ঢাকা | বঙ্গাব্দ

বলসোনারোর বিরুদ্ধে বিচার শুরু হচ্ছে

  • অনলাইন ডেস্ক | ১৯ মে, ২০২৫
বলসোনারোর বিরুদ্ধে বিচার শুরু হচ্ছে ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারো।

ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর বিরুদ্ধে সোমবার থেকে অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে বিচার শুরু হচ্ছে। দেশটির সর্বোচ্চ আদালত সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে বহুল প্রতীক্ষিত এই বিচারপ্রক্রিয়ার প্রাথমিক ধাপ শুরু করছে, যেখানে অভিযুক্ত প্রমাণিত হলে বলসোনারোর ৪০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। ব্রাসিলিয়া থেকে এএফপি জানায়, আসামি তালিকায় রয়েছেন সাবেক উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা, মন্ত্রী, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যসহ ৮০ জনের বেশি ব্যক্তি। প্রাথমিক এই ধাপ অন্তত দুই সপ্তাহ চলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।


২০২২ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বামপন্থী প্রতিদ্বন্দ্বী লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার কাছে হেরে যাওয়ার পর বলসোনারো ক্ষমতায় থাকার ষড়যন্ত্র করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রসিকিউটররা বলছেন, তিনি একটি ‘অপরাধ চক্র’ গঠন করে জরুরি অবস্থা জারি করে নতুন নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকার পরিকল্পনা করেন। ৭০ বছর বয়সী বলসোনারো এর আগেই ২০৩০ সাল পর্যন্ত কোনো নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য ঘোষিত হয়েছেন। তিনি ব্রাজিলের বৈদ্যুতিক ভোটিং ব্যবস্থা নিয়ে মিথ্যা অভিযোগ ছড়িয়েছেন।


আরও গুরুতর অভিযোগে বলা হয়েছে, বলসোনারো লুলা, তার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেরালদো আলকমিন ও সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আলেকজান্দ্রে দে মোরােসকে হত্যার ষড়যন্ত্র সম্পর্কেও জানতেন। বিচারপতি দে মোরােস এই মামলারও একজন বিচারক। সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলসোনারো বলেছেন, এগুলো তার বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক নিপীড়ন’। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, প্রসিকিউটররা যেন লাতিন টেলিনভেলার মতো নাটক বানাচ্ছেন।


‘রাজনৈতিক ও শারীরিক মৃত্যুদণ্ড’


বলসোনারোর সঙ্গে আরো সাত সাবেক সহযোগী অভিযুক্ত হয়েছেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন চার সাবেক মন্ত্রী, এক সাবেক নৌবাহিনী প্রধান ও গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক প্রধান। ১৯৬৪-৮৫ সালের সামরিক শাসন শেষ হওয়ার পর ব্রাজিলে একাধিক সাবেক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তবে অভ্যুত্থানের অভিযোগে বলসোনারোই প্রথম।


ফেডারেল পুলিশের ৯০০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে অভ্যুত্থান পরিকল্পনার বিস্তারিত উল্লেখ আছে, যাতে জরুরি অবস্থা জারি করে নতুন নির্বাচন ও লুলাকে হত্যার প্রস্তাব দেওয়া হয়। তবে সামরিক বাহিনীর সমর্থন না পাওয়ায় পরিকল্পনাটি ভেস্তে যায়।


২০২৩ সালের ৮ জানুয়ারির সহিংস দাঙ্গার ঘটনাও এই মামলার অন্তর্ভুক্ত। ওই দিন বলসোনারোর সমর্থকেরা লুলার অভিষেকের এক সপ্তাহ পর কংগ্রেস, প্রেসিডেন্সি ও সুপ্রিম কোর্ট ভবনে হামলা চালায়। তখন বলসোনারো যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন, কিন্তু এই দাঙ্গার নেপথ্যেও তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে সন্দেহ। নির্বাচনে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও বলসোনারো আগামী বছর নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আশা প্রকাশ করেছেন। তবে সাম্প্রতিক অস্ত্রোপচারের পর তিনি বলেন, যদি তিনি দণ্ডিত হন, তবে তা হবে ‘রাজনৈতিক ও শারীরিক মৃত্যুদণ্ড।’


সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু


সোমবার স্থানীয় সময় বিকাল ৩টা থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে। বিচারপতি দে মোরােসের নেতৃত্বে শুরু হওয়া প্রাথমিক ধাপে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাক্ষ্য দেবেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মারকো আন্তোনিও ফ্রেইরে গোমেস ও বিমানবাহিনী প্রধান কার্লোস ডি আলমেইদা বাতিস্তা জুনিয়র।


তারা আগেও তদন্তে স্বীকার করেন বলসোনারো নির্বাচনের ফলাফল উল্টে দেওয়ার আইনি উপায় খোঁজার কথা বলেন। তবে তারা এতে রাজি হননি এবং গোমেস জানান, প্রয়োজনে বলসোনারোকে গ্রেপ্তারের হুমকিও দেন। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হলে পরবর্তী ধাপে আসামিদের বক্তব্য, প্রসিকিউশনের উপস্থাপন ও আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক হবে। এরপর পাঁচ বিচারপতির প্যানেল রায় ঘোষণা করবেন।


সূত্র: এএফপি 


এসজেড