ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় দ্রুত কোনো অগ্রগতি হবে না বলে মঙ্গলবার সতর্ক করেছে রাশিয়া। আগের দিন তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত আলোচনায় ইউক্রেনের পক্ষ থেকে পূর্ণ ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে মস্কো।
মস্কো থেকে এএফপি জানায়, প্রায় আড়াই ঘণ্টার ওই আলোচনায় দুই পক্ষ যুদ্ধবন্দি বিনিময়ে একমত হয় এবং শান্তির প্রস্তাব হিসেবে একে অপরকে নিজেদের ‘স্মারকলিপি’ হস্তান্তর করে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেন, ‘সমাধানের বিষয়টি অত্যন্ত জটিল এবং এর সঙ্গে বহু সূক্ষ্ম বিষয় জড়িত।’ তিনি আরও বলেন, ‘তাৎক্ষণিক কোনো সমাধান বা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি প্রত্যাশা করাটা ঠিক হবে না।’
রুশ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, মস্কো ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণের চারটি অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহারকে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পূর্বশর্ত হিসেবে তুলে ধরেছে—যে সব অঞ্চলকে তারা একতরফাভাবে নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করার দাবি করছে। অন্যদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বৈঠকে পূর্ণ ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান। রাশিয়ার প্রধান আলোচক জানিয়েছেন, কিয়েভের প্রস্তাবের জবাবে তারা ফ্রন্টলাইনের কিছু অংশে দুই থেকে তিন দিনের জন্য আংশিক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছেন।
পেসকভ রাশিয়া, ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের মধ্যে সম্ভাব্য শীর্ষ বৈঠকের বিষয়েও হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘নিকট ভবিষ্যতে সেটি বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।’ তিনি জানান, ‘এমন বৈঠক কেবল তখনই সম্ভব, যদি দুই দেশের আলোচকরা একটি চুক্তিতে পৌঁছায়।’
এর আগে হোয়াইট হাউস জানায়, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ ধরনের বৈঠকের ব্যাপারে ‘উন্মুক্ত’ মনোভাব পোষণ করছেন, যা ইউক্রেন ও তুরস্কের প্রেসিডেন্টরাও সমর্থন করেছেন। মঙ্গলবার জেলেনস্কি অভিযোগ করেন, সীমান্তবর্তী সুমি শহরে রুশ বাহিনীর রকেট হামলায় তিনজন নিহত হয়েছেন এবং হামলাটি ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ বেসামরিকদের লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই হামলাই রাশিয়ার তথাকথিত শান্তি ইচ্ছার প্রকৃত চেহারা প্রকাশ করে।’
জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর কাছে ‘নির্ণায়ক পদক্ষেপ’ গ্রহণের আহ্বান জানান, যেন রাশিয়াকে যুদ্ধবিরতিতে বাধ্য করা যায়। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন রাশিয়া নতুন নতুন অজুহাত তৈরি করছে তাদের ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা ও আমাদের প্রতিরক্ষায় আরও জোরালো সহায়তা প্রয়োজনীয় করে তুলতে।’
খারকিভ অঞ্চলেও রাশিয়ার হামলায় আরও তিনজন নিহত হয়েছেন। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা রুশ সীমান্ত থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সুমি অঞ্চলের আন্দ্রিভকা গ্রাম দখল করেছে। জেলেনস্কি আগেই জানিয়েছেন, ওই অঞ্চলে রাশিয়া প্রায় ৫০ হাজার সেনা সমাবেশ করেছে।
এদিকে, ইউক্রেনের নিরাপত্তা সংস্থা (এসবিইউ) দাবি করেছে, তারা পানির নিচে স্থাপিত বিস্ফোরক দিয়ে ক্রিমিয়া সেতুর একটি স্তম্ভে হামলা চালিয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা এখনও স্পষ্ট নয়। মঙ্গলবার সকালে সেতুটি সাময়িকভাবে বন্ধ থাকলেও পরবর্তীতে তা দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়। জেলেনস্কির কার্যালয় জানিয়েছে, ইউক্রেনের শীর্ষ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল ওয়াশিংটনে পৌঁছেছে। তাদের আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, অর্থনৈতিক সহায়তা এবং সম্ভাব্য নতুন নিষেধাজ্ঞা।
সূত্র: এএফপি
এসজেড