ঢাকা | বঙ্গাব্দ

১ বছরে দেড় লাখ ফোনকল রেকর্ড করে ফাঁস করে আ. লীগ সরকার

২০০৮ সালে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ও মোবাইল অপারেটরদের অর্থায়নে ডিজিএফআই ভবনে ন্যাশনাল মনিটরিং সেন্টার (এনএমসি) গঠন করা হয়।
  • নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৫ আগস্ট, ২০২৫
১ বছরে দেড় লাখ ফোনকল রেকর্ড করে ফাঁস করে আ. লীগ সরকার ফাইল ছবি

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় মাত্র এক বছরে দেড় লাখ ফোনকল রেকর্ড করা হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কিংবা সরকারবিরোধী হিসেবে বিবেচিত ব্যক্তিদের স্পর্শকাতর কল রেকর্ড করে সেগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ফাঁস করা হয়।


এ কাজের মূল ভূমিকা পালন করেছেন জাতীয় টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (বরখাস্ত) জিয়াউল আহসান—এ তথ্য ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে। বিষয়টি জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনকেও অবহিত করা হয়েছে, যা শুনে সংস্থাটি বিস্ময় প্রকাশ করেছে বলে জানা গেছে।


সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক নীতিনির্ধারক গণমাধ্যমকে জানান, ক্ষমতা রক্ষায় আইন ও নীতির তোয়াক্কা না করেই এসব ফোনকল রেকর্ড করা হয়। যারা সরকারের বিরোধিতা করেছেন বা ভিন্নমত পোষণ করেছেন, তাদের ফোনকল নিয়মিত রেকর্ড করত একটি বিশেষ টিম, যা ২৪ ঘণ্টা কাজ করেছে। তার দাবি, যদি জরিপ করা হয়, তবে এটি বিশ্ব রেকর্ড হতে পারে—অন্য কোনো দেশে সরকারবিরোধীদের এভাবে নজরদারির প্রমাণ মিলেছে কি না সন্দেহ আছে।


জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাদের ব্যক্তিগত ফোনালাপ ফাঁস করার অভিযোগ রয়েছে। এমনকি সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনের সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব, পুলিশের আইজিপি এবং কয়েকজন মন্ত্রীর ফোনালাপের সারসংক্ষেপ গণভবন থেকে উদ্ধার হয়।


অন্তর্বর্তী সরকারের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধের নির্দেশও দিয়েছিলেন জিয়াউল আহসান। ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই রাত থেকে মোবাইল ইন্টারনেট এবং ১৮ জুলাই রাত থেকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়। টানা পাঁচ দিন সব ধরনের ইন্টারনেট, ১০ দিন মোবাইল ইন্টারনেট এবং ১৩ দিন ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ ছিল। তার বিরুদ্ধে গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডেরও অভিযোগ রয়েছে।


বর্তমানে কয়েকটি মামলায় আটক জিয়াউল আহসান ২০২২ সাল থেকে এনটিএমসির মহাপরিচালক ছিলেন। সূত্র জানায়, যদিও এনটিএমসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে, প্রকৃতপক্ষে এটি পরিচালনা করত একটি গোয়েন্দা সংস্থা। এখন চেষ্টা চলছে সংস্থাটিকে পুরোপুরি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে এনে রাজনৈতিক হাতিয়ার না বানিয়ে রাষ্ট্রের স্বার্থে ব্যবহারের।


এদিকে নজরদারি যন্ত্রপাতি ক্রয় ও ব্যবহারের তদন্তে কমিটি গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। কমিটির প্রধান হিসেবে রয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও আইসিটিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, যন্ত্রপাতি কেনা ও ব্যবহারে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। কারও মতে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার, আবার কারও মতে ২০০ মিলিয়ন ডলারে এসব সরঞ্জাম কেনা হয়, যার একটি অংশ ইসরায়েল থেকেও আনা হয়েছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে।


২০০৮ সালে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ও মোবাইল অপারেটরদের অর্থায়নে ডিজিএফআই ভবনে ন্যাশনাল মনিটরিং সেন্টার (এনএমসি) গঠন করা হয়। পরে ২০১৩ সালের ৩১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী অনুমোদনক্রমে এর নাম পরিবর্তন করে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) রাখা হয়, যা ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বাধীন সংস্থা হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে।


thebgbd.com/NIT