ঢাকা | বঙ্গাব্দ

তেলের ক্যান দিয়ে স্কুল ফি!

এম২৩-এর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সরকারি কর্তৃপক্ষ ওই এলাকায় ব্যাংকে নগদ অর্থ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।
  • অনলাইন ডেস্ক | ২২ মে, ২০২৫
তেলের ক্যান দিয়ে স্কুল ফি! গোমা শহরের একটি দোকান।

জরুরি খাদ্য কেনাকাটা চালাতে গিয়ে নগদ অর্থের অভাবে অনেকে এখন স্কুল ফি দিচ্ছেন পাম তেলের ক্যান দিয়ে—এমন বাস্তবতা দেখা দিয়েছে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলীয় শহর গোমায়, যা জানুয়ারিতে রুয়ান্ডা-সমর্থিত এম২৩ বিদ্রোহীদের দখলে চলে যায়।


ডিআর কঙ্গোর গোমা থেকে এএফপি জানায়, এম২৩-এর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সরকারি কর্তৃপক্ষ ওই এলাকায় ব্যাংকে নগদ অর্থ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। ফলে ব্যাংকগুলো বন্ধ হয়ে গেছে, এটিএমগুলোতে অর্থ নেই, এবং স্থানীয়রা নিজেদের মতো করে দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটানোর চেষ্টা করছেন।


মাজেঙ্গো স্কুলের শিক্ষক রিচার্ড মবুয়েকি বলেন, ‘এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে খাওয়ার জন্য কিছু পাওয়া।’ এক অভিভাবকের দিয়ে যাওয়া একটি তেলের ক্যান হাতে তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা কেবল টিকে থাকার চেষ্টা করছি। এই পরিস্থিতি সহ্য করা কঠিন।’ স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়, অভিভাবকেরা পণ্যের নমুনা নিয়ে স্কুলে আসেন, পরে শিক্ষকদের আগ্রহ অনুযায়ী সেটির বাজারমূল্য নির্ধারণ করা হয় এবং সে অনুসারে স্কুল হিসাব রাখে ও রশিদ প্রদান করে।


গোমার ব্যাংকিং ব্যবস্থা অচল হয়ে যাওয়ায় শহরের নতুন প্রশাসন ও স্থানীয় স্কুল কর্তৃপক্ষ মোবাইল পেমেন্ট ব্যবস্থার প্রতি উৎসাহ দিচ্ছে। তবে পূর্ব আফ্রিকার অন্যান্য দেশের মতো গোমায় এখনও এ ধরনের লেনদেন ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়নি।


জীবন-জীবিকার সংকট


নগদ রুপান্তরকারীরা অত্যধিক হার নির্ধারণ করছে, যা গরিব জনগণের নাগালের বাইরে। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে এম২৩ একটি নির্ধারিত হার চালুর ঘোষণা দিয়েছে। যারা এখনও বেতন পান, তাদের পক্ষেও ব্যাংক থেকে টাকা তোলা সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষক মবুয়েকি বলেন, অনেক কর্মজীবী মানুষের মতো তাকেও রুয়ান্ডার সীমান্ত পেরিয়ে টাকা তুলতে যেতে হয়—যা অতিরিক্ত ব্যয়ের কারণ হচ্ছে।


বৈদেশিক সংস্থায় কর্মরত এবং সরকারি চাকরিজীবীরাও একই সমস্যায় পড়েছেন। নগদ অর্থ সংকট, আন্তর্জাতিক কর্মীদের শহর ত্যাগ ও অর্থনীতির স্থবিরতা বহু মানুষকে কর্মহীন করে তুলেছে। সরকারি চাকরি হারানো গডেল কাহামবি বলেন, ‘আমরা এখন অনেক কিছুতেই খরচ কমিয়ে দিয়েছি—নতুন পোশাক নেই, দামি খাবার নেই, বিনোদনও নেই। এখন সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে বেঁচে থাকা।’


পণ্য আছে, ক্রেতা নেই


প্রয়োজনীয় পণ্য এখনও শহরে আসছে, তবে কেনা-বেচা হচ্ছে না। নির্মাণসামগ্রীর দোকানি ইনোসেন্ট বলেন, ‘পণ্য আছে, কিন্তু ক্রেতা নেই।’ বিরেরে বাজারের চারপাশ এখন ফাঁকা। লেক কিভু পাড়ি দিয়ে দক্ষিণ কিভুর উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া নৌকাগুলোও অর্ধেক খালি। মজেঙ্গো এলাকার ব্যবসায়ী নেলসন কোম্বি বলেন, ‘আগে সপ্তাহে ২০ বস্তা ভুট্টার আটা বিক্রি করতাম। এখন মাসে ১০ বস্তা বিক্রি হলে সেটাই অনেক।’ চাহিদা থাকলেও রসদ সরবরাহে প্রতিবন্ধকতা, যুদ্ধরত পক্ষগুলোর নতুন কর আরোপ ও নগদ সংকটের কারণে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে।


এম২৩ একটি আর্থিক কর্তৃপক্ষ গঠন করেছে এবং জনগণকে সেখানে সঞ্চয় জমা রাখার আহ্বান জানিয়েছে। তবে এখনো তা সফল হয়নি। বিশ্লেষকদের মতে, এই কর্তৃপক্ষের কার্যপরিধি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর আরোপিত কর কেন্দ্রীভূত করায় সীমিত থাকা উচিত। নগদ মার্কিন ডলার ও কঙ্গোর ফ্রাঁর সংকটের মধ্যে গোমা ও বুকাভুর রাস্তায় রাতে অপরাধও বেড়েছে বলে জানা গেছে।


সূত্র: এএফপি 


এসজেড