এশিয়ায় হাঁস-মুরগির মাংসের চাহিদা ব্যাপক। এছাড়া ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও উত্তর আমেরিকায়ও হাঁস ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশেও হাঁসের মাংস খাওয়ার প্রচলন রয়েছে।
বিভিন্ন সময় রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকায় বন্ধু-বান্ধব কিংবা পরিবারের সদস্যদের হাঁস খেতে যেতে দেখা যায়। অনেক সময় বাসা-বাড়িতেও হাঁস খাওয়ার আয়োজন করা হয়।
তবে হাঁস খাওয়া নিয়ে অনেকের মনেই আবার প্রশ্ন রয়েছে। কারও মতে, হাঁস খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। আবার সুস্বাদু হওয়ায় অনেকেই এই মাংস খাওয়ার পক্ষে নানা যুক্তি দেখিয়ে থাকেন।
স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরামর্শ প্রদানকারী প্লাটফর্ম ওয়েব এমডির প্রতিবেদন অনুযায়ী হাঁসের মাংস খাওয়ার উপকারিতা ও ক্ষতিকর দিকগুলো জেনে নেয়া যাক-
হাঁস ও রাজহাঁস:
উভয়ই অ্যানাটিডি নামে পরিচিত জলচর পাখি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। হাঁস ও রাজহাঁস মূলত আকার ও ওজনে ভিন্ন হয়ে থাকে। রাজহাঁস আকারে অনেক বড়। সাধারণ হাঁসের ঘাড়ের তুলনায় রাজহাঁসের গলা বেশ লম্বা ও সুন্দর। সাধারণ হাঁসের ওজন এক থেকে আড়াই-তিন কেজি হয়, আর রাজহাঁস এর দ্বিগুণ হয়ে থাকে।
হাঁসের জাত:
নানা ধরনের গৃহপালিত হাঁস রয়েছে। তবে মাংসের জন্য যেসব সাধারণ জাতের হাঁস খাওয়া হয়, তার মধ্যে রয়েছে- মুলার্ড হাঁস, কাকি ক্যাম্পবেলস, মুসকোভি হাঁস, ভারতীয় রানার ও পেকিন হাঁস।
খাওয়ার যোগ্য:
হাঁসের মাংস রান্না করে বা শুকিয়ে শুঁটকি করে সংরক্ষণের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে খাওয়া হয়। প্রায় সময়ই এর মাংস চর্বিযুক্ত হয়। তবে দোকান থেকে কেনা হাঁসে মুরগির তুলনায় চর্বির পরিমাণ কম থাকে।
টুকরো মাংস:
হাঁসের মাংসের জনপ্রিয় অংশ হচ্ছে বুকের মাংস ও পা। হাঁস সাধারণত আর্দ্র ও কিছুটা গাঢ় হিসেবে পরিচিত। এর বুকের মাংস হালকা এবং উরু ও পায়ের মাংস তুলনামূলক হালকা স্বাদের হয়। এছাড়া হাঁসের পেশী, লিভার ও হার্টও খেতে পারেন।
হাঁসের মাংসের পুষ্টিগুণ:
প্রোটিন:
হাঁস-মুরগির মাংস হচ্ছে প্রোটিনের জন্য চমৎকার উৎস। প্রায় ৭৫ গ্রাম রান্না করা হাঁসের মাংসে ১৭ দশমিক ৬ গ্রাম প্রোটিন থাকে, যা দৈনিক প্রোটিনের (৫০ গ্রাম) প্রায় ৩৫ শতাংশ। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ। যা আপনার ত্বক, পেশী ও রক্ত ভালো রাখতে ভূমিকা পালন করে।
বি ভিটামিন:
হাঁসের মাংসে ভিটামিন বি রয়েছে। প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন বি৩ থাকে, যাকে নিয়াসিনও বলা হয়। ভিটামিন বি শরীরের অনেক কাজ করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, স্নায়ুতন্ত্র ও পেশীতন্ত্র ও হরমোন উৎপাদনে সহায়তা করে।
ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিড:
হাঁসের মাংস শর্ট-চেইন ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের দারুণ উৎস। একইসঙ্গে ওমেগা-৬ ফ্যাটের উৎস। গবেষণায় দেখা গেছে, শর্ট-চেইন ওমেগা-৩ দীর্ঘ-চেইন ওমেগা-৩-এ রূপান্তর হয়। দীর্ঘ-চেইন ওমেগা-৩ বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার, হৃদরোগ, মানসিক অসুস্থতা, সোরিয়াসিস ও হাঁপানিসহ দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
সেলেনিয়াম:
সেলেনিয়ামের জন্যও হাঁস উৎস হিসেবে কাজ করে। সেলেনিয়াম গুরুত্বপূর্ণ খনিজ। এটি দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের লক্ষণ রোধে সহায়তা করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
হাঁসের মাংসের উপকারিতা:
হাঁসের চর্বিযুক্ত মাংসের চর্বি মাখন ও অন্যান্য অনেক প্রাণীজ পণ্যের তুলনায় মনোআনস্যাচুরেটেড ও পলিঅ্যানস্যাচুরেটেড ফ্যাটে সমৃদ্ধ। উভয়ই স্বাস্থ্যকর ফ্যাট। এর কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে।
কোলেস্টেরল কমানো:
হাঁসের মাংসে থাকা মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। ভালো এইচডিএল কোলেস্টেরলের কাঙ্ক্ষিত মাত্রা বজায় রাখতে সহায়তা করে। আবার খারাপ এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতেও ভূমিকা পালন করে।
রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কম:
গবেষণা থেকে জানা গেছে, পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার যেমন- হাঁসের চর্বি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। আপনি যদি কার্বোহাইড্রেট থেকে ক্যালোরি গ্রহণের পরিবর্তে পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থেকে ক্যালোরি গ্রহণ করেন, তাহলে এটি অধিকতর সহায়ক।
শক্তি বৃদ্ধি:
হাঁসের মাংসে অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে, যা আপনার শরীরের কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়তা করে। শরীর শক্তি উৎপাদনের জন্য এই অ্যামিনো অ্যাসিড ব্যবহার করে থাকে।
হাঁসের মাংসের স্বাস্থ্যঝুঁকি:
লিনোলিক অ্যাসিডের উৎস হচ্ছে হাঁসের মাংস। এতে ক্যালোরি ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট উভয়ই অনেক বেশি পরিমাণে তাকে। যদি খুব বেশি পরিমাণে এই মাংস গ্রহণ করেন, তাহলে এটি একাধিক স্বাস্থ্য জটিলতার কারণ হতে পারে।
কোলেস্টেরল বৃদ্ধি:
হাঁসের চর্বিতে অন্যান্য প্রাণীজ পণ্যের মতো স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি নাও থাকতে পারে। এতে অলিভ ওয়েলের মতো বিকল্পের থেকেও বেশি কিছু উপাদান তাকে। স্যাচুরেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার সামগ্রিকভাবে কোলেস্টেরলের মাত্রা ব্যাপক বৃদ্ধি করতে পারে। ফলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। এ জন্য হাঁসের মাংস পরিমিত পরিমাণ খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।
ওজন বৃদ্ধি:
হাঁসের মাংস খাওয়ার আগে এর উচ্চ মাত্রার ক্যালোরির বিষয় মনে রাখতে হবে। এক টেবিল চামচ চর্বিযুক্ত হাঁসের মাংসে ১৩ ক্যালোরি থাকে। অনেক ক্ষেত্রে এর পরিমাণ বেশিও থাকে। এ কারণে তখন ক্যালোরি বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর ক্যালোরি বেশি গ্রহণ করলে স্বাভাবিকভাবেই ওজন বৃদ্ধি পায়। আপনি যদি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তাহলে উচ্চ-ক্যালোরিযুক্ত হাঁসের মাংস খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
thebgbd.com/NA