ঢাকা | বঙ্গাব্দ

রংপুর বিভাগে চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত পৌনে ৬ লাখ কোরবানির পশু

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর রংপুর বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার পবিত্র ঈদুল আজহায় বিভাগের আট জেলায় ১৪ লাখ ১২ হাজারের বেশি কোরবানির পশুর চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে।
  • নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৯ মে, ২০২৫
রংপুর বিভাগে চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত পৌনে ৬ লাখ কোরবানির পশু ফাইল ছবি

আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে রংপুর বিভাগের আট জেলায় প্রায় ১৯ লাখ ৮০ হাজার গবাদি পশু প্রস্তুত করেছেন খামারি ও গৃহস্থরা। এসব পশুর বিপরীতে বিভাগে কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ১৪ লাখ ১২ হাজারের কিছু বেশি। এতে চাহিদার তুলনায় প্রায় ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোরবানির পশু বেশি রয়েছে।


প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর রংপুর বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার পবিত্র ঈদুল আজহায় বিভাগের আট জেলায় ১৪ লাখ ১২ হাজারের বেশি কোরবানির পশুর চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বিভাগের এক লাখ ৯৭ হাজার ৪১৪ জন ছোট-বড় খামারির মাধ্যমে ১৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৯০টি গরু, মহিষ, ছাগল, উট, দুম্বা ও ভেড়াসহ কোরবানির পশু প্রস্তুত করেছেন খামারি ও গৃহস্থরা। যা এই বিভাগের মোট চাহিদার চেয়ে প্রায় ৫ লাখ ৬৮ হাজারের বেশি। এর মধ্যে উট এবং দুম্বা শতাধিকের বেশি রয়েছে।


বিভাগের আট জেলার মধ্যে রংপুরে কোরবানির পশুর চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ২৪ হাজার ৭৫২টি। সেখানে প্রস্তত করা হয়েছে ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৩১২টি। এ জেলায় চাহিদার চেয়ে উদ্বৃত্ত রয়েছে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৫৬১টি। গাইবান্ধা জেলায় ১ লাখ ২৬ হাজার ৩০৫টি পশুর চাহিদার বিপরীতে প্রস্তত করা হয়েছে ১ লাখ ৯৬ হাজার ২৭৭টি। এ জেলায় চাহিদার চেয়ে ৬৯ হাজার ৯৭২টি কোরবানির পশু বেশি রয়েছে।


২ লাখ ২২ হাজার ৮৪০টি কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে কুড়িগ্রাম জেলায়। তবে সেখানে প্রস্তত করা হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার ৪৮৬টি পশু। চাহিদার চেয়ে এ জেলায় ১ লাখ ৭ হাজার ৬৪৬টি কোরবানির পশু বেশি রয়েছে।


নীলফামারীতে প্রাণীর চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ২৩ হাজার ১৬৬টি পশুর। সেখানে প্রস্তত করা হয়েছে ২ লাখ ৮৯ হাজার ১৫৭টি। এই জেলায় চাহিদার চেয়ে উদ্বৃত্ত রয়েছে ৬৫ হাজার ৯৫১টি কেরবানির পশু।


লালমনিরহাট জেলায় চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার ৭৭৭টি পশুর। সেখানে প্রস্তত করা হয়েছে ২ লাখ ৬২ হাজার ৬৩১টি। চাহিদার তুলনায় এ জেলায় ৯০ হাজার ৮৫৪টি বেশি রয়েছে। দিনাজপুরে ২ লাখ ৬৩ হাজার ৬৪৬টি কোরবানির পশুর চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখানে ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৪৮৫টি পশু প্রস্তত করা হয়েছে। এই জেলায় চাহিদার চেয়ে উদ্বৃত্ত রয়েছে ৬৯ হাজার ৮৩৯টি।


এছাড়া, ঠাকুরগাঁও জেলায় ৭৫ হাজার ৩৬১টি কোরবানির পশুর চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রস্তত করা হয়েছে ৯০ হাজার ৮৮৬টি। এই জেলায় চাহিদার চেয়ে ১৫ হাজার ৫২৫টি পশু বেশি রয়েছে। আর পঞ্চগড় জেলায় চাহিদার চেয়ে উদ্বৃত্ত রয়েছে ৯  হাজার ৮৫৬টি পশু। এ জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ৩০০টির। সেখানে ১ লাখ ১৪ হাজার ১৫৬টি পশু প্রস্তত করা হয়েছে।


এদিকে কোরবানির পশুর বাজারে ভালো দামের আশায় ঈদুল আজহা যত ঘনিয়ে আসছে, ছোট-বড়-মাঝারি খামারিরা তত তৎপর হয়ে উঠছে। শেষ সময়ে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা পশুর পরিচর্যা করছেন খামারি ও গৃহস্থরা। অনেকে আবার খামার থেকে গরু বিক্রি শুরু করেছেন। কেউবা অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে কোরবানির পশু কেনাবেচার পথ বেছে নিয়েছেন।


ঈদ মানেই পশু কোরবানির চিন্তা মাথায় রেখে কাজ করতে হয় খামারি, গৃহস্থ ও ক্রেতাদের। কোরবানির জন্য কেউ গরু, ছাগল, ভেড়া আবার কেউ সুযোগ পেলে উট বা দুম্বা কিনে থাকে। তবে এবার গো-খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় পশুর দাম কিছুটা বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।


দুই সপ্তাহ পরই আনুষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন হাটে পশু কেনাবেচা শুরু হবে বলে জানিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। তবে সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতীয় গরু চোরাচালান ঠেকাতে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপের দাবি খামারিদের।


কয়েকজন খামারি ও গৃহস্থদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, বর্তমানে গো-খাদ্যের দাম অত্যাধিক বেশি হওয়ায় পশু পালন একটা কষ্ট সাধ্য কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি গরু-ছাগলকে খাওয়ানোর মতো ঘাস ভরা মাঠ বর্তমানে নেই বললেই চলে। আগের মানুষ মাঠে গরু-ছাগল ছেড়ে দিতো সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত রেখে গোয়ালে নিয়ে আসতো। আর এখন গোয়ালেই রেখে গরু-ছাগল লালন-পালন করতে হচ্ছে।


এদিকে দেশি গরুতেই কোরবানির জোগান সম্ভব হবে বলে মনে করছেন খামারিরা। এজন্য চোরাচালান ঠেকাতে নজরদারি বাড়ানোর দাবি তাদের। খামারি ও প্রান্তিক পর্যায়ের গৃহস্থরা বলছেন, ভারতীয় গরু দেশে প্রবেশ না করলে কোরবানির হাটে ন্যায্যমূল্য পাওয়া যাবে।


রংপুরের পীরগাছা উপজেলার তাম্বুলপুর ইউনিয়নের প্রতিপাল বগুড়াপাড়ার কোহিনুর বেগম কোরবানির ঈদ সামনে রেখে পশুর যত্নে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এই নারী জানান, দুটি বিদেশি জাতের গরু বিক্রি করে তার ঋণ পরিশোধ করবেন। এছাড়া সামনের ঈদের জন্য আরও দুটি ছোট গরু কিনবেন তিনি।


ঈদুল আজহা ঘিরে কোহিনুর বেগমের মতো জেলার প্রায় সব খামারির ব্যস্ততা এখন পশু লালন পালনে। তবে খামারিদের রক্ষায় ভারতীয় গরু যেন কোনোভাবেই দেশে ঢুকতে না পারে সে বিষয়ে সীমান্তে কঠোর নজরদারির দাবি তাদের।


খামারিরা বলেন, দেশে পর্যাপ্ত গরু রয়েছে। কোনোভাবেই যাতে ভারত থেকে গরু না আসতে পারে সেদিকে প্রশাসনকে নজর  রাখতে হবে।


রংপুর ডেইরি ফার্মাস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এস এম আসিফুল ইসলাম বলেন, বর্ডার দিয়ে গরু চোরাচালান বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ ভারতীয় গরু ঢুকলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের খামারিরা।

 

এই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লতিফুর রহমান মিলন বলেন, আসন্ন ঈদুল আজহা ঘিরে কোরবানির জন্য রংপুর বিভাগে পর্যাপ্ত গরু ও ছাগল রয়েছে। এ কারণে বাইরে থেকে গরু-ছাগল আমদানি করতে হবে না। বরং এই অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত পশু দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা সম্ভব হবে। সীমান্ত দিয়ে অবৈধ গরু চোরাচালান রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের। রংপুর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক ডা. মো. আব্দুল হাই সরকার বলেন, গরু চোরাচালান রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এবার পার্শ্ববর্তী কোনো দেশ থেকেই গবাদিপশু আসবে না। ফলে খামারিরা গরুর ভালো দাম পাবেন।


তিনি আরও জানান, ক্রেতা সাধারণের সুবিধার্থে বিভাগের আট জেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে মোট ২৯৫টি হাটে কোরবানির পশু কেনাবেচার ব্যবস্থা করা হবে। এসব হাটে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া খামারিদের সকল প্রকার সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।


thebgbd.com/NIT