নামে আইকনিক রেলস্টেশন হলেও দেড় বছরেও নিশ্চিত হয়নি কোনো ধরনের যাত্রীসেবা। চলন্ত সিঁড়ি চালু না হওয়া, অপর্যাপ্ত টয়লেট, পানি কিংবা বিশ্রামের ব্যবস্থা না থাকাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত পর্যটন নগরী কক্সবাজারে নির্মিত বিশ্বমানের এই স্টেশন। একই সঙ্গে কোটি টাকার বৈদ্যুতিক তার, বৈদ্যুতিক বাল্ব, ওয়াটার বাল্ব ও নানা সরঞ্জামাদি চুরি হয়ে যাওয়ায় অরক্ষিত হয়ে পড়েছে স্টেশনটি।
কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনের ওয়াশপিট। ৩টি ওয়াশপিটে ছিল ৯’শ ওয়াটার্রিং বাল্ব, ৩’শ বৈদ্যুতিক বাল্ব আর মাটির নিচ নিয়ে চালানো প্রায় ৬ হাজার মিটার বৈদ্যুতিক তার। কিন্তু চোরের দল নিয়ে গেছে সবকিছু। যার কারণে অন্ধকারে ট্রেনের আন্ডার গিয়ার চেকিং ও ধোঁয়ামোছার কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে শ্রমিকরা।
কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনের ক্যারেজ ডিপোর উপ-সহকারি প্রকৌশলী (রেলযান পরীক্ষক) আব্দুল জলিল বলেন, গত ৩ থেকে ৪ মাস প্রচুর চুরির ঘটনা ঘটছে। মাটির নিচ দিয়ে নেয়া প্রায় ৬ হাজার মিটার বৈদ্যুতিক তার চুরি হয়েছে। যার কারণে সন্ধ্যার পর ট্রেন ওয়াশ করতে সমস্যা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ট্রেনের আন্ডার গিয়ার চেকিং করতে বাধাগ্রস্ত হতে হয়। এতে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কারণ পুরো ওয়াশপিট এলাকা অন্ধকারে থাকে। এছাড়া ৩টি ওয়াশপিটে ছিল ৯’শ ওয়াটার্রিং বাল্ব ও ৩’শ বৈদ্যুতিক বাল্বও চুরি হয়ে গেছে। গত রোববারও সেপটিক ট্যাংকের ৮টি ঢাকনা চুরি করে নিয়ে গেছে চোরের দল। পর্যাপ্ত নিরাপত্তারক্ষী না থাকায় এ অবস্থা হচ্ছে। তবে, জনবল চাওয়া হয়েছে।
২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর উদ্বোধন হলেও দেড় বছরে পূণাঙ্গভাবে চালু হয়নি স্টেশনটি। যার কারণে এখনো নিশ্চিত হয়নি কোনো ধরনের যাত্রীসেবা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, যাত্রীদের জন্য চলন্ত সিঁড়ি বসানো হলেও চালু হয়নি, নেই পর্যাপ্ত টয়লেট কিংবা পানির ব্যবস্থা। নেই যাত্রীদের বসার স্থান ও বিশ্রামাগার। আর যাত্রীদের প্রবেশ কিংবা বাহির হবার পথ একটি। যার কারণে স্টেশন কর্তৃপক্ষকে যাত্রীদের চেকিং করতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। যাত্রীদের অভিযোগ, ভোগান্তির যেন শেষ নেই স্টেশনটিতে।
ঢাকার বাসিন্দা ওমর আলী বলেন, স্টেশনের দুটি প্ল্যাটফর্মে দুটি ট্রেন। এখন দ্বিতীয় প্ল্যাটফর্মে যেতে দু’তলায় উঠতে হচ্ছে ভারি লাগেজ নিয়ে। কিন্তু ওপরে উঠে দেখি ৩টি চলন্ত সিঁড়ি বন্ধ এবং চলন্ত সিড়ির ওপরে ও নিচের অংশ দেয়া হয়েছে লোহার গ্রীল। যাতে চলন্ত সিঁড়ি দিয়ে কেউ ওঠানামা করতে না পারে। যদি চলন্ত সিঁড়ি ব্যবহার করা না গেলে তাহলে এগুলো দিয়ে লাভ কী। ভারি লাগেজ নিয়ে উঠতে নামতে খুবই কষ্ট হচ্ছে।
আরেক যাত্রী রহিম উদ্দিন বলেন, ‘কোটি কোটি টাকা খরচ করে এতো সুন্দর একটা স্টেশন করেছে, কিন্তু যাত্রী বসার জায়গা নেই। স্টেশনের ভেতরে বিশ্রামাগার রয়েছে, কিন্তু সেখানে যাওয়া যাচ্ছে না তালাবদ্ধ রয়েছে।’
ঢাকার যাত্রী ইব্রাহীম আহমেদ বলেন, বাচ্চাদের নিয়ে স্টেশনে খাওয়া-দাওয়া হয়নি। কিন্তু স্টেশনে কোন ক্যান্টিন নেই। চলন্ত সিঁড়িগুলো বন্ধ। এখানে যাত্রীদের যে চাহিদা রয়েছে সেগুলো কিন্তু পূরণ হয়নি।
রাজিয়া সুলতানা নামের এক যাত্রী বলেন, দেড় হাজার লোক স্টেশনে রয়েছে। দেখছি শুধুমাত্র একটি টয়লেট। যেখানে শিশু, নারী ও পুরুষ একসঙ্গে একই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে হচ্ছে। যা কোনোভাবে উচিত না। ভোগান্তি হচ্ছে কারণ পানির অসুবিধা, নেই সাবান, অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন।
রেলস্টেশনের টিকিট কারেক্টর শরীফুল ইসলাম বলেন, দুটি ট্রেনের যাত্রী যখন একই গেট গিয়ে প্রবেশ হচ্ছে এবং বাইরে যাচ্ছে তখন চেকিং করতে সমস্যা হচ্ছে। ভালোভাবে চেকিং করা যায় না। শুধুমাত্র একটি গেট, যা খুবই ছোট। যার কারণে চেকিং করতে গিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে তর্কাতর্কিতে জড়াতে হয়।
স্টেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে এখনো বুঝিয়ে দেয়া হয়নি আইকনিক স্টেশনটি। আর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। আর রক্ষণাবেক্ষণ মেয়াদকাল শেষ হবে সেপ্টেম্বরে।
কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনের ইনচার্জ মো. গোলাম রব্বানি বলেন, এখনো বাংলাদেশ রেলওয়েকে প্রকল্পটি পুরোপুরি বুঝিয়ে দেয়নি। অফিসিয়ালি এখনো হস্তান্তর হয়নি। আমার ট্রেন পরিচালনার স্বার্থে কয়েকটা রুম ব্যবহার করি। আমাদের কার্যক্রম চালাচ্ছি। কিন্তু অফিসিয়ালি হস্তান্তর হবার পর রেলওয়ে যখন পুরোপুরি বুঝে পাবে তখন যাত্রীদের জন্য সমস্ত কিছুই চালু করে দিতে পারব।
চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন সঙ্গে যৌথভাবে স্টেশন ভবনটি তৈরি করেছে বাংলাদেশের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড।
thebgbd.com/NIT