ঢাকা | বঙ্গাব্দ

ইহুদিদের লাল গরুর রহস্য, “থার্ড টেম্পল” কতদূর?

ইহুদিদের লাল গরুর রহস্য, ধর্মগ্রন্থে যা আছে ইহুদিদের পবিত্র গ্রন্থ তালমুদ এর ব্যাখ্যানুযায়ী, কেয়ামতের আগে তাদের ত্রাণকর্তার আগমন ঘটবে।
  • নিজস্ব প্রতিবেদক | ০৯ জুন, ২০২৫
ইহুদিদের লাল গরুর রহস্য, “থার্ড টেম্পল” কতদূর? ছবি : সংগৃহীত ।


প্রথম দুটি শর্ত পূরণ হয়েছে বলে বিশ্বাস করে ইহুদিরা। অর্থাৎ তারা ইসরাইলে জড়ো হয়েছে এবং সার্বভৌম রাষ্ট্রও গঠন করেছে। এখন বাকি আছে তৃতীয় শর্ত। সেই শর্ত পূরণ করতে হলে আল-আকসা মসজিদ ভাঙতে হবে আর সেখানেই সোলাইমানি মন্দির বা থার্ড টেম্পল গড়তে হবে।


আর এটি করার জন্য তাদের পবিত্র হতে হবে। পবিত্র হওয়ার জন্য প্রয়োজন লাল গাভী। তাদের ধর্মগ্রন্থের ভাষ্যমতে, লাল গাভী তিন বছর বয়সে উপনীত হলে তারা সেটিকে জবাই করে রক্ত ও আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে সেই ছাই মেখে ইহুদি সম্প্রদায় পবিত্র হবে।


বহু খোঁজাখুঁজির পর সেই আকাঙ্ক্ষিত লাল গাভীর সন্ধান তারা পেয়ে গেছে। এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বোনেহ ইসরায়েল নামের একটি ইহুদি সংগঠন গত বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঁচটি লাল গরু আমদানি করেছে। সংগঠনটির মুখপাত্র হাইম বারকোভিতস বলেছেন, আল-আকসা মসজিদের অদূরেই জাবাল উজ জয়তুন বা মাউন্ট অলিভ এলাকায় একটি খামারে গরুগুলোকে রাখা হয়েছে।


তারা ২৮ কিংবা ২৯ মার্চ এ গাভি বলি দিবে। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ছাই বানিয়ে গায়ে মেখে দুনিয়ার নাপাক ইহুদিরা পাক হবে। তারপর তারা যে কোনোভাবে আল-আকসা ধ্বংস করে তাদের ‘টেম্পল’ তৈরি করবে। এ বিষয়ে গত বছর থেকেই আন্তর্জাতিক কয়েকটি পত্রিকা নিউজ করেছে। scheerpost লিখেছে, The Red Heifer Project: Israeli Government Part of Plan to Build Third Temple at Al-Aqsa.


france24 লিখেছে, The Israelis set for new Jewish temple on Al-Aqsa site. জাকার্তা পোস্টও এ বিষয়ে নিউজ করেছে, The Israelis set for new Jewish temple on Al-Aqsa site.


সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো- থার্ড টেম্পল করার জন্য পবিত্র মসজিদ আল-আকসা ভেঙে ফেলার পরিকল্পনা তাদের চূড়ান্ত। ইসরায়েলের কট্টর ইহুদিদের একাধিক গোষ্ঠী বহু বছর ধরে আল-আকসা মসজিদ ভেঙে সেই জায়গায় ‘থার্ড টেম্পল’ (তৃতীয় মন্দির তথা সোলাইমানি মন্দির) নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। সবচেয়ে বড় ও প্রভাবশালী যে সংগঠন এই কাজে দাঁড়িয়ে গেছে, সেটির নাম টেম্পল ইনস্টিটিউট। আরেক সংগঠনের নাম ‘বোনেহ ইসরায়েল’। এতে ইহুদি ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরা একজোট হয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করে। আরেকটি প্রতিষ্ঠানের নাম ‘রিটার্নিং টু দ্য মাউন্ট’। 


প্রস্তাবিত থার্ড টেম্পল নির্মাণের মিশনে সবচেয়ে এগিয়ে আছে টেম্পল ইনস্টিটিউট। এই প্রতিষ্ঠান মন্দিরটি নির্মাণের জন্য অনেক আগে থেকেই সাজসরঞ্জাম প্রস্তুত করছে। মন্দির প্রতিষ্ঠার সময় পুরোহিতেরা যেসব পোশাক পরবে, তা আগেভাগেই তারা বানিয়ে রেখেছে। তাওরাতের নির্দেশনা অনুযায়ী মন্দিরের জন্য তামার জলপাত্র (কপার লিভার), ২৪ ক্যারেট সোনা দিয়ে বানানো ৪৫ কেজি ওজনের আলোকদানিসহ (গোল্ডেন ম্যানোরাহ) নানা ধরনের আসবাব তারা তৈরি করে রেখেছে। টেম্পল ইনস্টিটিউটের প্রকাশ করা ভিডিওতে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেরুজালেরেমের ওল্ড সিটির ইহুদি মহল্লার সেন্ট্রাল প্লাজায় এসব সংরক্ষিত আছে।


থার্ড টেম্পল কী


জেরুজালেমের আজকের আল-আকসা মসজিদ যেখানে অবস্থিত, ঠিক এখানেই নবী সোলাইমান (আ.) মসজিদটি বানিয়েছিলেন। নবী সোলাইমান (আ.) ইহুদিদের কাছে কিং সলোমন বলে পরিচিত। ইহুদিরা যেহেতু ইসরায়েলের (ইয়াকুব নবীর; বাইবেলের ভাষায় জ্যাকব) এর বংশধর; সেহেতু সোলাইমান (আ.) বা কিং সলোমন ইহুদিদের কাছে পবিত্র পুরুষ। সোলাইমানের বানানো এই মসজিদ বা উপাসনালয়ই হলো ইহুদিদের ‘ফার্স্ট টেম্পল’। 


৫৮৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ইরাকের ব্যাবিলনের শাসক বখতে নাছর (পশ্চিমা বিশ্বে যিনি ব্যাবিলনের সম্রাট দ্বিতীয় নেবুচাদনেজার নামে পরিচিত) হামলা চালিয়ে এই ফার্স্ট টেম্পল গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন এবং সব বনি ইসরায়েল বা সব ইহুদিকে দাস হিসেবে বন্দী করে ইরাকে নিয়ে গিয়েছিলেন। এরপর পারস্য শাসকেরা বখতে নাছরের সাম্রাজ্যকে পরাজিত করে বনি ইসরায়েল তথা ইহুদিদের ইরাক থেকে মুক্ত করে আবার ফিলিস্তিনে নিয়ে আসেন। ধ্বংস করে ফেলা সোলাইমানের মসজিদ বা ফার্স্ট টেম্পলের ওপর ৫১৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে আবার আরেকটি উপাসনালয় নির্মাণ করার কাজ শুরু হয়। এটিকে বলা হয় ‘সেকেন্ড টেম্পল’। 


পরে রোমানরা পারস্যদের পরাজিত করে বাইতুল মুকাদ্দাস বা জেরুজালেম দখল করে এবং ৭০ খ্রিষ্টাব্দে তারা সেকেন্ড টেম্পলও ধ্বংস করে ফেলে। বর্তমানে আল আকসা বলতে পুরো কম্পাউন্ডকে বোঝানো হয়। এই কম্পাউন্ডের চার দেয়ালের মধ্যে থাকা কিবলি মসজিদ, কুব্বাতুস সাখরা (ডোম অব দ্য রক) ও বুরাক মসজিদ—এই তিন মসজিদের সমন্বয়ই হলো আল আকসা। মূল আল আকসা বা কিবলি মসজিদ হলো ধূসর সীসার প্লেট দিয়ে আচ্ছাদিত গম্বুজওয়ালা স্থাপনাটি। তবে মিডিয়ায় আল আকসা নামে বেশি প্রসিদ্ধ সোনালী গম্বুজের স্থাপনার নাম কুব্বাতুস সাখরা বা ডোম অব দ্য রক। ইহুদিদের মূল লক্ষ্যস্থল হলো এই ডোম অব দ্য রক যেটিকে তারা টেম্পল মাউন্ট বলে। তারা এর হিব্রু নাম দিয়েছে, ‘হার হাবাইত’। এই টেম্পল মাউন্টের স্থলেই আদি সোলাইমানি মন্দিরের নকশায় থার্ড টেম্পল বানানোর পরিকল্পনা আছে ইহুদি কট্টরপন্থীদের।


পবিত্র কোরআনে বর্ণিত গরুর কথা


গরুর সাথে ইহুদি জাতির সম্পর্ক নতুন নয়, এটা খুব পুরানো। হযরত মুসা (আ.) এর জাতির গরু প্রীতি নিয়ে পবিত্র কোরআনে বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, যখন মুসা (আ.) তার সম্প্রদায়কে বললেন, আল্লাহ তোমাদের একটি গরু জবাই করতে বলেছেন। তারা বলল, তুমি কি আমাদের সাথে  উপহাস করছ?


মুসা (আ.) বললেন, মুর্খদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে আমি আল্লাহর আশ্রয়  প্রার্থনা করছি। তারা বলল, তুমি তোমার পালনকর্তার কাছে আমাদের জন্য প্রার্থনা কর, যেন সেটির রূপ বিশ্লেষণ করা হয়। মুসা (আ.) বললেন, তিনি বলছেন, সেটা হবে একটা গাভী, যা বৃদ্ধ নয় এবং কুমারীও নয়- বার্ধক্য ও যৌবনের মাঝামাঝি  বয়সের। এখন আদিষ্ট কাজ করে ফেল। তারা বলল, তোমার পালনকর্তার কাছে আমাদের জন্য প্রার্থনা কর যে, তার রং কিরূপ হবে? মুসা (আ.) বললেন, তিনি বলেছেন যে, গাঢ় পীতবর্ণের গাভী- যা দর্শকদের চমৎকৃত করবে। তারা বলল, আপনি প্রভুর কাছে প্রার্থনা করুন- তিনি বলে দিন যে, সেটা কিরূপ?


কেননা, গরু আমাদের কাছে সাদৃশ্যশীল মনে হয়। ইনশাআল্লাহ এবার আমরা অবশ্যই পথপ্রাপ্ত হব। মুসা (আ.) বললেন, তিনি বলেন যে, এ গাভী ভূকর্ষণ ও জল সেচনের শ্রমে অভ্যস্ত নয়- হবে নিষ্কলঙ্ক, নিখুঁত। তারা বলল, এবার সঠিক তথ্য এনেছ। অতঃপর তারা সেটা  জবাই করল, অথচ জবাই করবে বলে মনে হচ্ছিল না। (সুরা বাকারা: ৬৭-৭১)


বাইবেলে বর্ণিত গরুর ধরণের সাথে কোরআনে বর্ণিত গরুর বেশ কিছু মিল আছে, যেমন, গাভী হতে হবে, মাঝারী বয়সের হতে হবে, কোনো চাষাবাদ বা অন্য কাজে ব্যবহৃত হয়নি এমন হতে হবে, নিখুঁত ও কলঙ্ক বিহীন হতে হবে, তাদের ধর্মগ্রন্থে আছে, ‘হাইকলের জমি আমাদের হাতে আসা মাত্রই আল্লাহ লাল গাভীকে আদেশ করবেন, সে হাম্বা ধ্বনিতে মুখর হয়ে উঠবে তারপর আমরা শুরু করবো হাইকল নির্মাণ। বনী ইসরাইলের নবীগণ এই ভবিষ্যৎবাণী করে গেছেন’ (আখবারুশ-শারক ১৩/০৫/১৯৯৭)


লাল গরু সম্পর্কে তাওরাতে যা আছে


তাওরাতের গণনা পুস্তকের ১৯ অনুচ্ছেদের ১ থেকে ১৭ তম শ্লোকে গাভিটির বৈশিষ্ট্য ও শুদ্ধিকরণ পানি প্রস্তুতের বিস্তারিত বর্ণনা এসেছে। সেখানে বলা আছে: ‘সদাপ্রভু মোসেজ (মুসা আ.) ও হারোনকে (মুসা আ.-এর ভাই হারুন আ.) বললেন, ‘এটি একটি বিধি যেটি অনুযায়ী আমি আদেশ করছি: ইসরায়েলের সন্তানদের (বনী ইসরায়েলদের) বলে দাও, তারা যেন গায়ে কোনো খুঁত নেই এবং কাঁধে জোয়াল টানেনি এমন একটি লাল গরু নিয়ে আসে।


তোমরা এলিয়েজার যাজককে (ইসলামে যিনি ইলিয়াস আ.) সেই গরু দেবে তারপর গরুটাকে শিবিরের বাইরে নিয়ে যাবে এবং এলিয়েজারের সামনে সেটিকে বলি দেবে। এরপর এলিয়েজার যাজক সেই বলি দেওয়া গরুর রক্ত আঙুলে মাখিয়ে তা শিবিরে জড়ো হওয়া সবার সামনে সাত বার ছিটিয়ে দেবে। তার সামনেই সেই বলি দেওয়া গরু পোড়ানো হবে; সেটির গোবরসহ চামড়া, মাংস ও রক্ত পোড়ানো হবে। যাজক তখন দারুবৃক্ষ, হাইসোপ (এক ধরনের তৃণবিশেষ) পুড়তে থাকা গরুর ওপর ফেলে দেবে। তখন যাজক তার পোশাক ধোবে ও শরীর জলে ধোবে। পরে শিবিরে ঢুকতে পারবে যদিও যাজক সন্ধ্যা পর্যন্ত অশুচি থাকবে।’ (তাওরাত, অনুচ্ছেদ ১৯, শ্লোক ২-৮)


আন্তর্জাতিক মিডিয়ার বক্তব্য


ইসরায়েলে হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলা এসব কারণকে কেন্দ্র করেই হয়েছিল বলে আন্তর্জাতিক মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। ৪ নভেম্বর মিডল ইস্ট আইয়ের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামাসের কাছে সুনির্দিষ্টভাবে খবর ছিল, আগামী বছরের এপ্রিলে যে পাসওভার বা পেসাখ উৎসব হবে, সে সময়ই আল আকসার নিকটস্থ মাউন্ট অলিভ এলাকায় আমেরিকা থেকে আনা লাল গরুগুলো বলি দেওয়া হবে। সেই গরুর দেহ পোড়ানো ছাই দিয়ে শুচিকরণ পানি প্রস্তুত করে ইহুদি যাজকদের পবিত্র করা হবে। সেটি করা হয়ে গেলে থার্ড টেম্পল নির্মানের পথে ধর্মীয় কোনো বাধা থাকবে না। তাই আল আকসাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতেই হামাস ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছে।


প্রতিবেদনে বলা হয়, হামাস মনে করে, ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস পশ্চিমা এবং ইসরায়েলের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে গদিতে আছেন। তিনি বা তার দল ইহুদিদের থার্ড টেম্পল নির্মাণে বাধা দেবে না। কিন্তু হামাস বসে থাকতে পারে না। এ কারণে তারা বহু প্রাণহানি হবে জেনেও আল আকসাকে রক্ষা করতে ৭ অক্টোবর হামলা চালিয়েছে। আর হামাসকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করে আল আকসা দখল নির্বিঘ্ন করতে ইসরায়েল গাজায় এখন গণহত্যা চালাচ্ছে। 


মিডল ইস্ট আই-এর ওই প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, একটি সূত্র তাদের জানিয়েছে, আল-আকসাকে ইতিমধ্যেই কার্যত দুই ভাগ করে ফেলা হয়েছে। মুসলমানেরা সেখানে যেমন নামাজ আদায় করে, তেমনি বসতি স্থাপনকারী ইহুদিরা ওই কম্পাউন্ডে ‘সবজি বলি’ দিয়ে থাকে। সূত্রটি বলেছে, থার্ড টেম্পল নির্মানের আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা লাল গরু বলি দেওয়াই বাকি আছে। যদি তারা এটি করতে পারে, তাহলে সেটি হবে থার্ড টেম্পল পুনর্নির্মাণের সবুজ সংকেত।


এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তেল আবিবের কাছে একদল উগ্র ইহুদি জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী ধর্মপ্রাণ ইহুদিদের নিয়ে নিয়মিত বিশেষ প্রার্থনা সংগীতের মহড়া দিচ্ছে। থার্ড টেম্পল নির্মাণের কাজ শুরুর সময় এই সংগীত গাওয়া হবে। এই সম্মিলিত প্রার্থনাগীতির অন্যতম আয়োজক শামুয়েল কাম এএফপিকে বলেছেন, তারা দুই হাজার বছর ধরে অপেক্ষা করছেন। সেই অপেক্ষা শেষ হতে চলেছে। তিনি বলেছেন, প্রাচীন সোলাইমানি মন্দিরে ইহুদিদের একটি গোষ্ঠী প্রার্থনাগীতি গাইত। সেই গোষ্ঠীর নাম ছিল লেভি। শামুয়েল নিজেকে সেই প্রাচীন লেভি গোষ্ঠীর বংশধর বলে দাবি করেছেন।


এই প্রার্থনাগীতির প্রশিক্ষক মেনাহেম রোজেনথাল বলেছেন, ‘মন্দির যখন প্রতিষ্ঠিত হবে, তখন আমরা সব লেভি ইহুদিদের মন্দিরে এসে গান গাওয়ার জন্য ডাকব। তার আগে সবাইকে এই প্রার্থনাগীতি গাওয়া শেখাচ্ছি।’


বোনেহ ইসরায়েলের মুখপাত্র হাইম বারকোভিতস বলেন, ‘আপনি এটি নিয়ে যা ইচ্ছা বলতে পারেন। আমরা মনে করি, এটি ইহুদিদের জায়গা এবং এখানেই (আল-আকসা মসজিদ) আমরা তৃতীয় মন্দির বানাব। এটি এখন শুধু সময়ের ব্যাপার।’


মুসলমানদের উদ্বেগ


মসজিদে আকসা ভেঙে থার্ড টেম্বল তৈরির বিষয়টি নিয়ে মুসলমানরা উদ্বিগ্ন। ইসরাইলের রাজনীতি ও রাষ্ট্রপরিচালনায় ধর্মীয় বিষয়গুলো প্রাধান্য পায় এ কারণে অনেকসময় আন্তর্জাতিক চাপকেও তারা উপেক্ষা করে। ইসরাইলের নেতাদের মুখেও তাদের ধর্মীয় বিষয়গুলোর গুরুত্ব উঠে আসে। ২০১৮ সালের ১৪ মে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আল-আকসার স্থলে থার্ড টেম্পল বানানোর বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি তার ভাষণে বলেছিলেন, (টাইমস অব ইসরায়েল–এ প্রকাশিত নেতানিয়াহুর ভাষণের পূর্ণাঙ্গ টেক্সট): 


‘এই জেরুজালেমে আব্রাহাম [ইসলামে যিনি পয়গম্বর ইব্রাহিম (আ.) ] ইমানের পরীক্ষায় পাস করেছিলেন এবং আমাদের জাতির পিতার মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। এই জেরুজালেমে কিং ডেভিড [ইসলামে যিনি পয়গম্বর দাউদ (আ.) ] তিন হাজার বছর আগে আমাদের রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই জেরুজালেমে কিং সলোমন [ইসলামে যিনি পয়গম্বর সোলাইমান (আ.) ] আমাদের মন্দির (সোলাইমানি মন্দির) গড়েছিলেন, যা বহু শতাব্দী টিকে ছিল। এই জেরুজালেমে ব্যাবিলনে নির্বাসিত ইহুদিরা ফিরে এসে (ধ্বংস হওয়া) মন্দির পুনঃস্থাপন করেছিল, যা আরও বহু শতাব্দী টিকে ছিল। এই জেরুজালেমে মাকাবিরা (ইহুদিদের প্রাচীন একটি ধর্মীয় গোষ্ঠী) আবার ধ্বংস হওয়া সেই মন্দিরকে পুনঃস্থাপন করেছিল এবং এই ভূমিতেই ইহুদি সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল। এরও প্রায় দুই হাজার বছর পরে এখানেই, এই জেরুজালেমে ইসরায়েলের সেনারা তিনটি অমর শব্দ বলেছিল, “হার হাবাইত বেয়াদেইনু” (টেম্পল মাউন্ট আমাদের হাতে)। এই শব্দগুলো সমগ্র ইহুদি জাতির আত্মাকে উদ্দীপ্ত করেছিল। আজ আমরা সেই জেরুজালেমে একত্র হয়েছি এবং এখানেই আমাদের থাকতে হবে।’


এই যখন বাস্তবতা, তখন আল-আকসা মসজিদের অস্তিত্ব নিয়ে মুসলিম বিশ্বের উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ থাকে না।


thebgbd.com/NA