কোনো ধরনের নিয়োগপত্র ছাড়াই ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের দায়িত্বে কাজ করছেন ৪ যুবক। কিন্তু সেবাপ্রার্থীরা জানেন তারা অফিসের কর্মচারী। তবে আইনগতভাবে তাদের চাকরির নেই কোনো বৈধতা। সম্প্রতি ঘটনাটি ফাঁস হওয়ায় ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলে।
এই যুবকরা হলেন- ময়লাকান্দা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের রবিন তালুকদার, গৌরীপুর পৌরসভা ভূমি অফিসের ইমরান মাহমুদ, রাম গোপালপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের মো. রায়হান এবং ডৌহাখলা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের আল আমিন। তারা সবাই স্থানীয় বাসিন্দ।
স্থানীয় সূত্র জানায়, তারা সবাই নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের কর্মী। বিগত সরকারের সময়ে ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনের পলাতক সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আহম্মেদের ছেলে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক তানজির আহমেদ রাজীবের অনুসারী। এ কারণেই পতিত সরকারের সময়ে রাজীব প্রভাব বিস্তার করে তার অনুসারীদের উপজেলার ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলোতে ডাটা এন্ট্রি অপরারেটর হিসাবে যোগদান করায়। কিন্ত তাদের কোনো নিয়োগপত্র নেই। নেই বেতন-ভাতা। তবুও তাদের নেই কোনো অর্থ সংঙ্কট। বিষয়টি নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন রয়েছে।
উপজেলার পৌর এলাকার বাসিন্দা আহমেদ মো. নজরুল বলেন, অবৈধ এসব ডাটা এন্ট্রি অপারেটররা নায়েবের (ভূমি সহকারী কর্মকর্তা) পরেই ভূমি অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কর্মচারীর দায়িত্ব পালন করছেন। কারণ সেবাপ্রার্থীদের খাজনা, খারিজ ও নিবন্ধন থেকে শুরু করে সব ধরনের অনলাইন আবেদন করতে তাদের দারস্থ হতে হয়। আর এ কারণে তাদেরকে আবেদন প্রতি দিতে হয় নির্ধারিত সম্মানী। এক্ষেত্রে প্রতি আবেদনে ৫০০ থেকে ১০০০ হাজার টাকা দিতে হয়।
উপজেলার রামগোপালপুর ইউনিয়নের এক ভুক্তভোগী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নিয়ম মেনে আবেদন করেও আমি খারিজ পাচ্ছি না। অথচ অনেকেই ডাটা এন্ট্রি অপরারেটরদের মাধ্যমে গোপনে নায়েবের (ভূমি সহকারী কর্মকর্তা) সঙ্গে যোগসাজস করে ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকায় খারিজ নিচ্ছে।
সূত্র জানায়, প্রবীণ নায়েবদের অধিকাংশ অনলাইন সর্ম্পকে অভিজ্ঞ নয়। ফলে তারা ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের কাছে অসহায়। এছাড়া স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ায় তারা নায়েবদের ওপর অনৈতিক প্রভাববিস্তারের চেষ্টা করেন। এসব কারণে তাদের মাধ্যমে সরকারি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য এবং একজনের জমির গোপন তথ্য চলে যাচ্ছে প্রতিপক্ষের কাছে। এতে হরহামেশাই ঘটছে জমি জবরদখলসহ নানা অপরাধমূলক ঘটনা।
গৌরীপুর পৌরসভার ভূমি অফিসের নায়েব (ভূমি সহকারি কর্মকর্তা) মো. হেদায়েত উল্লাহ বলেন, আমার অফিসের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পদে অনেক আগে থেকেই এখানে কাজ করছে। আমি সম্প্রতি এখানে যোগদান করেছি। তারা কিভাবে এখানে কাজ করছে, তা আমার জানা নেই।
রামগোপালপুর ইউনিয়নের নায়েব মো. মঞ্জুরুল হক একই ধরনের তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নির্দেশে তারা ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পদে ভূমি অফিসে কাজ করে। তাদের কোনো বেতন-ভাতা নেই বলেই আমি জানি।
ময়লাকান্দা ইউনিয়নের নায়েব মো. হায়দার কবীরও দাবি করেন, আমি এই অফিসে আসার আগে থেকেই তারা কাজ করে। তাদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের ঘটনা থাকলে অভিযোগ দেন, ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে তারা কীভাবে নিয়োগ পেলেন এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য আমার জানা নেই।
এই ইউনিয়নের ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের দায়িত্বে কাজ করা মো. রবিন তালুকদার বলেন, ২০১৮ সাল থেকে আমি এই অফিসে কাজ করছি। কাজ বলতে ফাইল আনা-নেওয়া করি। আমার মতো আরও অনেকেই এভাবে বিভিন্ন ভূমি অফিসে কাজ করছে। তবে আমাদের কোনো নিয়োগ নেই।
একই ধরনের বক্তব্য রামগোপালপুর ইউনিয়নের ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের দায়িত্ব পালন করা আরকেজন মো. রায়হান বলেন, আমার কোনো নিয়োগ নেই। এসিল্যান্ডের মাধ্যমে আমি এই অফিসে কাজ করছি। আমাদের কোনো বেতন-ভাতা নেই। তবে নিবন্ধন, খারিজ ও খাজনার আবেদন করে ৫০ থেকে ১০০ বা ২০০ টাকা করে লোকজন সম্মানী দেয়। নির্ধারিত কোনো বেতন না থাকায় আবেদন করে যা পাই তা দিয়েই চলি। আমরা কাউকে জোর করি না।
ঘটনাটি নিয়ে কথা বলতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পৌর এলাকার এবং ডৌহাখলা ইউনিয়নের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ইমরান মাহমুদ এবং আল আমিনের বক্তব্য জানা যায়নি।
তবে ভূমি অফিসের ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের নিয়োগের বিষয়টি জানা নেই- বলে জানিয়েছেন গৌরীপুর উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) সুনন্দা সরকার প্রমা। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই বিষয়টি সংশ্লিষ্ট নায়েবরা দেখেন। আমি কাউকে নিয়োগ দেইনি। অনেক আগে থেকেই তারা ভূমি অফিসগুলোতে কাজ করছে। তবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে লিখিত দেন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
thebgbd.com/NIT