ‘একটি বৈশ্বিক পারমাণবিক সংকট ডেকে আনতে পারে, যার প্রভাব ইউরোপের ওপরই সবচেয়ে বেশি পড়বে।’ পাশাপাশি তিনি ফরাসি সাপ্তাহিক ‘লে পয়েন্ট’-এ এক নিবন্ধে লিখেছেন, ইরান ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু করতে প্রস্তুত।
সূত্র: এএফপি
এসজেড