ফাঁস হওয়া এক টেলিফোন কথোপকথন ঘিরে রাজনৈতিক ও বিচারিক সংকটের মুখে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা সোমবার মন্ত্রিসভা পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেছেন। এই বিতর্কিত ফোনালাপ তার সরকারের পতনের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলেছে।
ব্যাংকক থেকে এএফপি জানায়, বিতর্কিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার ৩৮ বছর বয়সী কন্যা পেতংতার্ন গত সপ্তাহে প্রধান জোটসঙ্গীর সরকার ত্যাগের পর খালি হওয়া মন্ত্রণালয়গুলোর দায়িত্ব নতুন করে বণ্টন শুরু করেছেন। ওই সিদ্ধান্তে তার সরকার প্রায় ভেঙেই পড়ার মুখে। মাত্র এক বছর হয়নি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই পেতংতার্ন রাজনৈতিক টানাপড়েনের মুখে রয়েছেন। এখন তার বিরুদ্ধে সাংবিধানিক আদালতে একটি মামলাও চলছে। সেখানে দোষী সাব্যস্ত হলে তিনি পদচ্যুত হতে পারেন।
ফাঁস হওয়া একটি ফোনালাপে সাবেক কম্বোডীয় নেতা হুন সেনের সঙ্গে দেশীয় সেনাবাহিনী ও সীমান্ত ইস্যু নিয়ে আলোচনার সময় তাকে ‘দেশের সম্মান ক্ষুণ্ন করা’ ও ‘সেনাবাহিনীকে অবমাননা’ করার অভিযোগে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। সেই বিতর্কের পর তার পদত্যাগ বা নতুন নির্বাচনের দাবি জোরালো হয়। এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে পেতংতার্নের ফেউ থাই পার্টি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার থেকে বেরিয়ে যায় রক্ষণশীল ভুমজাইথাই পার্টি। এতে সংসদে সরকার মাত্র কয়েকটি আসনের ওপর ভর করে টিকে আছে।
তবে সংকট কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে। জোটের বাকি ১০টি দল সরকারের পাশে থাকবে বলে জানিয়েছে। ফেউ থাই পার্টির মহাসচিব সোরাওয়ং থিয়েনথং এএফপিকে সোমবার বলেন, ‘বাকি কোনো দলই সরকার থেকে সরে আসছে না। তারা সবাই একসঙ্গে থাকছে।’ তিনি আরও জানান, ‘প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভা পুনর্গঠন নিয়ে অন্য রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।’
সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভার নতুন গঠন শুক্রবারের মধ্যে চূড়ান্ত হবে। তবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ কম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্ত উত্তেজনা এখনো চলছে। থাইল্যান্ডের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তের কয়েকটি এলাকা নিয়ে পুরনো বিরোধ গত মাসে আবারও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং সামরিক সংঘর্ষে এক কম্বোডীয় সেনা নিহত হয়।
উত্তেজনা এখনো পুরোপুরি প্রশমিত হয়নি। এরই মধ্যে রবিবার কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত থাইল্যান্ড থেকে জ্বালানি ও গ্যাস আমদানি স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। সোমবার তিনি বলেন, ‘সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চাবিকাঠি থাইল্যান্ডের হাতেই। এই বিরোধের জন্য দায়ী থাই জাতীয়তাবাদ ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতি।’
ভুমজাইথাই পার্টির বেরিয়ে যাওয়ার পর সরকার এখন পার্লামেন্টে মাত্র কয়েকটি ভোটের ব্যবধানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রেখেছে, ফলে তা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। এই সুযোগে থাকসিনবিরোধী রাজনৈতিক একটি দল শনিবার প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্নের পদত্যাগ দাবিতে বড় সমাবেশ আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে। এই আন্দোলনেরাই অতীতে থাকসিন পরিবারের বেশ কয়েকজন নেতার পতনের পথ তৈরি করে।
তবে পার্লামেন্ট সংকটের চেয়ে বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে সাংবিধানিক আদালতের মামলা। একদল রক্ষণশীল সিনেটর পেতংতার্নকে হুন সেনের সঙ্গে কথোপকথনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে আদালতে তুলেছে। একই আদালত গত বছর আগস্টে তার পূর্বসূরি স্রেত্থা থাভিসিনকে ‘নৈতিকতার প্রশ্নে’ প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে অপসারণ করে। স্রেত্থা ছিলেন থাকসিন ঘনিষ্ঠদের মধ্যে সর্বশেষ যিনি আদালতের আদেশ বা সামরিক হস্তক্ষেপে ক্ষমতাচ্যুত হন। এর আগেও থাকসিন নিজে ও তার বোন ইংলাক সিনাওয়াত্রা একই পরিণতির শিকার হয়েছেন।
দুই দশক থাইল্যান্ডের রাজনীতি বারবার সামরিক বাহিনী ও রাজতন্ত্রপন্থী অভিজাত গোষ্ঠীর সঙ্গে থাকসিন ঘনিষ্ঠ দলগুলোর সংঘাতে জর্জরিত। ৭৫ বছর বয়সী থাকসিন এখনো গ্রামীণ জনগণের মধ্যে জনপ্রিয় হলেও থাইল্যান্ডের ক্ষমতাবান এলিটদের মধ্যে তিনি অপছন্দের ও সন্দেহের পাত্র।
এর মধ্যেই সিনাওয়াত্র পরিবারে আরেক দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে। আগামী সপ্তাহে ঠাকসিনের বিরুদ্ধে রাজাকে অবমাননার অভিযোগে একটি ফৌজদারি মামলার বিচার শুরু হচ্ছে। এক দশক আগে দক্ষিণ কোরিয়ার এক গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি রাজপরিবার নিয়ে মন্তব্য করেন। থাইল্যান্ডের কঠোর রাজদ্রোহ আইনের অধীনে রাজা মহা ভাজিরালংকর্ন বা তার ঘনিষ্ঠদের অবমাননার প্রতিটি অভিযোগে সর্বোচ্চ ১৫ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
সূত্র: এএফপি
এসজেড