ইউরোপীয় নেতারা ইউক্রেন ইস্যুতে বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে অনলাইনে আলোচনা করবেন। শুক্রবার আলাস্কায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলোচনাকালে ট্রাম্প ইউক্রেনের স্বার্থের প্রতি সম্মান দেখাতে পুতিনকে রাজি করাবেন বলে ইউরোপীয় নেতৃবৃন্দ আশা করছেন।
বার্লিন থেকে এএফপি জানিয়েছে, জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মের্ৎস ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির পাশাপাশি ফরাসি, ব্রিটিশ ও অন্যান্য ইউরোপীয় নেতা এবং ইইউ ও ন্যাটোর প্রধানদের বিকেলে একটি ভিডিও কনফারেন্সে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এরপর তারা দ্বিতীয় দফায় সম্মেলন আহ্বানে ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গেও কথা বলবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
শুক্রবার ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। রাশিয়া তিন বছর আগে ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় হামলা শুরু করার পর এটি তাদের প্রথম বৈঠক। এতে জেলেনস্কিকে ছাড়াই আলোচনা এগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর ফলে এই বৈঠকে কিয়েভকে ভূমি সংক্রান্ত বেদনাদায়ক ছাড় দিতে বাধ্য করা হতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
মঙ্গলবার ইইউ নেতারা ইউক্রেনের ‘নিজস্ব ভাগ্য বেছে নেওয়ার অন্তর্নিহিত অধিকারের’ ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সীমানা জোর করে পরিবর্তন করা যাবে না।’ মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় জেলেনস্কি মস্কোর দাবি করা দনবাস অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহারের সম্ভাবনা নাকচ করে দেন।
মের্ৎসর কার্যালয় জানিয়েছে, সম্মেলন আহ্বানে ‘রাশিয়ার ওপর অধিকতর চাপ প্রয়োগের আরও বিকল্প’ এবং ‘সম্ভাব্য শান্তি আলোচনার প্রস্তুতি এবং আঞ্চলিক দাবি ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিষয়গুলো’ নিয়ে আলোচনা করা হবে। সোমবার বার্লিন জানিয়েছে, আলোচনায় ‘ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, ইতালি, পোল্যান্ড, ইউক্রেনের নেতারা, ইউরোপীয় কমিশন ও কাউন্সিলের প্রধানরা, ন্যাটোর মহাসচিব, পাশাপাশি মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং তার ডেপুটি’ উপস্থিত থাকবেন।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং মের্ৎস এরপর তথাকথিত কোয়ালিশন অফ দ্য উইলিং অফ ইউক্রেনের সামরিক সমর্থকদের সঙ্গে এক দফা আলোচনা করার জন্যও প্রস্তুত রয়েছে। ট্রাম্প সোমবার আলাস্কায় সাফল্যের সম্ভাবনাকে নাকচ করে দিয়েছেন। তবে তিনি পুতিনের সঙ্গে ‘গঠনমূলক আলোচনা’ হওয়ার আশা প্রকাশ করছেন। ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে বলেন, ‘এটি সত্যিই কিছুটা অনুভূতিপ্রবণ বৈঠক।’ তিনি আরো বলেন, ‘কিছু বিনিময় হবে, ভূমিতে কিছু পরিবর্তন হবে।’
শান্তি ও মীমাংসার পূর্বশর্ত হিসেবে রাশিয়া কিয়েভকে মস্কোর দাবি করা বেশ ক’টি অঞ্চল থেকে তার বাহিনী প্রত্যাহার, একটি নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ’র সামরিক সহায়তা ত্যাগ করা এবং ন্যাটোতে যোগদান থেকে বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। তবে ইউক্রেন বলেছে, তারা কখনই তার সার্বভৌম ভূখণ্ডের ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণকে স্বীকৃতি দেবে না। তবে তারা স্বীকার করেছে, রাশিয়ার দখলকৃত জমি যুদ্ধের মাধ্যমে নয়, কূটনীতির মাধ্যমে ফেরত নিতে হবে।
ইউক্রেন মঙ্গলবার বলেছে, দেশটির পূর্বে ফ্রন্ট লাইনের একটি সংকীর্ণ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ অংশে তারা রাশিয়ান বাহিনীর সঙ্গে তারা ‘কঠিন’ যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। মস্কোর দ্রুত অগ্রগতির পর উভয় পক্ষের মধ্যে এ সংঘাত শুরু হয়। জেলেনস্কি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, রাশিয়ান সেনাবাহিনী যুদ্ধ শেষ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে না। বিপরীতে তারা এমন সব পদক্ষেপ নিচ্ছে, যা নতুন আক্রমণাত্মক অভিযানের প্রস্তুতির ইঙ্গিত দেয়।’
সূত্র: এএফপি
এসজেড