ঢাকা | বঙ্গাব্দ

আবারও গ্রেপ্তার সুব্রত বাইন, কে এই ‘সেভেন স্টার’ গ্যাং লিডার?

রাজধানীর মগবাজার, পুরান ঢাকা ও মোহাম্মদপুরের ব্যবসায়ীরা তার ‘সেভেন স্টার’ গ্যাংয়ের দাপটে সবসময় আতঙ্কে থাকতেন।
  • নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৭ মে, ২০২৫
আবারও গ্রেপ্তার সুব্রত বাইন, কে এই ‘সেভেন স্টার’ গ্যাং লিডার? ফাইল ছবি

নব্বইয়ের দশকে ঢাকার অপরাধ জগতে এক ভয়ের নাম ছিল সুব্রত বাইন। রাজধানীর মগবাজার, পুরান ঢাকা ও মোহাম্মদপুরের ব্যবসায়ীরা তার ‘সেভেন স্টার’ গ্যাংয়ের দাপটে সবসময় আতঙ্কে থাকতেন। একসময় চাইনিজ রেস্টুরেন্টে কাজ করা এই ব্যক্তি হয়ে ওঠেন ঢাকার অন্যতম কুখ্যাত আন্ডারওয়ার্ল্ড নেতা।


সাম্প্রতিক সময়ে কুষ্টিয়া থেকে সেনাবাহিনীর অভিযানে গ্রেফতার হন সুব্রত বাইন ও তার সহযোগী মোল্লা মাসুদসহ চারজন। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় দুটি পিস্তল, চারটি ম্যাগাজিন ও ১০ রাউন্ড গুলি। এর মাধ্যমে আবারও আলোচনায় এসেছে এই শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম।


সুব্রত বাইন: উত্থান থেকে অপরাধ সাম্রাজ্য

সুব্রত বাইন ১৯৯০ দশকে ঢাকার অপরাধ জগতে আবির্ভূত হন। ১৯৯১ সালে জাসদ ছাত্রলীগ নেতা মুরাদ হত্যার পর তিনি আলোচনায় আসেন। এরপর একে একে খুন, চাঁদাবাজি, জমি দখল, অস্ত্র ব্যবসাসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। তার নেতৃত্বে গঠিত 'সেভেন স্টার' গ্রুপ ছিল ঢাকার অপরাধ জগতের সবচেয়ে ভয়ংকর একটি চক্র। ১৯৯৭ সালে রাজীব নামের এক যুবককে হত্যার মাধ্যমে গ্যাংটির নৃশংসতা আরও প্রকাশ পায়।


২০০১ সালে তৎকালীন সরকার ঘোষিত শীর্ষ ২৩ সন্ত্রাসীর তালিকায় ছিল তার নাম। তার নামে এখনো ইন্টারপোলের রেড নোটিশ রয়েছে।


পারিবারিক পটভূমি

সুব্রত বাইন মগবাজারে বড় হন। পরে তার পরিবার গাজীপুরের পুবাইলে চলে যায়। বাবা বিপুল বাইন ছিলেন এনজিওর গাড়িচালক, মা কুমুলিনি বাইন গৃহিণী। তিনি চার ভাইবোনের মধ্যে বড়। তার তিন বোনের মধ্যে একজন হাসপাতাল ও অন্যজন একটি খ্রিস্টান সংস্থায় কাজ করেন।


ব্যক্তিগত জীবন

তিনি তিনবার বিয়ে করেছেন। প্রথম স্ত্রী লুসির ঘরে তার দুটি সন্তান রয়েছে। পরে লুসিকে তিনি তার এক সহযোগীর সঙ্গে বিয়ে দেন। দ্বিতীয় স্ত্রী সুইটির সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়। বর্তমানে তৃতীয় স্ত্রী জামেলা খাতুনের সঙ্গে থাকতেন, যিনি পশ্চিমবঙ্গের নদিয়ার বাসিন্দা।


পলাতক জীবন

২০০৩ সালে দেশ ছেড়ে ভারত পালান সুব্রত বাইন। কলকাতায় ব্যবসা শুরু করেন। ২০০৮ সালে তাকে গ্রেফতার করলেও পরে জামিনে মুক্তি পেয়ে নেপালে পালান। সেখানেও গ্রেফতার হন, কিন্তু পরে পলাতক হয়ে যান।


'সেভেন স্টার' গ্রুপ ও চাঁদাবাজি

সুব্রত বাইন নিজেই ৩০টির বেশি হত্যা মামলার আসামি। ‘সেভেন স্টার’ ছিল তার অপরাধ সাম্রাজ্যের মুল ভিত্তি, যা হত্যা, চাঁদাবাজি, জমি দখল, অস্ত্র ব্যবসায় জড়িত ছিল। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের চাঁদা আদায় করতো তার লোকজন, যা হুন্ডির মাধ্যমে তার কাছে পৌঁছাতো।


গ্রেফতার ও ভবিষ্যত

২৭ মে কুষ্টিয়ায় অভিযান চালিয়ে সেনাবাহিনী সুব্রত বাইনকে গ্রেপ্তার করে। এখন প্রশ্ন উঠছে—এই গ্রেফতারের পর ‘সেভেন স্টার’ গ্রুপের তৎপরতা বন্ধ হবে কিনা।


সুব্রত বাইনের গ্রেফতার নতুন করে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে আলোড়ন তুলেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে এটি একটি বড় সাফল্য হলেও, তার দীর্ঘ অপরাধজীবনের বিচার এবং চক্রের অবসান এখন সময়ের দাবি।


thebgbd.com/NIT