ঢাকা | বঙ্গাব্দ

মরণাপন্ন বিমা কোম্পানিতে সঞ্চয়ে ভোগান্তি আর হতাশা

নাজুক পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকারকে পাশে চায় বিমা কোম্পানি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ)।
  • নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৭ আগস্ট, ২০২৫
মরণাপন্ন বিমা কোম্পানিতে সঞ্চয়ে ভোগান্তি আর হতাশা ফাইল ছবি

জীবন বিমার ১৫টি কোম্পানি মরণাপন্ন। এ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (ইডরা) বলছে, মধ্যম ঝুঁকিতে রয়েছে আরও ১৫টি। স্থিতিশীল মাত্র ছয়টি প্রতিষ্ঠান। শুধু তাই নয়, গ্রাহকের পাওনা টাকা পরিশোধ না করার প্রবণতাও বাড়ছে। যদিও গুটি কয়েক কোম্পানির জন্য পুরো খাতকে ভুগতে হচ্ছে বলে দাবি তুলেছে তুলনামূলক ভালো অবস্থানে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো। এদিকে নাজুক পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকারকে পাশে চায় বিমা কোম্পানি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ)।


রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় একটি বিমা কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে ঢুকতেই শোনা যায় একজন গ্রাহকের ক্ষোভ। সময় সংবাদের ক্যামেরা দেখে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের শক্ত করে ধরেন। বিমা দাবির টাকার জন্য মানুষ ঘুরে ঘুরে হয়রান হচ্ছে, তবু টাকা পাচ্ছে না।

 

প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্টের কক্ষে ঢুকতেই দেখা যায়, ২০২১ মেয়াদ শেষ হওয়া একটি বিমার টাকার জন্য আরও একজন গ্রাহক এখনও ঘুরছেন। তিনি বলেন, ২০২১ সালে মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবে টাকার জন্য এখনও ঘুরতে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ জানায়, বিপর্যস্ত হওয়ায় নতুন করে তেমন কোনো পলিসিও নেয়া হচ্ছে না।

 

 

সেখান থেকে বের হতেই দেখা মেলে আরও কয়েকজন গ্রাহকের। তারা জানান, বিমা ম্যাচিউর হওয়ার পর ৪-৭ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানের পিছনে পিছনে ঘুরেও টাকা পাননি। তাই তারা পরিচিতজনদের বিমা করাতে অনিচ্ছুক।

 

মূলত জীবন বাঁচাতে বা জীবনকে সুন্দর করে সাজাতে আয়ের একটি অংশ সঞ্চয় করে সাধারণ মানুষ জীবন বিমা করে। তবে বিমার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর টাকা দাবি করেও বছর পর বছর ঘুরে না পাওয়ায় সাধারণ মানুষের সেই স্বপ্ন ভোগান্তিতে পরিণত হচ্ছে। ফলে গ্রাহকরা বিমা বিমুখ হয়ে পড়ছেন।

 

গ্রাহকের বিমা বিমুখ অবস্থানের কারণও মিলছে এ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইডরার তথ্যে। আস্থা কমে যাওয়ায় ২০০৪ সাল পর্যন্ত ১৪ বছরে জীবন বিমায় পলিসি কমেছে ৫৪ লাখ। ২০২৪ সালে ১২ হাজার ৯৬৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকার বিমা দাবির বিপরীতে কোম্পানিগুলো পরিশোধ করেছে ৮ হাজার ৫৯০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।

 

অর্থাৎ দাবি করা প্রায় ৩৪ শতাংশ টাকা গ্রাহক পাননি। চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিকে ৬ হাজার ৩৭৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকার দাবি করা হলে প্রায় ৬৩ শতাংশ টাকা গ্রাহককে দেয়া যায়নি। তবে একই সময়ে, কিছু কোম্পানি তাদের বিমা দাবির পুরো অর্থ পরিশোধ করেছে; এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েও হয়েছে দ্বিগুণ।

 

গুটিকয়েক মরণাপন্ন জীবন বিমা কোম্পানির জন্য পুরো খাতকে মাশুল গুনতে হচ্ছে, এমন অভিযোগ তুলেছে তুলনামূলক ভালো অবস্থায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো। এর সঙ্গে নেতিবাচক খবরের চাপের কারণে খাতের ভালো উদ্যোগও চাপা পড়ে যাচ্ছে।

 

জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম নুরুজ্জামান বলেন, দুর্বল প্রতিষ্ঠান যেমন আছে, তেমনি ভালো প্রতিষ্ঠানও আছে। দেশে এমন প্রতিষ্ঠানও রয়েছে, যারা একদিনেই ক্লেইম স্যাটেলমেন্ট করছে।

 

বিমা খাতের ক্ষতির কারণ হিসেবে যাদের দায়ী করা হচ্ছে, তাদের শাস্তি দেয়া ও গ্রাহক সুরক্ষায় সরকারকে এগিয়ে আসার তাগিদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটির সভাপতি সাঈদ আহমেদ বলেন, যারা প্রতারণা করছে, তাদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি দুর্বল ব্যাংকগুলোকে যেমন অর্থ সাহায্য দেয়া হয়, তেমনি দুর্বল বিমা কোম্পানিগুলোকেও লোন দেয়া যেতে পারে। যাতে তারা পুনরায় স্বাভাবিকভাবে কার্যক্রম চালাতে পারে এবং গ্রাহকরাও তাদের অর্থ ফেরত পেতে পারেন।

 

ইডরা জানিয়েছে, দুর্বল কোম্পানিগুলিতে চলমান বিশেষ অডিট শেষ হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র সাইফুন্নাহার সুমি বলেন, জীবন বিমার মোট ১৫টি কোম্পানি উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া ১৫টি কোম্পানি মধ্যম ঝুঁকিতে আছে। দুর্বল কোম্পানিগুলিতে বিশেষ অডিটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এসব প্রতিষ্ঠানের ক্লেইম স্যাটেলমেন্টের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

উল্লেখ্য, দেশে মোট ৩৬টি জীবন বিমা কোম্পানির মধ্যে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে ১৫টি প্রতিষ্ঠান।


thebgbd.com/NIT