ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অ্যান্টি-ল্যান্ডমাইন অটোয়া কনভেনশন থেকে সরে যেতে রোববার একটি ডিক্রি জারি করেছেন করেছেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক নথিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
কিয়েভ থেকে এএফপি জানায়, জেলেনস্কির ভাষায়, আমি এই মর্মে ডিক্রি জারি করছি যে, জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০২৫ সালের ২৯ জুন ইউক্রেন অটোয়া কনভেনশন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে। তবে এই সিদ্ধান্ত বলবৎ করতে ইউক্রেনীয় পার্লামেন্টে তা অনুমোদিত হতে হবে এবং জাতিসংঘকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করতে হবে।
মস্কোর আগ্রাসনের তিন বছরের বেশি সময় পর এই পদক্ষেপ নেওয়া হলো। এর আগেই রাশিয়ার প্রতিবেশী ও ইউক্রেনের মিত্র রাষ্ট্রসমূহ— পোল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া, লাটভিয়া ও এস্তোনিয়া- সবাই একই সিদ্ধান্ত নেয়। তবে চলতি বছরের মার্চে মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করে।
রাশিয়ার আগ্রাসনের মুখে ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, নাগরিকদের নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষাকে নিঃশর্ত অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রয়োজনেই ইউক্রেন এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, এটি অত্যন্ত কঠিন, কিন্তু অপরিহার্য সিদ্ধান্ত-আমাদের ভূখণ্ডকে দখলমুক্ত রাখতে এবং রুশ বাহিনীর বর্বরতা থেকে আমাদের মানুষকে রক্ষা করতে এটি জরুরি।
ল্যান্ডমাইন হলো এক ধরনের বিস্ফোরক অস্ত্র। এটি মাটিতে পুঁতে রাখা হয় এবং সাধারণত কোনো মানুষ বা যানবাহন এর ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় বিস্ফোরিত হয়। ল্যান্ডমাইনের দুটি ধরন রয়েছে। একটি হলো- অ্যান্টি পার্সোনেল মাইন, যা মানুষের (সৈন্য বা বেসামরিক নাগরিক) ক্ষতি করতে ব্যবহার করা হয়। আরেকটি হলো-অ্যান্টি ট্যাংক মাইন, যা হালকা বা ভারী বর্মযান (বিশেষ করে ট্যাঙ্ক) ধ্বংসের জন্য ব্যবহার করা হয়।
অ্যান্টি-ল্যান্ডমাইন অটোয়া কনভেনশনের অধীনে সদস্য রাষ্ট্রগুলো অ্যান্টি-পার্সোনেল মাইন সংগ্রহ, উৎপাদন, মজুদ বা ব্যবহারে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা মেনে চলে। এ ধরনের মাইন সাধারণত মাটিতে পুঁতে রাখা হয়। এটি তাৎক্ষণিক প্রাণঘাতী নাও হলেও বহু মানুষকে পঙ্গু করে দেয়। এছাড়া, যুদ্ধ শেষে বহুদিন ধরে অবিস্ফোরিত অবস্থায় থেকে যাওয়ার কারণে বেসামরিক মানুষের জন্য চরম ঝুঁকি তৈরি হয় বলে জানায় বিভিন্ন সাহায্য সংস্থা।
বিশ্বের ১৬০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চল এই চুক্তির স্বাক্ষর করলেও যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া এখনও এতে যোগ দেয়নি। ইউক্রেনীয় পার্লামেন্ট সদস্য রোমান কস্তেঙ্কো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেন, যুদ্ধের বাস্তবতায় এই পদক্ষেপ আগেই নেওয়া দরকার ছিল। রাশিয়া আমাদের সেনা ও বেসামরিক মানুষের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে মাইন ব্যবহার করছে। যখন শত্রু কোনো নিয়ম মানে না, তখন আমাদের পক্ষে এটা ছাড়া উপায় থাকে না।
সূত্র: এএফপি
এসজেড