ঢাকা | বঙ্গাব্দ

ইরানের নিহত শীর্ষ জেনারেল ও পরমাণু বিজ্ঞানীদের বিদায়, দাফনে লাখো মানুষের ঢল

ইরানের সর্বোচ্চ সামরিক কর্মকর্তা ও সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মোহাম্মদ বাঘেরি, যিনি ইসরায়েলি হামলায় তার স্ত্রী ও কন্যাসহ নিহত হন, তাকেও দাফন করা হয় এদিন।
  • অনলাইন ডেস্ক | ২৮ জুন, ২০২৫
ইরানের নিহত শীর্ষ জেনারেল ও পরমাণু বিজ্ঞানীদের বিদায়, দাফনে লাখো মানুষের ঢল ফাইল ছবি

ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনব্যাপী সংঘাতের পর ইরানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন সম্পন্ন হয়েছে প্রায় ৬০ জন নিহতের, যাদের মধ্যে রয়েছেন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা, পরমাণু বিজ্ঞানী ও কূটনীতিকরা। শনিবার রাজধানী তেহরানের ইংলাব স্কয়ারের কাছে বিশাল জমায়েতে অনুষ্ঠিত এই দাফন অনুষ্ঠানে লাখো মানুষ অংশ নেন।

জাতীয় পতাকায় মোড়ানো কফিনের পাশে ছিল নিহতদের ছবি। উপস্থিত জনতা কালো পোশাকে শোক প্রকাশ করেন, ইরানের পতাকা নেড়ে ও স্লোগান দিয়ে নিহতদের স্মরণ করেন।

ইরানের সর্বোচ্চ সামরিক কর্মকর্তা ও সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মোহাম্মদ বাঘেরি, যিনি ইসরায়েলি হামলায় তার স্ত্রী ও কন্যাসহ নিহত হন, তাকেও দাফন করা হয় এদিন।

রাষ্ট্রীয় টিভি জানায়, অনুষ্ঠানে অংশ নেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান এবং সর্বোচ্চ নেতার উপদেষ্টা রিয়ার অ্যাডমিরাল আলী শামখানি, যিনি চলতি মাসের শুরুতে ইসরায়েলি হামলায় আহত হন।

দাফনকারীদের মধ্যে ছিলেন মোহাম্মদ মেহদি তেহরানচি, তেহরানের আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ও পরমাণু গবেষক। আরও বহু বিজ্ঞানী ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাও এদিন সমাহিত হন।

এই সংঘাতের সমাপ্তি ঘটে গত সপ্তাহে এক যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালায়। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ইরান যদি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে উদ্বেগজনক মাত্রায় পৌঁছায়, তাহলে তিনি “নিঃসন্দেহে” ফের হামলা চালাতে প্রস্তুত।

ট্রাম্প বলেন, “আমি খামেনি কোথায় আশ্রয়ে ছিলেন তা জানতাম, তাকে ধ্বংসের হাত থেকে আমি বাঁচিয়েছি।” তিনি আরও দাবি করেন, “ইরান সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়েছে।”

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি ট্রাম্পের মন্তব্যকে “অমর্যাদাকর ও অগ্রহণযোগ্য” বলে আখ্যায়িত করে বলেন, “যদি সত্যিই কোনো চুক্তির ইচ্ছা থাকে, তাহলে সর্বোচ্চ নেতার প্রতি অসম্মান বন্ধ করতে হবে।”

তিনি আরও স্বীকার করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের যৌথ হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে “গুরুতর ও অতিরিক্ত ক্ষতি” হয়েছে।

আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (IAEA) প্রধান রাফায়েল গ্রোসি জানান, ইরানের কতটা পারমাণবিক সক্ষমতা ধ্বংস বা স্থানান্তরিত হয়েছে, তা এখনো নির্ধারিত নয়। তিনি বলেন, “এই সমস্যার সামরিক সমাধান নেই, একমাত্র সমঝোতার মাধ্যমেই স্থায়ী সমাধান সম্ভব।”

ইরান জানিয়েছে, এই সংঘাতে দেশটির ৬২৭ জন নিহত হয়েছেন। অপরদিকে, ইসরায়েল দাবি করেছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তাদের ২৮ জন নিহত হয়েছে।

এই দাফন অনুষ্ঠান শুধু নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নয়, বরং এক গম্ভীর বার্তাও—ইরান এখনো প্রতিরোধে প্রস্তুত এবং নতুন করে সংঘাত এড়াতে আন্তর্জাতিকভাবে উত্তেজনা প্রশমন এখন সময়ের দাবি।


thebgbd.com/NIT